সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

একান্ত সাক্ষাৎকার :: প্রধান দু’টো দলের রাজনৈতিক নেতৃত্বই জাতিকে মুক্ত করতে – বিগ্রেডিয়ার ( অব:) শামস চৌধুরী


নিজস্ব প্রতিবেদক :: নিজের মমতাময়ী উজ্বল্য আর ভালবাসা দেয়ার যোগ্যতায় মীরসরাই উপজেলার সকলের মনে প্রিয় হয়ে উঠেছেন অনন্য ব্যক্তিত্বময় কর্ণেল শামস তথা বিগ্রেডিয়ার ( অব:) শামস। দেশ মাতৃকার সেবায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে ও সবার সাথে অত্যন্ত হাস্যোজ্বল ও বন্ধু বৎসল এই প্রাণবন্ত মানুষটি ইতিমধ্যে মীরসরাই উপজেলার আপাময় সাধারন মানুষের কাছে অনেক বেশী প্রিয় ও আস্থা এবং ভরসার মানুষ হয়ে উঠেছেন।
পুরো নাম মোঃ শামসুল আলম চৌধুরী । ১৯৬৬ সালের ০৩ আগস্ট চট্টগ্রামের জেলার মীরসরাই উপজেলার সম্ভ্রাস্ত আবু ভূঁইয়া বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। ধর্ম ভীরু মাতাপিতার প্রথম সন্তান শামস ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন ও ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া কোরে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। চাকুরীরত অবস্থায় দেশ-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ছাড়াও তিনি ১৯৯৫-৯৬ সালে বসনিয়া ও ক্রোয়েশিয়াতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে “মিলিটারি পর্যবেক্ষক” ও ২০০৫-০৬ সালে লাইবেরিয়াতে জাতিসংঘ মিলিটারি ফোর্স হেডকোয়ার্টারে “স্টাফ অফিসার” হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শামস লেঃ কর্নেল হিসেবে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এ রাঙামাটি জেলার ছোট হরিনা জোনে “জোন কমান্ডার” হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৯ সালের ০১ ফেব্রুয়ারীতে ছোট হরিনা হতে বাংলাদেশ রাইফেলসের সদর দপ্তর পিলখানাতে বদলি হন। ২০০৯ সালের ০৫ ফেব্রুয়ারী লেঃ কর্নেল শামসকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সে (এসএসএফ) বদলি করা হলেও ২৪ ফেব্রুয়ারী হতে অনুষ্ঠিতব্য বিডিআর সপ্তাহে বিভিন্নমুখী দায়িত্ত্ব পালনের জন্যে বিডিআর কর্তৃপক্ষ শামসকে বিডিআর সপ্তাহ পর্যন্ত রেখে দেন । কর্তৃপক্ষ ২৫ ফেব্রুয়ারী তারিখে বিডিআর হতে এসএসএফ এ যোগদানের তারিখ ধার্য্য করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানাতে বিডিআর বিদ্রোহের সময়ে শামস মহান আল্লাহতায়ালার অশেষ কৃপায় বিডিআরের ৫ জন সাহসী জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার (জেসিও) এর সহযোগিতায় অসংখ্য অলৌকিকতার মাধ্যমে প্রাণে বেঁচে যান।
শামস পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে এসএসএফ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এর পরিচালক এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে “মিনিস্টার” পদমর্যাদায় কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৯ সালের ০২ আগস্টে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে অবসরে গমন করেন।
বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত শামসের দু’টো বই (The Dream of My Life) ও (Remaking the Wealth of the Nations)  ছাড়াও “The Truth and Justice” নামে তৃতীয় বইটি লন্ডনের একটি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃক প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। শামস আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি’তে অবস্থিত বিশ্ব বিখ্যাত জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় হতে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি কনস্ট্রাকশন ও রফতানি ব্যবসাযের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকাতে কলাম লেখক হিসেবে দায়িত্ত্ব পালন করছেন।
শামস ক্যাপ্টেন থাকাকালীন সময়ে নাজনীন আখতারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নাজনীন শামস দম্পতির বড় ছেলে চৌধুরী শিহাব বিন শামস আমেরিকার ভার্জিনিয়া রাজ্যে একটি আইটি কোম্পানিতে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ও ছোট ছেলে চৌধুরী তালহা বিন শামস কানাডাতে মেডিকেল সায়েন্স-এ অধ্যয়নরত। শিহাব বিবাহিত ও তার স্ত্রী ফাবিহা বিনতে নাইম আমেরিকাতে একটি সরকারি সংস্থায় ডাটা এনালিস্ট হিসেবে কর্মরত।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই মহৎপ্রাণ উদার ও মানবপ্রিয় মানুষটিকে উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম -১ মীরসরাই আসন থেকে এমপি প্রার্থী হিসেবেই দেখতে চান। আর এই বিষয় নিয়ে খবরিকা তাঁর মুখোমুখি হলে তিনি যথাক্রমে বলেন
খবরিকা :: দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচন কেমন হবে বা কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
শামস চৌধুরী :: বাংলাদেশের প্রধান দু’টো দলের মধ্যে “আস্থার সংকট” এর কারণেই বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দিন থেকে চলে আসা দু’দলের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দুর্বল জায়গাগুলো মেরামত করতে না পারলে এ অবস্থা চলতে থাকবে। প্রধান দু’টো দলের রাজনৈতিক নেতৃত্বই পারে এ অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে। আর সে জন্যে প্রয়োজন উভয় দলের সদিচ্ছা, রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করা ও নিজেদের স্বার্থের উর্দ্ধে থেকে মানুষের কল্যানে কাজ করা। বাংলাদেশ একটি সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহনমূলক ও আন্তর্জাতিকমান সম্পন্ন করার বিষয়টি মাথায় রেখে উভয় দলেরই উচিত এক সাথে কাজ করা যাতে করে তৃণমূলের ভোটারগণ নিজেদের ভোটেই নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। নেতৃত্ব সৃষ্টির মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে, মেধাবী নেতৃত্ব রাজনীতিতে আসবে ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে যাবে।
খবরিকা :: বর্তমান সরকারের সামগ্রিক কর্মকান্ড এবং মীরসরাইয়ের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
শামস চৌধুরী :: সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বর্তমান সরকার প্রশংসনীয় সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সময়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৪৮৬ মার্কিন ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ২৮০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ঈর্ষণীয় এবং সারা বিশ্বে প্রশংসিত। বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০৩১ (উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ) ও ২০৪১ (উচ্চ আয়ের দেশ) অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও যুগোপযোগী পরিকল্পনা। তবুও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, টেকসই গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রবর্তন, ও আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার মত ক্ষেত্রগুলোতে উন্নয়নের অনেক সুযোগ রয়ে গেছে । মীরসরাই এ এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তিনটি: ১) বেকার যুবকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ২) শান্তির জনপদ মীরসরাইয়ে এক শ্রেণির যুবকদের দাপট ও প্রাধান্য শান্তি, শৃংখলা ও সামাজিক বন্ধনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে ৩) গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ কিছু এলাকা বাদে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। সংশ্লিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্ব সচেষ্ট হলে এ ধরণের সমস্যা থেকে মীরসরাইবাসী মুক্তি পেতে পারে।
খবরিকা : আগামী সংসদ নির্বাচনে আপনিও একজন আলোচিত এমপি মনোনয়নপ্রার্থী বলে জানি মীরসরাইবাসীর জন্য আপনার আগামীর কি কি পরিকল্পনা রয়েছে জানাবেন কি?
শামস চৌধুরী :: প্রথমতঃ এমপি না হয়েও মানুষের সেবা করা সম্ভব। আর আমাদের প্রাণ – মীরসরাই এর মানুষগুলোর চাওয়া পাওয়া খুবই সীমিত। খুব অল্পত্বেই খুশি সবাই। পৃথিবীতে যা বিরল। গ্রামীণ জনপদের অনগ্রসর একটি এলাকার সাধারণ পরিবারে জন্ম নিয়ে আমি সবসময়ই আমার মত পরিবারের মানুষগুলোকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি – সফলতাও পেয়েছি। এখন আমার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। কত মানুষের সাথে যোগাযোগ এখন! কেউ আসে চাকুরীর জন্যে, কেউ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যে, কেউ আসে বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার জন্যে, কেউ আসে হাসপাতালে আপন রুগীদের সহযোগিতা পাবার জন্যে। দুর্বল মানুষগুলো আসে আইনী সহায়তা পাবার জন্যে, কেউ আসে বিদেশে চাকুরী পাবার প্রত্যাশা নিয়ে ও সাধারণ পরিবারগুলোর ছাত্রছাত্রীরা আসে সফলতা অর্জন করার কৌশল জানতে ও শিখতে। প্রিয় মানুষগুলোর চাহিদা পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করছি তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সফলতার পাল্লাটা কমেই চলেছে। আমার মনে হয় সামগ্রিক এ সমস্যাগুলো দুর করতে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করা দরকার। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় নির্বাচন করি। সাধারণ মানুষের কল্যাণে তাদেরই সমর্থন নিয়ে সংসদে যাই। তাদের জন্যেই বাকি জীবনটুকু কাটিয়ে দিই। বাস্তবতা অন্যরকম। আমাদের মত আমজনতাদের পক্ষে কি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা বা এমপি হওয়া কি সম্ভব? সংসদ সদস্য হতে পারলে আমার প্রথম লক্ষ্য হবে দেশ-বিদেশে চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করে বেকার সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করা বেকারত্ব আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। অন্য অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিস্ময়গুলো হবেঃ ১) সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করে শান্তি শৃঙ্খলার উন্নয়ন ২) গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ৩) মীরসরাই এ দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও রফতানি করতে বিশেষায়িত স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা যাতে আমাদের যুবকেরা বিদেশে যেয়ে ভালো মানের চাকুরীর সুযোগ পায় অনেক বেশি উপার্জন করতে সক্ষম হয়। নান্দনিক মীরসরাই গঠনে বাকি কাজগুলো এমনিতেই চলবে, যাতে মীরসরাই পুরো দেশে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে।
সব মিলিয়ে খবরিকাকে দেয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে এটিই প্রতিয়মান হয় যে, কোন উচ্চাকাংখাতে নয় মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে মানবসেবাই তাঁর প্রধান লক্ষ। এমন উদার ও মহৎপ্রাণ দেশ ও জাতির কর্ণধার হোক এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। খবরিকার পক্ষ থেকে অনি:শ্বেষ ভালবাসা মানুষটির জন্য।