রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

সংবিধান সংশোধন বিল পাস হচ্ছে আজ

41820_f10

বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনতে ‘সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪’ আজ পাস হওয়ার কথা রয়েছে। বিলটি সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত হওয়ায় এটি ‘হ্যাঁ-না’ কণ্ঠভোটে পাস হবে না। সংবিধান অনুযায়ী বিভক্তি ভোট অর্থাৎ গোপন বুথে সরাসরি ব্যালটে স্বাক্ষরের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ভোট গ্রহণ করা হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বিলের পক্ষে পড়লে তা পাস হবে। সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাস উপলক্ষে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংসদ সচিবালয়। বিভক্তি ভোট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় বুথের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বুঝে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আজ সব সংসদ সদস্যকে সংসদ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে সরকারি ও বিরোধী দল এবং স্বতন্ত্র সদস্যদের জোটের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনী বিল পাসের সময় কোন সদস্য সংসদে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ শূন্য হবে। তবে স্পিকারের এবং স্ব-স্ব দলের সংসদীয় দলের প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে যে কোন সদস্য ওই দিন অনুপস্থিত থাকতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বিলটির পক্ষে ভোট দেবে বলে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরোধী দল বিলের পক্ষে ভোট দেবে জানিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা বিলের পক্ষে ভোট দেবো, দলীয়ভাবে এ সিদ্ধান্ত রয়েছে।’ তিনি জানান, একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেয়ার জন্য বুধবার তার বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল, তবে সংবিধান সংশোধনী বিল পাসের বিষয় থাকায় তিনি সেই সফর বাতিল করেছেন। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ জানান, সংবিধান সংশোধন বিল পাসের দিন সংসদে যেন সরকারি দলের সব সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকেন সে জন্য এরই মধ্যে হুইপিং করা হয়েছে। সবাই উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী সংবিধান সংশোধন বিলটির ওপর কিছু সংশোধনী জমা দিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ে। বিলটির ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবও করেছেন তিনি। এ ছাড়া কেউ বিলটির ওপর কোন সংশোধনী বা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দেননি। সংবিধান সংশোধন বিল পাসের নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে বিলটি পাসের প্রস্তাব করবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। এরপর স্থায়ী কমিটির সুপারিশকৃত আকারে বিলটির প্রতিটি উপদফা, দফা, প্রস্তাবনা ও শিরোনাম ভোটে দেবেন স্পিকার। পরে জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠান ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলোও স্পিকার ভোটে দেবেন। এ দুটি বিষয় নিষ্পত্তি হবে কণ্ঠভোটে। এরপর বিলটি পাসের প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে সংসদ সদস্যরা অধিবেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে লবিতে গিয়ে গোপন বুথে স্বাক্ষর করবেন। এরপর স্পিকার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করবেন। এ বিলটি পাস হলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ’৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপিত হবে। ওই অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারককে তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে অপসারণের বিধান ছিল। তবে ওই অনুচ্ছেদে বিচারপতিদের চাকরির বয়স বর্তমান বিধান অনুযায়ী ৬৭ বহাল থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ই সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ওই দিনই বিলটি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে বিলের ওপর সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সংসদীয় কমিটি গত ৯ ও ১০ই সেপ্টেম্বর মাত্র দু’টি বৈঠকেই এ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। এর আগে ২০১১ সালের ৩০শে জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়েছিল। বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে ওই সংশোধনীর মাধ্যমে। সংসদে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সেদিন বিলটি পাস হয়েছিল। বিলটির পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছিল ২৯১টি, বিপক্ষে ‘না’ ভোট পড়েছিল মাত্র ১টি। নবম সংসদের একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম ওই ‘না’ ভোটটি দিয়েছিলেন।