সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা, গাফিলতি ও অসদাচরণের অভিযোগে জালালাবাদ থানার দুই উপ-পরিদর্শককে (এসআই) সাময়িক বরখাস্ত ও এক পরিদর্শককে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে।এরা হলেন পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আলমগীর হোসেন, এসআই আমিনুল ইসলাম ও অফিসার জাকির হোসেন।সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জানিয়ে যুগান্তরকে বলেন, শিশু রাজন হত্যকাণ্ডের পর তার পিতার সঙ্গে অসদাচরণ, মামলা নিতে অসহযোগিতা, দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগে এসআই আমিনুল ও এসআই জাকিরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার দিন জালালাবাদ থানার দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) আলমগীরকে ক্লোজড করা হয়েছে। তাকে সাসপেন্ড করার জন্য পুলিশ সদর দফতরে লিখিতভাবে সুপারিশ করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।রাজন হত্যার ঘটনায় মামলা নিতে গাফিলতি ও আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ ওঠার পর পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ১৪ জুলাই তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটির প্রধান সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকন উদ্দিন বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসানের কাছে ৪২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। এদিকে, এ তদন্ত প্রতিবেদনে যেসব পুলিশ সদস্যের নাম এসেছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুক্রবার দুপুরে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেটের শিশু রাজন হত্যায় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সে প্রতিবেদনে যেসব পুলিশ সদস্যদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ৪২৪ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনে ৫০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারাও জবানবন্দি দেন। তবে এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তা তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। ঘটনা ধামাচাপা দিতে রাজনৈতিক চাপ ছিল- এমন অভিযোগেরও সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।এদিকে, শুক্রবার বিকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুরঞ্জিত তালুকদার শিশু রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান আলমের বক্তব্য রেকর্ড করেন। এছাড়া গ্রামবাসীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন এডিসি (ডিবি) নরেশ চাকমা ও সিনিয়র এসি গোপাল চক্রবর্তী। সুরঞ্জিত তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, মামলার তদন্ত দ্রুত গতিতে চলছে। তবে কবে চার্জশিট দেয়া সম্ভব হবে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।রাজনের বাবা আজিজুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে তার পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। তিনি অভিযোগ করেন, দু’দিন আগে রাতের বেলা কালো পোশাকধারী লোক আমার বাড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করে। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি তারা র্যাব সদস্য নয়। বিষয়টি আমি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করে কয়েকজন। ওই নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিও করে তারা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে সারা দেশে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় মুহিত আলম, তার স্ত্রী লিপি বেগম, দুই প্রত্যক্ষদর্শী আজমত উল্লাহ ও ফিরোজ আলীসহ ১২ জনকে পুলিশ এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।