নিজস্ব প্রতিবেদক ::
চট্টগ্রামের ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনায় সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৪৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আহত চার শতাধিক মানুষ। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী রয়েছেন ৬ জন। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। দগ্ধ ও আহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগে।
প্রথমদিকে আগুনের ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝে উঠতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ও ডিপোর কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাছ থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলেন। ডিপোর কর্মীদের কেউ কেউ আগুনের দৃশ্য ভিডিও করছিলেন। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলে তাদের অনেকেই আগুনে তলিয়ে যান।
দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন। এখনো সেখানে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরিত হচ্ছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএম কনটেইনার ডিপোতে দেখা গেছে, আগুন নেভানোর কাজ করছেন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনীর মোট ২৫টি ইউনিটের কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বলছেন, কনটেইনারে রাসায়নিকের পরিচয় এখনো অজানা, নেভানো যাচ্ছে না আগুন। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে মালিকপক্ষ কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা এক ফায়ার ফাইটার বলেন, শনিবার রাত থেকে টানা কাজ করছি। কোনোভাবেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে পাইপ নিয়ে কনটেইনারের কাছে গিয়ে আমরা পানি ছিটানোর চেষ্টা করেছিলাম। তবে কাছ থেকে পানি দিতে গেলে বিস্ফোরণে ফায়ার ফাইটাররাও হতাহত হচ্ছেন। সে জন্য নিরাপদ দূরত্বে থেকে কাজ করছি। আমাদের কয়েকজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ডিপোর মালিকপক্ষকে পাওয়া যাচ্ছে না। জানা যাচ্ছে না কোন কনটেইনারে কী রাসায়নিক আছে।
আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে অনেককে ওয়ার্ড ছাড়াও হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নগরীর অন্যান্য হাসপাতাল এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালেও (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিশ্চিত করেছে, চট্টগ্রামের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ সময় বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোয় কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানিয়েছেন,ডিপোতে এ সময় প্রায় ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল। সেখানে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। শনিবার দিনগত রাতে বাতাসের কারণে আগুন বাড়তে থাকে। ডিপো এলাকায় রয়েছে পানি স্বল্পতা ও দেখা দিয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ারও নির্দেশনা দেন।
তাছাড়াও প্রধানমন্ত্রী দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে সরকারের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।