মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

তৎপর হলে নাখোশ হয় অনেকে : কে রক্ষা করবে বন ?


নিজস্ব প্রতিনিধি :: বনবিভাগের অনুমতিপত্রে থাকে একরকম, আর বাস্তবে থাকে ভিন্নরকম। বৈধ অনুমতির কয়েকগুন বেশী কাঠ নিয়েই ট্রাক বোঝাই কাছ পাচার হচ্ছে হরহামেশা। আবার বনবিভাগেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তার সিন্ডিকেটই কেটে নিচ্ছে বন। কে রক্ষা করবে এই প্রকৃতি আর পৃথিবী। কখনো কেউ কেউ রক্ষা করতে চাইলে ও উল্টো তাকেই পড়তে হয় প্রতিকূলতায়।
বনবিভাগ সূত্রেই জানা গেছে সম্প্রতি করেরহাট বিটের চেক পোস্টে কাঠ বোঝাই (ফেনী-ট- ১১-০৪৭৮) ট্রাকটি পার হওয়ার সময় করেরহাটে দায়িত্বরত সহকারি বন সংরক্ষক শেখ মাহবুব হাসান দেখতে চান কাঠের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। এসময় তারা চট্টগ্রারে নারায়ণহাট বিটের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইলিছুর রহমানের ২৮ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত একটি পরিবহন অনুমতির (টিবি) কাগজ দেখান। যাতে উল্লেখ ছিলো গর্জন কাঠ মোট ৫৫ টুকরায় ৩শত ৭৩. ৮০ ঘনফুট। কিন্তু বাস্তবে পরিমান প্রায় ৬শ ঘনফুট। যার আনুমানিক বাজার মুল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। এ বিষয়ে মাহাবুব হাসান বলেন, গাছের সাথে প্রদানকৃত টিবির কোন মিল খুঁজে পাইনি বলে সেগুলো জব্দ করেছি। এবিষয়ে অনুমোদনের কাগজে স্বাক্ষর প্রদান করা পূর্ববর্তি নারায়ণহাট রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ইলিছুর রহমান এর কাছে জানতে চাইলে আমাদের এখানে তারা যতটুকু কাঠ লোড় দিয়েছে সেঅনুযায়ী টিবি দেওয়া হয়েছে। পথিমধ্যে তারা যদি আরো কাঠ বোঝাই করলে তাতো আমি দেখতে পাবো না। টিবির বাইরে কোন কাঠ থাকলে সেটা অবৈধ হিসেবে জব্দমুলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আটককারী কর্মকর্তা। এমন চিত্র করেরহাট- খাগড়াছড়ি রুটে নিত্যদিনের ঘঠনা।
আবার গত মঙ্গলবার ( ১৪ ফেব্রুয়ারী) পাশ^বর্তি দাঁতমারা এলাকার স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শি জামাল উদ্দিন জানায় হাসনাবাদ বিট এলাকায় ঘরকাটা বাচ্চু কোম্পানীর টিলায় বনচোরচক্র সুফলভোগিদের আকাশমনি বাগান গত কয়েকদিন ধরে চুরি করে কেটে যাচ্ছে । দিনের রাতে কেটে দিনের বেলাতেই কেটে নিয়ে যাচ্ছে এসব কাঠ। আবার এই বিষয়ে উল্লেখিত সহকারি বন সংরক্ষক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এমনিতেই আমি অন্যায়ভাবে বাগান কাটা, কাঠ চুরি ও পাচারের বিষয়ে কয়েকজন বনকর্মী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পর্যন্ত রিপোর্ট দিয়েছি । যার দরুন আমাকেই এখন ‘বন রক্ষায় এতো উঠে পড়ে লেগেছি কেন’ উল্টো এমন হুমকীর সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন প্রতিকূলতা স্বত্বে ও অভিযুক্ত দাঁতমারা দায়িত্বরত রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিনকে ইতিমধ্যে কাঠচোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ প্রদান সহ লিখিত পত্র প্রদান করেন ।
উল্লেখ্য যে, মীরসরাই উপজেলার করেরহাট রেঞ্জ এর কয়লা, হেঁয়াকো, অলিনগর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গত এক মাসেই উদ্ধার হয়েছে কয়েক কোটি টাকার কাঠ, মামলা দিয়েছেন ২০ টি। চোরাই গাড়ি আটক হয়েছে ১০টি। তরুন এই কর্মকর্তার তৎপরতা দেখে চোরচক্রের কপালে ভাঁজের চেয়ে বড় উৎকন্ঠা হয়ে গেছে উর্দ্ধতন বন কর্মকর্তাদের সাথে মাঠের কিছু রক্ষক নামের ভক্ষক সিন্ডিকেটের।
৩৮তম বিসিএস পাশ করে মীরসরাই উপজেলার করেরহাট রেঞ্জে সহকারি বন সংরক্ষক পদে নতুন প্রশিক্ষনে এসে বন রক্ষায় কাজ করতে গিয়ে চোরচক্রের থেকে অধিক প্রতিকূলতার সম্মখিন হচ্ছেন নিজের দপ্তরের বনরক্ষকদের কাছেই। এমটাই দুঃখ করে বললেন এই তরুণ কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শেখ মাহবুব হাসান।

মাহবুবুর রহমান পলাশ, মীরসরাই, চট্টগ্রাম। ০১৮১৭-৬১২২৩৮
১৪ ফেব্রুয়ারী ২৩ইং।