Saturday, February 8Welcome khabarica24 Online

কক্সবাজারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮

flood_90155

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে কক্সবাজারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কিছুটা কম থাকায় বিকালে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সন্ধ্যা থেকে আবারও বর্ষণ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।বন্যার কারণে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া শহরের কলাতলী অংশে দুইটি স্থান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে সমুদ্র তীরবর্তী মেরিন ড্রাইভে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেনাবাহিনী সড়ক যোগাযোগ পুনস্থাপনের চেষ্টা করছে।পাহাড়ি ঢল, বন্যা ও পাহাড় ধসে কক্সবাজার জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে উন্নীত হয়েছে। এর আগে শুক্রবার মারা যান ৮ জন। শনিবার আরো ১০ জনের লাশ উদ্ধার হয়। এ পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এখনো পানিবন্দী রয়েছেন জেলার ১০ লাখ মানুষ। পুরো কক্সবাজার যেন বন্যার পানিতে ভাসছে। বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় কক্সবাজারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল থেকে রাতে বৃষ্টিপাত কিছুটা কম থাকায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিকালে থেকে পুনরায় বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।  বৃষ্টিপাতের কারণে শনিবারও জেলা সদর, রামু, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, পেকুয়াসহ আট উপজেলার অন্তত ৫০টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ শ গ্রাম জলমগ্ন রয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে জীবন কাটাচ্ছে অন্তত ১০ লাখ মানুষ।এদিকে পাহাড়ি ঢল, বন্যা ও পাহাড় ধসে কক্সবাজার জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জন হয়েছে। এরমধ্যে শনিবার মারা গেছে ১০ জন। এদের মধ্যে রামুতে ৩ জন, টেকনাফে ২ জন, চকরিয়ায় ৩ জন, পেকুয়ায় ২ জন রয়েছে। নিহতদের মধ্যে গতকাল টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের মনতলি গ্রামে পাহাড় ধ্বসে মৃত্যু হয়েছে মা ও মেয়ের।নিহতরা হলেন উক্ত এলাকার আবুল মনজুরের স্ত্রী ছমুদা খাতুন (৬৫) ও মেয়ে শাহেনা আক্তার (১৬)। রামুর গর্জনিয়া ক্যাজর বিল এলাকায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ কামরুন্নাহার ও হুমাইরা  বেগম নামের দুই জনের লাশ গতকাল শনিবার সকালে বাঁকখালী চর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন। চকরিয়ায় বাড়ির পাশে বিলে জমে থাকা পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে প্রবল স্রোতে ভেসে  গেছে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ছগিরশাহকাটার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে শফিউল আলম।অপরদিকে, উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের প্রপার কাকারা এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে কাউছার রহিম (১৩) নামের এক কিশোর। কাউছার ওই এলাকার ফরহাদ রেজার ছেলে। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠার সময় বানের পানিতে ভেসে যায় আনোয়ার হোসেন ওরফে আনর আলী (৫৫) নামের এক বৃদ্ধ। প্রায় ১ ঘণ্টা পর বাড়ি থেকে অনতিদূরে একটি ঝোঁপজঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আনরআলী ইউনিয়নের রোস্তমআলী চৌধুরী পাড়ার মৃত আমির আলীর ছেলে।অন্যদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গতদের জন্য ১৪৫ মেট্রিক টন চাউল, নগদ ১১ লাখ টাকা ও নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারে ২০ হাজার করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। তাছাড়া ৮ উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। তিনি আরো জানান, শনিবার থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের পাশাপাশি দুর্গত এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, শনিবার সকাল ৬ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরআগে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২০২ মিলিমিটার, বৃহস্পতিবার সারা দিনে ২১০ মিলিমিটার এবং বুধবার ৪৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তিনি আশা করছেন, বৃষ্টিপাত কমে আসায় রবিবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।অপরদিকে বন্যার কারণে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া শহরের কলাতলী অংশে দু’টি স্থান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে সমুদ্র তীরবর্তী মেরিন ড্রাইভে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে উখিয়া-টেকনাফ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী সড়ক যোগাযোগ পুনস্থাপনের চেষ্টা করছে।

 

উৎস- বাংলাদেশ প্রতিদিন