Monday, February 10Welcome khabarica24 Online

ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে ছয় জনের কারাদণ্ড

3_309502

মামলা দায়েরের ২৩ বছর পর ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির পৃথক দুই মামলায় ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিসিআই বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালকসহ ছয় কর্মকর্তাকে দশ বছর করে বিশ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ২ লাখ টাকা করে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ছয় মাস জেল খাটতে হবে। ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিশেষ জজ এম আতোয়ার রহমান সোমবার এই আদেশ দেন।দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বিসিআই বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক মো. শাহজাহান সরকার, শামসুল হক, নুরুন নাহার বেগম, উৎপাদন ব্যবস্থাপক এম তাজুল হক, মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপক আয়েশা খাতুন ও নির্বাহী পরিচালক এএসএম বদরুদ্দোজা। এদের মধ্যে শাহজাহান ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি পলাতক রয়েছেন। শাহজাহানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।এর আগে গত ২২ জুলাই ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ তৈরির অভিযোগে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক, ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেন একই আদালত। এই আদালতে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ তৈরির অভিযোগে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রিডফার্মার আরও একটি মামলা বিচারাধীন।মামলার নথি থেকে জানা গেছে, বিসিআই বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রস্তুতকৃত প্যারাসিটামল সিরাপে বিষাক্ত রাসায়নিক ইথিলিন গ্লাইকোল পাওয়া যায়। ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল মেশানো প্যারাসিটামল সেবনে শিশুদের কিডনি অকস্মাৎ বিকল হয়ে যায়। এর ফলে তাদের মৃত্যু হয়। ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল প্রধানত টেক্সটাইল মিলে কাপড় তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। প্যারাসিটামলে বিষাক্ত এই কেমিক্যাল মেশানোর কোনো সুযোগ নেই। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে ঢাকার শিশু হাসপাতালসহ মিডফোর্ড হাসপাতালে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ পান করে বহু শিশু মারা যায়।মামলার বাদী ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তৎকালীন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘১৯৯২ সালে দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঢাকার শেরে বাংলা শিশু হাসপাতালে প্যারাসিটামল সেবনে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরির প্রধান সহকারী বিশ্লেষক ডা. আবদুল মালেক এক রিপোর্ট দেন। তাতে বলা হয়, বিসিআই বাংলাদেশ লিমিটেডের তৈরি প্যারাসিটামল সিরাপ যার ব্যাচ নম্বর ৯২০৮০৪, তার নমুনায় ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল রয়েছে। প্যারাসিটামলটি মানবহির্ভূত।’জবানবন্দিতে আবুল খায়ের আরও বলেন, ‘ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। এটি একটি বিষাক্ত পদার্থ। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের তৈরিকৃত প্যারাসিটামল সিরাপে ডাই-ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করেছে।’ড্রাগ আদালতের পেশকার মো. রফিক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের আদালতে মামলা করেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তৎকালীন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের। মামলা দায়েরের পর বিসিআই বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক শাহজাহান সরকারসহ পাঁচ জন উচ্চ আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে মামলা করেন। উচ্চ আদালতের ক্রিমিনাল রিভিশন নম্বর ১২৭৯/১৯৯৪। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। ১৯৯৪ সালে উচ্চ আদালত বিসিআই লিমিটেডের পক্ষে স্থগিতাদেশ দেন। সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয় ২০১১ সালে। কিন্তু আমরা উচ্চ আদালতের আদেশ পেয়েছি ১৯৯২ সালের ৩ জানুয়ারি। এরপর মামলার বিচার কাজ আবার শুরু হয়।’রফিক জানান, বিসিআই লিমিটেডের তৈরি করা প্যারাসিটামলের নমুনা ব্যাচ নম্বর পৃথক হওয়ায় মামলা হয় দুটি। কিন্তু মামলার এজাহার, সাক্ষী, জবানবন্দি সবই এক। মামলা দুটির নম্বর হল ২/৯৩ এবং ৩/৯৩।জানা গেছে, বহুল আলোচিত এই মামলায় ১৯৯৪ সালের ২ আগস্ট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তখনকার ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের চৌধুরী ১৯৯২ সালের ১৮ নভেম্বর দুটি ধারায় বিসিআই বাংলাদেশের ছয়জনকে আসামি করে এ মামলা করেন।