বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : মোহাম্মদ নুর খান


গত ২৩ জুন ছিল দেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এ দিনে ঢাকার রোজ গার্ডেনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি ও শামসুল হক সাহেবকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমান কারান্তরীণ থেকেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ থেকে এ পর্যন্ত অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সৃষ্টির স্বাক্ষর হয়ে এ দলটি এদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে দলটির নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরো নেতৃত্বে থাকে দলটি। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো। ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে দেশে ফিরলেন। নেমে গড়লেন দেশ গড়ার কাজে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালীর সকল অর্জন, চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাসকে পদদলিত করা হলো সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে। পথ হারিয়ে ফেললো বাংলাদেশ। লক্ষ্যচ্যুত হলো পুরো জাতি। আওয়ামী লীগ হয়ে পড়লো নেতৃত্বহীন। ভাগ্যিস শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা সেদিন বিদেশে থাকায় দুজনেই প্রাণে বেঁচে যান। ৭৫ এর পর শেখ হাসিনা দেশে আসতে সময় লাগে পুরো ৬টি বছর। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন। শুরু হলো বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জনগণ অমানিশার ঘোর কাটিয়ে আলোর দেখা পেতে লাগল। ৮১ থেকে ৯৬ সামরিক শাসনের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, বি.এন.পির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সর্বোপুরি ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পুরো দেশ জুড়ে জেলায় জেলায় কখনও বুকের তাজা রক্তে পীচঢালা রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছে, কোন কোন নেতা কর্মী এসব আন্দোলনে আপন প্রাণ বিসর্জন দিয়ে শ্যামল মাটির বুকে নিজের শেষ ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে। এ সময়ে কোন না কোন দিন আকাশে বাতাসে আউড়ে বেড়াত জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা, স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক, খালেদার দুঃশাসন মানিনা মানবনা এসব স্লোগান। ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের দুয়ার উন্মুক্ত হবার বছর। এ বছরের নির্বাচনে পোর খাওয়া এ দলটি সরকার গঠন করে। দেশের চিত্র পালটে যেতে শুরু করে। শেখ হাসিনার সরকার এ সময় বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের সমস্যা পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়। পাহাড়ি জনপদে শান্তি আসে। এ পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। এ সময়েই শেখ হাসিনা চালু করলেন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার ন্যায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচীসমূহ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে দেশব্যাপী সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভুতপূর্ব উন্নয়ন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, নুইয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার অভুতপূর্ব সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে। আবার ২০০১ সালে ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের যাঁতাকলে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করা হলো। এগিয়ে যাওয়ার এ দেশ আবার পিছিয়ে পড়তে শুরু কর। দেশজুড়ে শুরু হয় হত্যা, খুন, গুম রাহাজানি চুরি ডাকাতিসহ নানা অপকর্ম । দিনে দুপুরে মানুষ হত্যা, ডাকাতি, লুটতরাজের সংবাদে পরিপূর্ণ থাকতো দৈনিক পত্রিকাগুলো। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে সামরিক সমর্থনপুষ্ট ড. ফখরুদ্দিনের সরকার ২ বছর দেশ পরিচালনা করে। এ সময়ও শেখ হাসিনা ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অনেক জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। অবশেষে ২০০৮ এ অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় নির্বাচন। আওয়ামী লীগ এবার দুই তৃতীয়াংশেরও অধিক সংখ্যক আসনে জয়লাভ করে। শুরু হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের অভিযাত্রা। পরবর্তীতে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনেও জনগণের এ দলটি সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়। এসময় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের অভাবনীয় অর্জন বিশ^ব্যাপী প্রশংসিত হয়। লেজেগোবরে থাকা বিদ্যুৎ সেক্টরে আসে অভাবনীয় অর্জন। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম শতভাগ বিদ্যুতের আওতায়। বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে সকলে যখন পদ্মা সেতুকে না বললো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বললেন হ্যাঁ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ শেষের পথে। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক ৬ষ্ঠাংশ মানুষ আজ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায়। জানুয়ারির ১ তারিখে স্কুল মাদ্রাসা পডুয়া শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পাঠ্যপস্তক পাচ্ছে। প্রিয় স্বদেশ আজ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। আমাদের মাথা পিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯০৯ মার্কিন ডলার এবং বেড়েছে গড় আয়ু। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারবো ইনশাআল্লাহ। ১৯৮১ থেকে এ পর্যন্ত এ সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় জন-নেত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন সময় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কোন কোন নেতাকর্মী দলের এ দুঃসময়ে নিজেদের আড়াল করে রেখেছিলেন দল ও নেত্রী থেকে। আবার অনেক নেতাকর্মী তাদের জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছেন দল এবং নেত্রীর জন্য।

 

 

 

এরা দল ও শেখ হাসিনার প্রশ্নে কখনও আপোষ করেননি। কি জেল-জুলুম-হুলিয়া, কি এমপি-মন্ত্রিত্বের লোভ, কি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ কোন আহবানেই টলেননি তারা। এমনই একজন আমার জীবনে দেখা সেরা মানুষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মুজিব বর্ষে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১ বছর পূর্তিতে নির্লোভ, নিরহংকার, পরিচ্ছন্ন ইমেজের ও মানবিক রাজনৈতিক প্রচার বিমুখ এ মানুষটিকে নিয়ে সামান্য আলোকপাত করতে চাই এ লেখনীর মাধ্যমে। ১৯৬৬ সাল। মোশাররফ হোসেন তখন লাহোর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে ৬ দফার পক্ষে আয়োজন করা হলো বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ। এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেছিলেন মোশাররফ হোসেন। খনিজ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেই ফিরে আসলেন আপন ভূমিতে। আলালের ঘরের দুলাল হয়েও দেশে এসে নেমে পড়েন সমাজ সেবায়। যুক্ত হন রাজনীতিতে চট্টল শার্দুল এম.এ. আজিজের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ১৯৭০ এর নির্বাচনে মনোনয়ন লাভ করেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে এমপি নির্বাচিত হন। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান তিনি। তার পিতা ছৈয়দুর রহমানও ছিলেন তৎকালীন স্বতন্ত্র এমপিএ। সে থেকেই এ পর্যন্ত রাজনীতিতে নিজেকে অবিচল রেখেছেন তিনি। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম গ্রহণ করলেও দেশের টানে একজন এমপিএ হয়েও ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ২৫ মার্চ শুভপুর ব্রিজে অগ্নিসংযোগ করে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে রওনা হওয়া পাকিস্তানী সৈন্যবাহী ২৬টি সাঁজোয়াযানকে কিছুদিনের জন্য প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের এ বুদ্ধিমত্তার জন্য সেদিন চট্টগ্রাম শহর মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসে প্রতিরোধ সৃষ্টি, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে এম.এ. হান্নান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণা কার্যক্রমসহ সকল কিছুতেই তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। এক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের জন্য চলে যান ভারতে। ভারতে বিহারের পরিত্যক্ত চাকলাদা বিমান বন্দরে তিনি সিইনসি স্পেশাল ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ক্যাম্পে বসে একদিন ভাবলেন পাকিস্তানী সৈন্যরা ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে জ্বালানী তেল সংগ্রহ করে। তিনি ভাবলেন যদি ইস্টার্ন রিফাইনারি ধ্বংস করা যায় তাহলে পাকিস্তানী সৈন্যরা আর জ্বালানী তেল সংগ্রহ করতে পারবে না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সিদ্ধান্ত নিলেন ইষ্টার্ন রিফাইনারি উড়িয়ে দেবেন। এ কাজটির জন্য প্রয়োজন ৬.৫ ফুট দীর্ঘ জঈখ এঁহ । পুরো অপারেশনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও আত্মঘাতীমূলক। সেক্টর কমান্ডার ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ক্যাম্পে কয়েকজনকে ডেকে এ অপারেশনের দায়িত্ব দিতে চাইলেন। কিন্তু আত্মঘাতীমূলক হওয়ায় কেউ এ অপারেশনের দায়িত্ব নিতে চাননি। অবশেষে কয়েকজন সাথীদের নিয়ে মোশাররফ হোসেন নিজেই ৬.৫ ফুট দীর্ঘ জঈখ এঁহ নিয়ে ক্যাম্প থেকে রওনা হন চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নানা কৌশলে কাজির দেউড়ির নির্দিষ্ট শেল্টারে এসে তারা অবস্থান নেন। সময়টি ছিল রমজান মাস। তারা ইস্টার্ন রিফাইনারি এলাকায় গিয়ে রেকি করেন। সিদ্ধান্ত হয় নদীর ওপার আনোয়ারা থেকে গোলা বর্ষণ করবেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তাঁর সাথীদের নিয়ে কাজীর দেউড়ির সেল্টারে বসে আক্রমণের ছক করছিলেন। এমন সময় শুরু হলো শেল্টার লক্ষ্য করে পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকারদের মুহূর্মুহূ গোলাবর্ষণ। মোশাররফ হোসেন ও তাঁর সাথীরাও শেল্টার থেকে প্রতিরোধ শুরু করলেন। এক পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন লক্ষ্য করলেন বদিউল আলম ছাড়া তাঁর অন্য সাথীরা সব নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। অবশেষে শেল্টারে বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে প্রথমে তিনি এবং পরে বদিউল আলম পাশের নালায় ঝাঁপ দেন এবং মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঝাউতলার মেথরদের সহযোগিতায় সেদিন তিনি নন্দন কাননের বাসায় ফিরতে সক্ষম হন। এ ঘটনার পর ভারতে ফেরার পথে রামগড়ে তিনি আবারো শত্রুদের প্রতিরোধের মুখে পড়েন। পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে হত্যা করার জন্য পাগল হয়ে উঠে। রামগড়ে শত্রুর সাথে অনেকক্ষণ যুদ্ধ করার পর এক সময় তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন এবং এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যান। সেদিনও তিনি শত্রুদের হাত থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। মীরসরাইয়ের অছি মিয়া ব্রিজ ও সীতাকুন্ডের ইস্টার্ন ক্যামিকেলের পাশের ব্রিজে সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানী সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ হয়েছিল। এক পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হেসেন ও তার সঙ্গীরা ব্রিজ দুটি উড়িয়ে দেন। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলো। ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস চত্বরে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও মেজর রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু তাকে রেলওয়ের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেন। তাকে বলতে শুনেছি স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম শহরে তিনি আর মেজর রফিক যাই বলতেন তাই হতো। এসময় তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু ধ্যানে যার দেশ তিনি সম্পদের মোহে পড়বেন কেন? ৭৩ সালেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ৭৯ সালে তিনি মনোনয়ন পাননি। কিন্তু মনোনয়ন না পেলেও তিনি প্রার্থী সৈয়দ ফজলুল হক বিএসসিকে নিজের গাড়ীটিও দিয়ে দেন এবং প্রার্থীর অধিকাংশ ব্যয় নির্বাহ করেন তিনি নিজে। আসলে নির্লোভ ও উদার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পক্ষেই এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন সম্ভব। ৮৬ সালে তিনি আবারো এমপি নির্বাচিত হন এবং বিরোধী দলীয় হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ৯৬ সালে এমপি নির্বাচিত হলে সরকারের দেড় বছরের মাথায় তাকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রাণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত করেন। এক বছর পরে তাকে এ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেয়া হয়। এসময় তিনি নির্দিষ্ট সময়ের তিন মাস আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাজ সম্পন্ন করে চট্টগ্রামবাসীকে একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর উপহার দিতে সক্ষম হন। এসময় তিনি ডিসি হিলের আধুনিকায়ন করেছিলেন। গৃহসংস্থান অধিদপ্তরকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে রূপান্তর করে এ প্রতিষ্ঠানকে একটি গণমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। সংস্থাটি বর্তমানে দেশের আবাসন সমস্যা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পরাজিত হলে দেশজুড়ে বিএনপি জামাতের তান্ডব শুরু হয়। মীরসরাইতেও প্রতিদিন খুন, চুরি, ডাকাতির ঘটনা ঘটতে থাকে। বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নিরীহ সুনীল সাধুর মরদেহ দেখতে গিয়ে তিনি অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ২০০৬ সালে ১ম দফার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে ড. ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে ২য় দফায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। এ সময় তিনি দুদকে হিসাব দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। সেদিন হিসাব দিতে গিয়ে ক্ষোভের সাথে তিনি দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘‘যারা রাজনীতি করতে গিয়ে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করেছেন তাদের জন্য কি পুরস্কার রয়েছে?‘’ কারণ তিনি রাজনীতি করতে গিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেশ কিছু পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করেছেন।। হ্যাঁ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন ঠিকি একের পর এক মিথ্যা মামলা আর জেল দিয়ে। সে সময়ের একদিনের ঘটনা। সরকারের কিছু লোকজন এসে পান্থপথের গ্যাসমিন অফিসের গ্যারেজ থেকে তার মার্সিডিজ বেঞ্চ গাড়ীটি নিয়ে যায়। দুইদিন গাড়ীটি রেখে কাগজপত্র পরীক্ষা করে আবার ফিরিয়ে দেয়। অথচ সে সময় বিভিন্ন নামী দামী গাড়ী রাস্তায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সকল মামলায় জামিন হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে জেলখানা থেকে মুক্ত হলেও প্রথম দফায় জেলগেটে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন নেতাকর্মীরা ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলেন। হতাশ হয়েছিলেন। অবশেষে ২য় দফায় তিনি জামিনের পর আদালত থেকে মুক্ত হন। ধীরে ধীরে দেশ নির্বাচন-মুখী হতে থাকে। ২০০৮ সালে নির্বাচন হলও। তিনি আবার এমপি হলেন । এ নির্বাচনে তার অনেক কাছের লোকও মন প্রাণ দিয়ে কাজ করেনি। এমনকি বিরোধিতাও করেছেন কয়েকজন। কারণ এদের কেও স্বপ্নে বিভোর ছিল যে মোশাররফ হোসেন জেলে থাকার সুবাদে এমপি হবেন। এবার এমপি হয়ে তিনি মহামায়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। এলো ২০১৪ সালের নির্বাচন। তিনি আবারো নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হলেন। তাকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেই স্থবিরপ্রায় মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি ফিরিয়ে আনেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করলেন। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধীনে বেশ কিছু ফ্ল্যাট প্রকল্প ও আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। চট্টগ্রামের পরিত্যক্ত জাম্বুরী মাঠকে তিনি পার্কে রূপ দেন। বায়েজীদ পার্কের ও বাস্তবায়ন করেন। তিনি এভাবে রাজউক, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধীনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে বেশ কিছু গৃহায়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। এর মধ্যে বেইলী রোডের সচিব কোয়ার্টার, মতিঝিল ও আজিমপুরে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ, উত্তরা ৮ নং সেক্টরে ৬৬৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। চট্টগ্রামে ৩৬ টি পরিত্যক্ত বাড়ী উদ্ধার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখানে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৯ এর নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার রাজনৈতিক জীবনে কাউকে নেতা বানাতে কার্পণ্য করেননি। ১৯৯২ সালে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সদ্য বিলুপ্ত বাকশাল হতে আসা মোহাম্মদ আব্দুস সালামকে তিনি সাধারণ সম্পাদক করেছিলেন। কয়েকদফা সাধারণ সম্পাদক থাকার পর এবার তিনি সভাপতি নির্বাচন হন। বাকশাল ফেরৎ গিয়াস উদ্দিনকে করেছিলেন প্রচার সম্পাদক। পরবর্তী কমিটিতে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন শেষে ইউনুছ গণি চৌধুরীকে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব বিষয়ক সম্পাদক করে পরবর্তীতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব সাদেক চৌধুরীকে রাঙ্গুনীয়া আসন হতে দু দু বার মনোনয়ন নিয়ে দিয়েছিলেন তখন তিনি ন্যাশনাল ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা মাত্র। উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন শাহকে সদস্য পরবর্তীতে প্রচার সম্পাদক করেছেন। বর্তমানে তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ পালিত তারি হাত ধরে প্রথমে বন ও পরিবেশ বিষয়ক স¤পাদক পরবর্তীতে সাংগঠনিক সম্পাদক হন। বর্তমানে তিনি যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক হয়েছেন। উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন উপজেলায় অনেক সময় সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বহুবার। ১৯৯১ সালের ফটিকছড়িতে শিবির নেতা নাছিরের হাত থেকে কোন রকমে প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৮১ সালে নিউমার্কেট চত্বরে আওয়ামী লীগের মিছিলের উপর বিএনপির সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দেয়, কোমরে ছুরিকাঘাত করে। তিনি যেমন কাউকে নেতা বানাতে কার্পণ্য করেননি তেমনি নেতৃত্ব দিতেও কিংবা দলের কার্যক্রম পরিচালনায় কখনো শৈতল্য দেখাননি। উত্তর চট্টগ্রামের ৭ উপজেলাসহ পুরো চট্টগ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছেন সবসময়। তাইতো তিনি চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের কাছে এখনও প্রিয় মোশাররফ ভাই। শুধু চট্টগ্রাম নয় কক্সবাজার ও পার্বত্য এলাকার নেতাকর্মীদের কাছেও সমান জনপ্রিয়। ২০১৪ সালে মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্তির পর সরকারী গুরু দায়িত্ব পালন করেও তিনি এমন কোন সপ্তাহ ছিলনা যে সপ্তাহে মীরসরাই সফর করেননি। নিজ উপজেলা মীরসরাইতে আওয়ামীলীগকে তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এখানকার ইউনিয়ন, ওয়ার্ড কমিটি সমূহও গঠন করা হয়েছে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। বিস্ময়ের ব্যাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েও জাতীয় নির্বাচনের আগে মীরসরাইতে তিনি ৪৮৫টি পাড়া বৈঠকের নেতৃত্ব দিয়েছেন। একটু অতীতের দিকে যাই। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট। তিনি নাখালপাড়া এমপি হোস্টেলে ছিলেন। সকালে অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ মারফত জানতে পারলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর। মুহূর্তেই মাথার উপর যেন বাজ পড়লো। কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কদিন পর খুনি মোস্তাক সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্য পটিয়ার নুরুল ইসলাম চৌধুরীর বাসায় গেলেন। তাকে অনুরোধ জানালেন মন্ত্রী সভা থেকে পদত্যাগ করে বঙ্গবন্ধুহত্যার প্রতিবাদ করার জন্য। কদিন পর চট্টগ্রামে এসে নন্দন কাননের বাসায় বঙ্গবন্ধুর জন্য মিলাদ পড়ালেন। কিছুদিন পরের ঘটনা। জিয়াউর রহমান তখন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তিনি জেলা পরিষদে একটি সভা ডাকলেন সাবেক এমপিদের নিয়ে। মোশাররফ হোসেন সেখানে গেলেন। আরো ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, আব্দুল্লাহ আল হারুন চৌধুরী সহ আরো অনেকে। মোশাররফ হেসেন বসলেন পিছনের সারিতে। সভা শুরু হলো। মোশাররফ হেসেনকে বক্তব্য দিতে বলা হলো। তিনি উঠে দাঁড়ালেন । প্রথমে তিনি মেজর জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। বললেন মেজর জিয়া আমি আর আপনি যুদ্ধকালীন সাথী। আমরা একসাথে যুদ্ধ করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আর আপনি এক সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম চট্টগ্রামে ১০ জন রাজাকারকে হত্যা করতে হবে। আমরা অস্ত্র দিয়ে ভেতরে লোকও পাঠিয়েছিলাম। এ ১০ জন থেকে সেদিন কয়েকজন বেঁচে গিয়েছিলেন। তাদের কয়েকজন আজ প্রথম সারিতে বসা। এর চেয়ে বড় কষ্টের, যন্ত্রণা আর কি হতে পারে? সেদিন তিনি বলেছিলেন আগে বঙ্গবন্ধুহত্যার বিচার হতে হবে। সবাই বলাবলি করতে লাগলেন মোশাররফ আজ শেষ । সোজা জেলখানায়, এ সময় পুরো হাউজ থর থর করছিলো। কিন্তু জিয়াউর রহমান তার স্টাফ অফিসারকে বলেছিলেন সভার রেজুলেশন বানাবা এমনভাবে যেন মোশাররফ হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এভাবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জেল, জুলুম কিংবা মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মাথা উঁচিয়ে সত্য বলেছেন নির্ভয়ে সবসময়। এখন রাজনীতিতে শিষ্টাচারের আকাল চলছে। কে কাকে ডিঙ্গিয়ে বড় হবে অনন্তর সেই প্রচেষ্টায় রত রয়েছেন আমাদের কিছু কিছু নেতা কর্মী। রাজনীতি এখন এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে পদ পদবী নিয়ে স্লোগান আর মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে আমাদের অনেকেই বড় নেতা বনে যান। রাজনীতি একপ্রকারে ইবাদত। এখানে কার্পণ্যতা থাকলে হিংসা থাকলে আপনি নেতা হতে পারবেন কিন্তু মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারবেন না। আপনাকে মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে। মানুষের সুখ দুঃখকে নিজের করে নিতে হবে। কিন্তু এখনকার রাজনীতি ভিন্নতর। এখন মানুষের কাছে যেতে হয় না। মানুষের জন্য করা লাগেনা। হিন্দুপৌরানিকে তলের কটি স্তর আছে। অতল, বিতল, তলাতল ও রসাতল । আমাদের কিছু কিছু রাজনীতিবিদদের ধ্যান ধারনা, চিন্তা চেতনা, আমিত্ব ও বড়ত্বের প্রতিযোগিতা দেখলে মনে হয় আমরা তলের শেষ স্তর রসাতলে আছি। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর ছোট্ট একটি ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। একদিন চট্টগ্রামের কিছু সংস্কৃতিকর্মী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাহেবের শরণাপন্ন হলেন। ডিসি হিলে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ দেওয়ার জন্য। মোশাররফ হোসেন জিজ্ঞাসা করলেন এখানে আর কে কে থাকবেন। তারা বললেন বিশেষ অতিথি হিসেবে আজাদী সম্পাদক প্রফেসর খালেদ সাহেব থাকবেন। তিনি বললেন হ্যাঁ আমি থাকবো। কিন্তু প্রধান অতিথি হিসেবে নয়। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রফেসর খালেদ সাহেব। আমি থাকবো বিশেষ অতিথি। তিনি আমার গুরুজন। নির্দিষ্ট দিনে এভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হলো। অনুষ্ঠান শেষে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নিজের গাড়ী করে প্রফেসর খালেদ সাহেবকে এনায়েত বাজার তাঁর গন্থব্যে নামিয়ে দিলেন। এমন উদার ও নির্লোভ না হলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। জিয়াউর রহমান এক পর্যায়ে বলেছিলেন মোশাররফ ভাই আপনি আমার সাথে আসেন এবং চট্টগ্রাম থেকে আপনি যাদেরকে নিতে চান তাদের নেন। কিন্তু না মোশাররফ হোসেন তাতেও টলেননি। ঠিক একইভাবে এরশাদের আহবানও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। লাহোর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র পরিষদের সভাপতি তারপর দেশে ফেরা, আওয়ামীলীগে যোগদান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক, সাধারণ সম্পাদক, কয়েক দফায় সভাপতি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম সদস্য, দুদুবার মন্ত্রী, ৭ বারের সংসদ সদস্য এ বর্ণাঢ্যময় রাজনৈতিক জীবনে তিনি অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেয়েছেন। আপনজন থেকে কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু অভিমান করেননি। বন্ধুর পথের পথিক হতে হয়েছে অনেকসময়। শুনেছি ওয়ান ১১ এর সময় তখনকার নীতি নির্ধারকরা তাকে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বলেছিলেন। তার পরিষ্কার জবাব ছিলো জেলে থাকবো তবুও নেত্রীকে অসম্মান করবোনা। এমন লোকগুলোর কারণেই প্রতিনিয়ত কঠিন পথ চলা পেরিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ এদেশের মানুষের নিরাপদ ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরষ্কারে ভূষিত হলেন। দেরীতে হলেও এ অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন। মুজিব বর্ষের এক্ষণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১ তম বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্থ, আপোষহীন, পরিচ্ছন্ন ইমেজের, কর্মীবান্ধব ও মানবিক রাজনীতির ধারক এ মানুষটিকে হৃদয়ের গহিন থেকে অভিবাদন জানাই, অভিবাদন অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন।

লেখক: মোহাম্মদ নুরখান, আওয়ামী লীগ নেতা, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা
সভাপতি, উত্তর মাদার্শা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।