সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

শেষ মহুর্তে মীরসরাইয়ে বাড়ছে কামারদের ব্যস্ততা

kamar-2-copy

এম.ইমাম হোসেন : আর মাত্র একদিন বাকী। তারপরও দম ফেলার অন্য নেই কামাদের।  উৎসব মুখর পরিবেশে সারা দেশে উৎযাপন করা হবে মুসলিম সম্প্রদায়ের বড় দুটি ধর্মীয় উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল আযহা। আর এই ঈদ মানে পশু জবাই করা। আর পশু জবাই ও আনুসাংগিক কাজের জন্য দা, ছুরি, ধামাসহ অন্যান্য উপকরণ বাধ্যতা মূলক হয়ে পড়ে। আর এই সকল যন্ত্রপাতি শান দেয়া, নতুন ভাবে তৈরী করার জন্য একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কামার। এদিকে আসন্ন ঈদুল আযহার জন্য পশু বিকিকিনির মহোৎসব শুরু হয়েছে। কোরবানীর পশুর হাটে সম্প্রতি চলছে পশু ক্রয় বিক্রয়ের প্রস্তুতি, পাশাপাশি দা, ছুরি, ধামা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হতেই দেখা যাচ্ছে গৃহস্তদের। কোরবানী দাতা পরিবারের সদস্যরা কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কসাইরা নিজেদের চাহিদা মতো দা, ছুরি, চাকু, ধামা, কুড়াল, বটি জোগাড় করবে সবাই ছুটছেন কামারদের কাছে শান দেওয়ার জন্য।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার তথা, ছোট-বড় সকল হাটের সর্বত্রই এখন কামারদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন তারা দা, ছুরি, চাকু, কুড়াল, কাটারি, বটিসহ ধারালো বিভিন্ন সামগ্রী। কেউবা অর্ডারকৃত আর কেউবা নিজের লোহা দিয়েই তৈরি করে পাইকারি দরে বিক্রি করছেন।
তবে এসব তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এখনো। পুরানো নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো সামগ্রী তৈরির কাজ। কামাররা জানায়, এ পেশায় অধিক পরিশ্রম। আর শ্রমনুযায়ী তারা এর যথাযথ মূল্য পান না। কারণ লোহার বাজার দর বেশি। পাশাপাশি খাদ্য দ্রব্যের মূল্যের সাথে ভারসাম্য রেখে যদি কামাররা তাদের লোহার ধারালো সামগ্রী তৈরি করত তাহলে এ পেশাজীবীরাও মূল্যায়ন পেতেন বলে তারা মনে করেন। জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে তারা এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন। সারাবছর পরিবারে ও কৃষি জমিতে ব্যবহারের প্রয়োজনে অনেকে এসে তা তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে কোরবানির পশুর জন্য বেশি প্রয়োজন মনে হওয়ায় সকলেই এখন ছুটছেন কামারদের কাছে। আর এতেই এই মাসে জমজমাট হয়ে উঠে কামার পাড়া।
নিজামপুর বাজারের কামার পল্লীর কামার মিহির কর্মকার বলেন, এবারের ঈদে চাহিদানুযায়ী দিন-রাতে ২০ থেকে ৩০টি কাজে গড়ে প্রতিদিন একেক জন কামার খরচ বাদে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করেন।
তিনি আরো জানান, একটি বড় দা ৫ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ ৭শ’ টাকা, ১ কেজি লোহার ১টি কুড়াল ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বড় ছোরা ওজন মতে ৩ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা, পশু কুড়াল ৩ থেকে ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে লোহা গ্রাহকের হলে সেেেত্র শুধু তৈরি ও শান বাবদ এসব সামগ্রীর প্রতিপিস ৫০ থেকে ১৫০ টাকা গ্রহণ করা হয়। কামারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদে যে বেচাকেনা হয় তা আর অন্য সময় হয় না। তাই ঈদের আগে এ পেশাজীবীদের সচ্ছল হওয়ার মোম সময়। এ কারণে অনেকে মজুদ করে ঈদকে ঘিরে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করছেন। তাই অনেকে জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়েও একটু সুখের আশায় কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে বিক্রি ততো বেশী হবে বলে জানান তারা। ঈদুল আযহার অন্যতম ওয়াজিব পশু জবাই করা। আর জবাই করার অন্যতম উপাদান এসব পণ্য। সারা বছর তৈরীকৃত এসব পণ্য যত বিক্রি হয়না তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদ মৌসুমে তাই সামান্য লাভে বিক্রি করছি। সব মিলে ভালোই আছেন মীরসরাই কামার শিল্পীরা।
আবু-তোরাব বাজারের সুনিল কর্মকার আরো বলেন, সারা বছর আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে। কিন্তু ঈদে অনেকেই পশু কোরবানির জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, চাকু কিনতে আসেন। আমরা লোহার এসব জিনিসের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বেশ কিছু জিনিস বানিয়ে রাখি। অনেকে আবার কোরবানির জন্য এসব ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি বাড়ি ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত কুড়াল, কাস্তে, কাঁচি, সাবল, টেঙ্গি কিনে নিয়ে যায়।
আরেক কামার নিহির কর্মকার বলেন, আগে অন্য হাটবাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে ৫০০-৭০০ টাকা রোজগার হতো। ঈদের আগে লোহার অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ১৫০০ টাকা আয় হয়। হাতে অতিরিক্ত কাজ থাকার কারণে নতুন কাজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, কামারিদের এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।