রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

রাবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা

2_84827
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের নিজ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন ওই হলেরই ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দ। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার সাধনপুর গ্রামের শাহজাহান আলী আকন্দের ছেলে। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্যাম্পাসসহ গোটা নগরীতে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা আবাসিক হলে ঢুকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে নাকি দীর্ঘদিনের দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে রুস্তমকে প্রাণ দিতে হল তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। পুলিশ প্রশাসন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমেছেন। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ থেকে ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিলও করেছে তারা।হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, বেলা ১টা ১০ মিনিটের দিকে সবাই যখন জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে ছিলেন, তখন হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় হলের কয়েকজন ছাত্র ওই কক্ষে গিয়ে রুস্তমকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাকে উদ্ধার করে ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিব রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য সম্পাদক সম্রাট হোসেন জানান, দুপুরে আমরা যখন নামাজে যাই, তখন ওই কক্ষে রুস্তম পড়ালেখা করছিলেন। পাশের কক্ষের কয়েকজন আবাসিক ছাত্রের চিৎকারে আমরা রুস্তমের কক্ষে গিয়ে দেখতে পাই সে গুলিবিদ্ধ। নিহতের বন্ধু আশিক জানান, রুস্তমের সম্মান শেষবর্ষের পরীক্ষা চলছিল। আজও ৪০৪ নং কোর্সের পরীক্ষা ছিল।ক্যাম্পাসের অপর একটি সূত্র জানায়, আগামী ১০ এপ্রিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগের কাউন্সিল হওয়ার কথা। রুস্তম আলী ওই হলের সভাপতি হওয়ার জন্য লবিং-গ্র“পিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও মাথাচাড়া দেয়। এর জের ধরেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।এদিকে শুক্রবার বিকালেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রুস্তমের লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। লাশের ময়নাতদন্তকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কফিল উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, নিহতের বুকের নিচে একটি মাত্র গুলি লেগে তা পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে। দেহের ভেতরে গুলি পাওয়া যায়নি। কাছাকাছি থেকে শুট করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা যুগান্তরকে বলেন, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের যে কথা বলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন। অস্ত্রধারী শিবির ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে আসছিল। শুক্রবার তারা রুস্তমকে একা পেয়ে তার নিজ কক্ষে গুলি করে হত্যা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিন বলেন, বৃহস্পতিবার শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আশরাফুল আলম ইমন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে হুমকি দেন। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। এ মিছিলে রুস্তম আলীও ছিলেন। তাই ছাত্রশিবির কর্মীরাই তাকে গুলি করেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি আশরাফুল আলম ইমন বলেছেন, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই রুস্তম খুন হয়েছেন।
নগরীর মতিহার থানার ওসি এসএম রেজাউল করিম জানান, সোহরাওয়ার্দী হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে একা পড়াশোনা করছিলেন রুস্তম আলী। এ সময় হঠাৎ তিনটি গুলির শব্দ শুনতে পান পাশের কক্ষের শিক্ষার্থীরা। ওই কক্ষে গিয়ে তারা রুস্তমকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি বলেও জানান ওসি। সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় মামলাও হয়নি।
উৎস- যুগান্তর