শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

সাঈদীর ফাঁসির রায় হলেই মানুষ খুশি হতো

42103_b5

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল বিভাগে যে রায়
হয়েছে তা কারও কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তার ফাঁসির রায় হলেই মানুষ খুশি হতো। তিনি নিজেকে ধর্মপ্রচারক বানিয়েছেন। কিন্তু মানুষ এখন আর তাকে তা মনে করবে না। সাঈদী একজন নারী নির্যাতনকারী, খুনি, যুদ্ধাপরাধী ও জঘন্য লোক হিসেবেই মানুষের কাছে আজীবন চিহ্নিত হয়ে থাকবে। মুখে সে ভাল কথা বললেও বাস্তবে সে কত খারাপ লোক, সেটি অন্তত প্রমাণ হলো। তিনি আরও বলেন, বিচারবিভাগ স্বাধীন, তারা তাদের মতো রায় দিয়েছেন। জামায়াতের হরতালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কার বিরুদ্ধে এই হরতাল? রায়ে কি তারা খুশি হয়নি? তাহলে কি ফাঁসির রায় হলে তারা খুশি হতো? শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, বাকিদেরও হবে, জাতি কলঙ্ক মুক্ত হবে। গতকাল দশম জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের সমাপনি বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বুধবার সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিলটির ওপর আলোচনা করে ভোট দিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে তা পাস করায় সরকারি ও বিরোধী দলসহ সকল সংসদ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও বিচারকদের মর্যাদা-সম্মান আরও সুরক্ষিত হয়েছে। আমরা সেটি নিশ্চিত করলাম। বিচারকদের অপসারণে ’৭২ এর সংবিধানে যা ছিল, সেটিই হুবহু ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আগে যেখানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের তিনজন সদস্য বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করতেন, এখন সেখানে সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে প্রস্তাব পাস হলেই কেবল তা রাষ্ট্রপতির কাছে  যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন,  আমি জাতির জনকের কন্যা। দেশের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ রয়েছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমি রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। খাদ্য ভেজাল ও ফরমালিনমুক্ত করার ক্ষেত্রেও আমরা বসে নেই, আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরাই প্রথম এ নিয়ে কাজ করছি। এ জন্যই বিরোধীদলীয় নেতা আজ বিষয়টি এখানে বলতে পারলেন। আগের কোন সরকার তো এ নিয়ে কাজ করেনি। করলে বিষয়টি আজ এই পর্যায়ে আসতো না। বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটু আগে আপনি ঢাকার দুরবস্থার কথা বললেন। ঢাকায় যে জলাবদ্ধতা, এই আকামটা করেছে জাপা সরকার। আপনাদের সরকারই খাল ভরাট করে   কালভার্ট করেছে। ঢাকায় অনেক খাল ছিল, পান্থপথেও খাল ছিল। আপনাদের সরকারের সময় সেগুলো ভরাট করা হয়। আর যে দুর্গন্ধের কথা বলছেন, সেটি রাতারাতি হবে না। আমাদের মানুষেরও সচেতনতার অভাব আছে, তারাও ঠিকমত সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখে না। রওশন এরশাদের বক্তব্য খণ্ডন করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আপনি বললেন-গ্যাস-বিদ্যুতে তিন দশকে নাকি শুধু লুটপাট হয়েছে। তিন দশকের মধ্যে কিন্তু আপনারাও পড়েন। আর আপনাকে জেলে নিয়ে দুটি কম্বল নিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এটা আমরা করিনি। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে। এই ধরনের ঘটনা আর ঘটুক, তা চাই না। অপরাধ করলে অপরাধীর শাস্তি হোক। এবারও ১১ মাস আমাকে জেলে রাখা হয়েছে। এরশাদের আমলেও তিনবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একবার গৃহবন্দিও করা হয়েছে। ক্যান্টনমেন্টে সারারাত বসিয়ে রেখে বলা হলো, আপনি হাউজ এরেস্ট। তিনি বলেন, একথা ঠিক যে-ভাল ফলাফলের পাশাপাশি শিক্ষার মান নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে। আমাদের প্রথম কাজ সবার দোরগোড়ায় শিক্ষা পৌঁছে দেয়া। এবার আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যেও পহেলা জানুয়ারি আমরা নতুন বই বিতরণ করি। ৩ কোটি ৭৮ লাখ বই দিয়েছি। আমরা উপবৃত্তি দিচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নারীর ক্ষমতায়ন করছি। এই প্রথম দেশে দুই জন নারী ভিসি হলেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটে আমরা ভিসি পদে নারী নিয়োগ দিয়েছি। গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন ১৬শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করতে পেরেছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক কোটি মানুষকে চাকরি দিয়েছি। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে কারও কারও বক্তব্যের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। একজন ব্যারিস্টারের নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, উনি প্রায়ই বলেন-দুই মহিলা কি রাজনীতি করবে। তাকে আমি চিনি। দুই নম্বরী করে তিনি বারিধারায় বাড়ি নিয়েছেন। আইন লঙ্ঘন করে কাকরাইলে একটি মাল্টিস্টোরেড  ভবন করে রেখেছেন। উপদেষ্টা হওয়ার জন্য তিনি আমার কাছে ধরনা দিয়েছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। এই ব্যক্তি নিজের বাপের সম্পত্তির মিথ্যা এফিডেভিট দেয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এখন তার কাছে নাকি আমাদের রাজনীতি শিখতে হবে। তিনি তো বঙ্গবন্ধুর খুনি শাহরিয়ার-হুদাকে নিয়ে প্রবাস নামে রাজনৈতিক দল করেছিলেন। খুনিদের নিয়ে যারা রাজনৈতিক দল করে, তাদের কাছে রাজনীতি শেখার মতো এত দৈন্য আমরা নই। তারা এক সময় মাইনাস টু, মাইনাস টু করেছিল। এখন তো সংসদে আমরা পাঁচজন নারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছি। এভাবে তারা যত মাইনাস, মাইনাস করবে, ততবেশি আমি নারীদের নিয়ে আসবো। যারা এই ধরনের রাজনীতি করে, যারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া ও ব্যর্থ, নিজেদের ব্যর্থতার জ্বালা মেটাতেই তারা এসব কথা বলে। শুধু তিনি নন, আরও কয়েকজন আছেন যারা এভাবে কথা বলছেন। তাদের সবাইকে জনগণ চেনে। তারা জনবিচ্ছিন্ন। অসময়ে তারা নীরব ও সময়ে তারা সরব থাকেন। কাজেই তাদের কথায় বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। দেশে যখন অসাংবিধানিক সরকার আসে তখন তাদের কদর বাড়ে, তারা একটি পতাকা পায়। আসলে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে তাদের দম বন্ধ হয়ে আসে। এরা ইয়াহিয়া খানের প্রেতাত্মা। এজন্য তারা প্রভুদের ভুলতে পারছে না। তারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না।