চালকের আসনে শরীরটা বসে আছে। হাতটা রেডিও টেলিফোনের কাছে। যেন এখনই একটা ফোন করতে চায়।

পরিত্যক্ত একটি নৌকোর মধ্যে এ রকমই মমি হয়ে যাওয়া এক নাবিকের দেহ উদ্ধার হয়েছে ফিলিপিন্সে। নৌকোর মধ্যে পাওয়া ছবি-চিঠি ও অন্যান্য নথি থেকে মনে করা হচ্ছে, দেহটি নিখোঁজ জার্মান নাবিক মানফ্রেড ফ্রিৎজ বাজোরাট-এর।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ফিলিপিন্সের উপকূল থেকে প্রায় ৪০ মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরে মাছ ধরছিলেন ক্রিস্টোফার রিভাস নামে এক যুবক এবং তাঁর বন্ধুরা। হঠাৎই চোখে পড়ে কিছু দূরে আপনাআপনি ভেসে চলেছে একটি ভুতুড়ে নৌকো। পালটা ভাঙা। ৪০ ফুট লম্বা সাদা রঙের ইয়ট জাতীয় নৌকোটির গায়ে নাম লেখা ছিল ‘সায়ো’। রিভাস এবং তাঁর সঙ্গীরা নৌকোটির মধ্যে ঢুকে চমকে যান। রেডিও রুমে চেয়ারের উপরে বসে রয়েছে আস্ত একটি মমি!

নৌকোটিকে সঙ্গে নিয়ে পরের দিন ভূখণ্ডে ফিরে আসেন রিভাসরা। ফিলিপিন্সের বারোবো থানার পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে। পুলিশই তার পর ফেসবুকে ঘটনাটি লিখে ওই ইয়ট থেকে পাওয়া ছবিগুলো পোস্ট করে। নথি থেকে জার্মান নাবিক মানফ্রেডের নাম খুঁজে পাওয়ার কথাও তারাই জানায়। মানফ্রেডের পরিবার ফিলিপিন্সে আসছে।

৫৯ বছরের মানফ্রেড ঠিক কত দিন আগে, কী ভাবে মারা গিয়েছেন, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। নৌকোর মধ্যে টিনের খাবার যথেষ্ট পাওয়া গিয়েছে। ফলে খাবারের অভাব তাঁর হয়নি। নৌকোয় দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিল না। ময়নাতদন্তে মানফ্রেডের দেহে কোনও আক্রমণের চিহ্নও মেলেনি। চিকিৎসকদের একাংশ মমির বসার ভঙ্গি দেখে মনে করছেন, ওই ব্যক্তি সম্ভবত ফোন করতেই যাচ্ছিলেন। সেই মুহূর্তে আকস্মিক ভাবে তাঁর মৃত্যু হয়। আচমকা হৃদ্‌রোগের সম্ভাবনা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে জোরালো।

জার্মানিতে মানফ্রেডকে চিনতেন, জানতেন এমন নাবিকরা বলছেন, মানফ্রেড দক্ষ নাবিক। সম্ভবত তাঁর মৃত্যুর পরেই নৌকোর পাল ভেঙেছে। মৃত্যুর আগে নয়। এক বছর আগেও জন্মদিনে ফেসবুক মারফত যোগাযোগ হয়েছিল মানফ্রেডের সঙ্গে। তার পর আর কোনও খবর নেই। সেই হিসেবে গত এক বছরের মধ্যেই মানফ্রেড মারা গিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। নোনা হাওয়া, শুকনো আবহাওয়া আর উষ্ণ তাপমাত্রায় দেহটি পচেনি। একেবারে মমি হয়ে গিয়েছে।

জার্মানির রুড় অঞ্চলের বাসিন্দা মানফ্রেড সারা জীবনই সমুদ্রে ঘুরে কাটিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী ক্লাউডিয়াও নাবিক ছিলেন। মেয়ে নিনাও এখন নাবিকের কাজ করেন। ২০০৮ সালে মানফ্রেড এবং তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়। এর দু’বছর পর ক্যানসারে মারা যান ক্লাউডিয়া। নৌকোয় পাওয়া গিয়েছে প্রয়াত স্ত্রীকে লেখা মানফ্রেডের চিঠি। তাতে লেখা, ‘‘তিরিশ বছরেরও বেশি আমরা একই পথের পথিক ছিলাম। তার পর বাঁচার আকাঙ্খা শয়তানের শক্তির কাছে হেরে গেল। তুমি চলে গেলে। তোমার আত্মা শান্তি পাক।’’
এ বার ইতি মানফ্রেড।