শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

শাহবাগে গণজাগরণের তিন টুকরো সমাবেশ

42263_f5

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি দাবিতে শাহবাগে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চের তিন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে তিনটি পক্ষই। হামলার জন্য একে অন্যকে দায়ী করেছে। গতকাল সন্ধ্যায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ১৭ই সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাঈদীর ফাঁসির রায় কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। রায় প্রত্যাখ্যান করে আবারও শাহবাগে আন্দোলনে নামে গণজাগরণ মঞ্চের তিন পক্ষ। এর একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন ডা. ইমরান এইচ সরকার, আরেক অংশের কামাল পাশা চৌধুরী এবং অপর অংশে বাপ্পাদিত্য বসু। আলাদা আলাদা কর্মসূচির মাধ্যমে সাঈদীর ফাঁসির দাবি করে আসছিল তিনপক্ষই। গতকাল বিকাল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে তিন পক্ষই আলাদা আলাদা সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। জাদুঘরের ডান পাশে ইমরানপন্থিরা, মূল ফটকে বাপ্পাদিত্যবসুর শাহবাগ আন্দোলন এবং বাম পাশে মঞ্চ করে কামাল পাশা চৌধুরীর পক্ষ। সমাবেশের শুরুতে তিন পক্ষের মাইকের আওয়াজে সেখানে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। তিন পক্ষের বক্তারা একে অন্যকে উদ্দেশ্য করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে। এসময় ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, সরকারি পুলিশ ও পেটোয়া বাহিনী দিয়ে আমাদের বাধা দিয়ে আসছে। মাইক চালানোর জন্য ইলেকট্রিসিটির লাইন দেয়া হচ্ছে না। এ বাধা আজকে নতুন নয়। যখন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য শাহবাগে এসেছি তখন থেকে এ ধরনের বাধা দেয়া হচ্ছে। তারা চাইছে জামায়াত-শিবিরকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য। কামাল পাশা চৌধুরী পক্ষের সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, বামদের নিয়ে আন্দোলন করলে দলাদলি হয় না। আর আমরা এলেই দলাদলি হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এটা করা হচ্ছে। জয় বাংলার পর যারা জয় বঙ্গবন্ধু বলবে না তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, ইমরান কতিপয় স্বাধীনতা বিরোধী বাম দল নিয়ে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শাহবাগে এসেছে। তার দলের সবাই হয় কেউ শিবিরের ঘরের না হয় ছাত্রদলের ঘরের। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য মঞ্চে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। সন্ধ্য সাড়ে ছয়টার দিকে সমাবেশ শেষ করে ইমরানপন্থিরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানার সামনে দিয়ে শাহবাগের মোড়ে যেতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। সেখানে পুলিশের সঙ্গে কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে জাদুঘরের সামনে দিয়ে শাহবাগ মোড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কামাল পাশার পক্ষ তাদের ওপর হামলা করে। হামলার একপর্যায়ে কামলা পাশার পক্ষের সঙ্গে যোগ দেয় বাপ্পাদিত্যবসুর শাহবাগ আন্দোলন। বাঁশ, চেয়ার, পানির বোতল, আগুনের মশাল, লোহার পাইপ দিয়ে তিন পক্ষই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় পনের মিনিটের সংঘর্ষে তিন পক্ষের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন, ডা. ইমরান, আনিক রায়, আরিফ জেবতিক, মারুফ রসূল। কামাল পাশা পক্ষের মেহেদী হাসান, রেজওয়ান, হাবিবুল্লাহ মেজবাহ, শাহীন, বিচ্ছু জালালসহ আরও চারজন নেতাকর্মী। শাহবাগ আন্দালনের জীবন, ইমন, মনোয়ার, রোমিও। সংঘর্ষের পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল বের করে শাহবাগ আন্দোলন। তারা এ হামলার জন্য ইমরানপন্থিদের দায়ী করেম। হামলার প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বাপ্পাদিত্য বসু জানান। এসময় কামাল পাশা পক্ষের কর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেন। ‘মেহেদী ভাই আহত কেন, খুনি ইমরান জবাব দেয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। পরে সংবাদ সম্মেলনে কামাল পাশা বলেন, ইমরানপন্থিরা বিনা কারণে আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ওপর হামলা করে। এতে আমাদের অন্তত ৮ জন নেতাকর্মী আহত হন। হামলার প্রতিবাদে আজ সন্ধ্যায় শাহবাগে মশাল মিছিল করার ঘোষণা দেন তিনি। এদিকে ইমরানপন্থিদের পক্ষে মারুফ রসূল বলেন, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা জাদুঘরের সামনে আসতে চাইলে কামাল পাশা ও বাপ্পাদিত্যবসুর শাহবাগ আন্দোলন আমাদের ওপর হামলা করে। তিনি জানান, আমাদের ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে রাত ১০টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান করে তিন পক্ষের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।