বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ আজ

49417_f4

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে  বিএনপি। আজ রাজধানীতে থানায় থানায় এবং সারা দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরীতে এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। সেই সঙ্গে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন তারা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৮ই নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। ওই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য রাখার কথা ছিল। কিন্তু ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার পরও পুলিশের অনুমতি না পেয়ে সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতির জন্য গত ২৯শে অক্টোবর পিডব্লিউডির কাছে চিঠি দিয়েছি। একই দিন সমাবেশের মাইক ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয় (ডিএমপি) বরাবর চিঠি দিয়েছি। এরপর শুক্রবার রাত সন্ধ্যার দিকে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রায় তিন ঘণ্টা ডিএমপি কার্যালয়ে বসে থাকলেও তাদের পক্ষ থেকে কিছু জানায়নি। রাত ১১টা পর্যন্ত আমরা সমাবেশের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও পুলিশ আমাদের অনুমতি দেয়নি। মির্জা আলমগীর বলেন, গত ৩রা নভেম্বরও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে প্রকাশ্যে মিছিল ও সমাবেশ করছে। সেখানে পুলিশ বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু সরকার আমাদের যে ন্যূনতম অধিকার আছে সেটাও পালন করতে দিচ্ছে না। সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, অবৈধ সরকার গণতন্ত্রের কোন জায়গা রাখছে না। সমপ্রতি যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নিজের বাসায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করতে গেলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। এমন কি তার মুক্তির দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এক দেশে দুই আইন চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশটাকে তারা একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, এর পরিণতি অতীতেও ভাল হয়নি, এখনও হবে না। মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের প্রচলিত যে আইন আছে তা মেনে চলার চেষ্টা করছি আমরা। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে রোববার ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় এবং সারা দেশে জেলা সদর ও মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। মির্জা আলমগীর বলেন, কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- ঢাকা মহানগর বিএনপি নাকি সমাবেশ বাতিল করেছে। আমরা সমাবেশ বাতিল করিনি। সরকার আমাদের সমাবেশ করতে দেয়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা এখন রাজনৈতিক নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন বলে অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের গণতন্ত্র আজ পুলিশের বুটের নিচে। তারা রাজনৈতিক  নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন। অনেকেই বলছেন, পুলিশই নাকি দেশ চালাচ্ছেন। মানবাধিকার কমিশনের  চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান সাহেব যখন বলেছেন, একটি জেলার পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে উঠে গেছেন। তখন এ থেকে বোঝা যায়, ক্ষমতা কাদের হাতে। গতকাল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা আলমগীর বলেন, সরকার পুলিশ ও র‌্যাবের ওপর ভর করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। দেশটাকে তারা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। জাসদ সভাপতি ও বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, জাসদ নেতা ইনু সমপ্রতি জিয়াউর রহমানকে চতুর্থ মীরজাফর বলেছেন। আমরা তার এহেন বক্তব্যের ধিক্কার জানাই, নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ আমলে ৩০ হাজার রাজনৈতিক কর্মী হত্যা হয়েছিল। ইনু তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। তৎকালীন শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করার জন্য গণবাহিনী গঠন করেছিলেন ইনু। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, ৭ই নভেম্বর গণতন্ত্রের নতুন করে জন্ম হয়েছিল। এই দিনটি হচ্ছে অন্ধকার থেকে আলোতে ফেরার দিন। যারা এ দিনটি পালন করে না বা পালন করতে দেয়া না, তারা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না। ৭ই নভেম্বর অস্বীকার করা, বাংলাদেশকে অস্বীকার করার শামিল। এসময় ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাবো, এ ধরনের আচরণ আপনারা ভবিষ্যতে করবেন না। সরকার যদি এভাবে একের পর এক আমাদের অহিংস কর্মসূচিতে বাধা দিতে থাকে, তাহলে একদিন বাঁধ ভেঙে যাবে। তখন জনগণকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রিজভী আহমেদ, মহানগর সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুর রহমান হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা দল সভাপতি  ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, শ্রমিক দল সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।