রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ঘুরে আসুন অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় খৈয়াছড়া ঝর্ণা

এম.ইমাম হোসেন:  দিনটা ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে পেশ হয়ে নাস্তা সেরে বাড়ির বাইরে হাঁটছিলাম । বাড়ি এসে দেখি মোবাইলে ৭ মিস কল । মিসকলের মধ্যে ৩টা ছিলো বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র (বার্তা) প্রযোজক শারমিন মুনমুন সুমি আপুর । আমি কল দেওয়ার সাথে সাথে কল রিসিভ করে সুমি আপু বললেন কি খবর কেমন আছেন। আমি বললাম ভালো । সুমি আপু বললো আমি আপনাদের খৈয়াছড়া ঝর্ণা আসছি। আমি বললাম আসেন আবার জিঙ্গেস করলাম আর কে আসছে তিনি বললেন আমি আর আমার সাথে দুই আপু। আমি বললাম ঠিক আছে আসেন আমি থাকবো। ঠিক দুপুর সাড়ে ১১টা। খৈয়াছড়া ঝর্ণা অভিমুখে সুমি আপুদের বাস থামলো। সামনে সারি সারি সিএনজি আমাদের অপেক্ষায় দাঁড়ানো থাকলে আপু আমাকে কল দিয়ে আমি কোথায় আছি জানতে চাইল। আমি বললাম ৫ মিনিট লাগবে। ৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম । ঝর্ণার রাস্তার মাথায় পৌছানোর পর সবাই মিলে একটা সিএনজি ভাড়া করে উঠলাম খৈয়াছড়া ঝর্ণা দিকে। সিএনজি মধ্যে সবার সাথে পরিচিত হতে লাগলাম আমার সাথে ছিল ছোট ভাই তৌহিদুল ইসলাম আর আপুর সাথে আগে পরিচয় থাকলেও তার সাথে আসা দুই আপুর সাথে পরিচিত হলাম একজন হলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে উপ সহকারী প্রকৌশলী জান্নাতুল ফেরদৌস মৌসুমী আপু ও চট্টগ্রাম পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষিকা মোহছেনা লোপা আপু। সিএনজি তার গন্তব্যে এলো পৌঁছলো সবাই সিএনজি থেকে নেমে সামনে ঝর্ণা দিকে হাঁটতে লাগলাম।
যদিওবা খুটি নিয়ে সুমি আপু ও মৌসুমি আপু হাঁটতে পারছিলেন কিন্তু লোপা দুটি খুুনি নিয়ে ও উচু নিচু জাগয়া হাঁটতে খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু চলার মাঝে পেটোসেশান দায়িত্ব ছিল তৌহিদের উপর। আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু প্রান্তর পার হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পর কাঙ্ক্ষিত ঝর্ণা এখন আমাদের সামনে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁতুড়ঘর খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখে সবাই আনন্দে আত্মহারা। খৈয়াছড়া ঝর্ণার দেখে সবাই কষ্ট করে হেঁটে আসাটা সার্থক হয়েছেন বলে মনে করছেন।

সবাই সবাই ঝর্ণার পাশে গিয়ে পানিতে নিজের গাঁ টা ভিজিয়ে নিয়ে বসে আসে। লোপা আপু উপরে দিকে তাকিয়ে ভাবে প্রকৃতি যেন তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। কি অবিরাম ছন্দে পড়ছে পানি। নয়নাভিরাম সেই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে যেন বারবার ছুটে যেতে চাইব সে অমসৃণ পাহাড়ি পথে। এমন ঝর্ণা দেখলে ভেজা থেকে নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে যাই। সে সৌন্দর্যের দৃশ্য কি আর লিখনিতে বুঝানো সম্ভব? সবাই পানিতে নেমে পড়লো। আপুদের বলেছিলাম জোঁক আছে তারা বললেন এতদুর এসো জোঁকের ভয়ে পানিতে না নামলে ঝর্ণা আসাটা মূল্যহীন। ঝর্ণা গিয়ে সবাই প্রটোসেশনের করতে লাগলো কিন্তু আকাশে কালো মেঘ জমাট বাঁধায় সবাই মিলে ঝর্ণা থেকে ত্যাগ করলাম। ঝর্ণা বাইরে এসে সবাই প্রেশ হয়ে হোটেল মালিক স্বাগত জানানোর আগেই আমরা ক্লান্ত দেহে বসে পড়লাম। খৈয়াছড়া পাহাড়ের পাদদেশেই হরেক রকম খাবারের হোটেল। ছোট আকৃতির হোটেল হলেও তাদের আপ্যায়ন মনোমুগ্ধকর। ভর্তা, মুরগি আর সামুদ্রিক মাছের সঙ্গে ক্যান্টিনের মতো ডাল দিয়ে দুপুরের খাবারটা বিকাল ৪টা আমরা খাওয়ার শেষ করলাম । ঠিক তখনি বৃষ্টি শুরু হলো। হোটেল বাইরে বসে সবাই বৃষ্টি উপভোগ করলাম। বৃষ্টি থামতেই হাঁটা শুরু করি। কিন্তু একটু সামনে যাওয়ার পরেই আবার বৃষ্টি আসে। বৃষ্টিতে ভিজে সিএনজিতে উঠলাম। বৃষ্টির মধ্যে ভাঙ্গা রাস্তা সিএনজি চলাটা খুব বিপদ জনক হলেও সিএনজি হাইওয়ের পাশে নামিয়ে দিল। সন্ধ্যার হাতছানিতে তখন পশ্চিম আকাশে লাল আভা দৃশ্যমান। তাই আপুদের নিয়ে মহামায়া সেচ প্রকল্প ও কৃত্রিম লেক দর্শন ‘সন্ধ্যার’ কারণে অন্ধকারের ভাটা নামে। কিন্তু তখনও বৃষ্টি ছিল আর কোথায়ও আশ্রয় না নিয়ে। বৃষ্টিতে ভিজেই হাইওয়েতে আসি। পরে হাইওয়েতে এসে আপুদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। পরে তাদেরকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমি আর তৌহিদ সেফ লাইনে করে মীরসরাই খবরিকা অফিসে চলে আসলাম।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসে গেলে বড়তাকিয়া বাজারে নামতে হবে। এরপর একটু হেঁটে উত্তর দিকে আসলে ঝর্ণার সাইনবোর্ড দেখবেন। ঐখানে সারি সারি সিএনজি দাঁড়িয়ে থাকে। সিএনজিতে উঠুন। ঝর্ণার কাছাকাছি নামিয়ে দিবে। ২০ টাকা নিবে। এরপর একটা বাঁশ কিনে নিবেন ১০ টাকা দিয়ে। ব্যস পাহাড়ি পথ ট্রাকিং শুরু করুন।
যারা নতুন যাবেন তাদের জন্য কিছু টিপস
১। যাওয়ার আগে একটা বাঁশের লাঠি নিয়ে যান। পথেই পাবেন। ১০ টাকা করে।
২। জুতা নিয়ে যাবেন না। খালি পায়ে পাথরে গ্রিপ করাই অনেক সুবিধার।
৩। উচ্চতা দেখে ভয় পাবেন না। উঠানামা করা অনেক সহজ।
৪।ঝর্ণার যেদিক দিয়ে পানি নিচে নামে সেখান সাবধানে পা ফেলবেন। পাথর খুব পিচ্ছিল।
৫। বেশি পানি দেখতে বৃষ্টির দিনে বা বৃষ্টি হওয়ার পরের দিনে যাবেন। তাতে অবশ্য পাহাড়ি পথ কর্দমাক্ত থাকবে। কিন্তু সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এইটুকু ত্যাগ স্বীকার করাই যায়।
৬। লাঠি ফালানোর সময় নিশ্চিন্ত হয়ে নিবেন নিচের মাটি/পাথর শক্ত কিনা যাতে ফসকে না যায়।
৭। খালি পায়ে পা টিপে টিপে হাঁটবেন। পায়ের তেলো আগে ফেলবেন। নাইলে পাথরে লেগে আঙ্গুলে মারাত্মক ব্যথা পেতে পারেন।
৮। ঝর্ণার ধাপে ধাপে উঠার সময় হাতে ভর দিবেন বেশি। যাতে পায়ে ওজনের চাপ পরে কম।
৯। ঝর্ণা দেখলে ভিজতে মন চাইবে। তাই এক্সট্রা কাপড় নিয়ে যাবেন।
১০। যারা একটু স্বাস্থ্যবান আর হাটার অভিজ্ঞতা নেই, তাদের উপরে না উঠাই ভাল। সেক্ষেত্রে তৃতীয় ধাপ থেকে উপরের ৩/৪টা একসাথে দেখে ফিরে আসতে পারেন।