সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ব্লগার হত্যার স্টাইলে রাবি শক্ষিক রজোউল খুন- আইএসের দায় স্বীকার

rejaul

 

খবরিকা ডেস্ক:

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহী নগরীতে বাড়ির কাছেই এই অধ্যাপককে মোটর সাইকেলে আসা দুই যুবক কুপিয়ে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহদাত হোসেন। অধ্যাপক রেজাউল লেখালেখি করতেন, যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দিন বলছেন, ‘তার গলায় আঘাত এবং আক্রমণের ধরন দেখে অতীতে যেভাবে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার সাথে মিল পাওয়া যাচ্ছে। তাই উগ্রপন্থী কোন সংগঠন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে এমন ধারণা মাথায় রেখে কাজ করছি আমরা’। তবে সন্ধ্যায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’। ‘সাইট’ এর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে বলা হয়, আইএসের ‘আমাক সংবাদ সংস্থা’ অধ্যাপক রেজাউলকে হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি গোষ্ঠীটির দায় স্বীকারের খবর দিয়েছে। ‘নিরীশ্বরবাদে আহ্বান করার জন্য’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এই শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়। এদিকে এ হত্যার ঘটনায় বিকেল ৪টার দিকে নিহত শিক্ষকের ছেলে সৌরভ হোসেন বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদত হোসেন জানান, মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ, বাসস ও বাংলানিউজের।

শহরের বোয়ালিয়া থানা এলাকার শালবাগানের সপুরা এলাকায় থাকতেন অধ্যাপক রেজাউল। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ির কাছেই বটতলা মোড়ে আক্রান্ত হন তিনি। ওসি শাহদাত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাস ধরার জন্য অধ্যাপক রেজাউল করিম (৬১) শালবাগান মোড়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে আসার পরই দুজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে তাকে ঘাড়ে কোপ দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বাগমারার দরগাবাড়ি এলাকায় এই শিক্ষকের পৈতৃক বাড়ি। শালবাগানের সপুরা এলাকায় থাকতেন তিনি। তার ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। মেয়ে রেজোয়ানা হাসিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী।

বটতলায় যে বাড়ির সামনে এ শিক্ষক খুন হন সেই বাড়ির মালিক জাকিয়া সুলতানা বিডিনিউজকে জানান, বাড়ির বাইরে এলে স্যারের লাশ দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দিই। তবে, ঘটনা সংঘটিত হবার সময় আমরা দেখিনি। রেজাউল করিমের স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, ভালো মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে গেল। এরপর রাস্তার মধ্যে খুন হলো। তাকে কে বা কারা খুন করলো? তার সঙ্গে কারো শক্রতা বা কোনো ঝামেলা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

নিহতের ভাই সাজিদুল করিম বলেন, অধ্যাপক রেজাউল ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক এবং ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন। তার ভাইকে কেউ কখনও কোনো ধরনের হুমকি দিয়েছিল কি না, তা জানাতে পারেনি সাজিদুল করিম। সুন্দরম’ এর সভাপতি হাসান রাজা বলেন, ‘স্যার খুব ভালো সেতার বাজাতেন। তিনি শালবাগানে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন।’

রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার সুশান্ত চন্দ্র রায় জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুই বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হন আরেক অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম। সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শফিউলকে হত্যার পর জঙ্গিদের দায় স্বীকারের খবর এলেও পরে পুলিশের তদন্তে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার ধারণাটি নাকচ করা হয়। পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন অধ্যাপক শফিউল। তারও বেশ আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুজন শিক্ষক অধ্যাপক এম ইউনুস এবং অধ্যাপক এস তাহের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

বিচার চাইলে গুমখুনও করা হচ্ছে : ইমরান

ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়া ‘দেশে কেউ নিরাপদ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শনিবার নিজের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে তিনি এ অভিযোগ এনেছেন। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘এদেশে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বাদে (কর্মীরাও খুন হচ্ছে) সবাই খুন হচ্ছে। এমনকি ক্ষমতাসীন নেতানেত্রী ও তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বাইরে অন্য কোনো ঘটনার বিচারও হচ্ছে না।’ অন্য কোনো ঘটনার দায়দায়িত্বও সরকার নিচ্ছে না বলে তার অভিযোগ।

সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফেইসবুক পেইজে ইমরানের স্ট্যাটাসের দেখা মেলে, এরই মধ্যে যাকে ‘বর্জনের’ জন্য আহ্বান জানিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে ক্ষমতাসীনদের রোষে পড়া ছাত্রলীগের এই সাবেক নেতা বিচার চাওয়ার অধিকার হারিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে আরও লেখেন, ‘বিচার প্রার্থীদের গুম, খুন করা থেকে শুরু করে হেন কোনো অপপ্রচার নেই, যা তাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে না।’

ইমরান লিখেছেন, ‘বিচার চেয়ে তো এদেশে কোনো লাভ নাই, খুনধর্ষণলুটপাটের বিচার চাইলে পুরস্কার হিসেবে পাই আনফ্রেন্ড আর প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি। আমরা কি তাহলে বিচার চেয়ে সরকারকে বিব্রত করা বন্ধ করে দেব? নাকি সবাই মিলে সরকারের দিকে আঙুল তুলে বলবো, আপনারাই রেজাউল করিম সিদ্দিকীর খুনি।’

একের পর এক হত্যাকাণ্ড নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আবারো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক খুন! কে হচ্ছে না খুন? বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, স্কুল ছাত্র, কলেজ ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, গৃহকর্মী, লেখক, প্রকাশক, মুয়াজ্জিন, পুরোহিত? কে বাদ আছে? যখন সকলেই অনিরাপদ তখন ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী ধর্ম প্রচারক ছিলেন নাকি উদার মানসিকতার ছিলেন, এটা ফালতু আলোচনা। এটা শুধুমাত্র সরকারেরই প্রয়োজন হতে পারে আমাদের মতো বোকা নাগরিকদের বিভক্ত করার কাজে। ধর্ম প্রচারক হলে স্ক্রিপ্টে লেখা হবে জঙ্গি আর উদার হলে নাস্তিক, দায়দায়িত্ব শেষ!

চবি শিক্ষক সমিতির নিন্দা : চবি প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ড. এ এস এম রেজাউল করিম সিদ্দিক হত্যার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করেছেন সমিতির নেতৃবৃন্দ। গতকাল শনিবার শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ নিন্দা ও বিচার দাবি করা হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর ও সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী এস.এম. খসরুল আলম কুদ্দুসী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, একের পর এক প্রগতিশীল শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী হত্যা করে প্রতিক্রিয়াশীলরা বাঙালি সত্তার ওপর অব্যাহতভাবে আঘাত হানছে যা একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ড কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না উল্লেখ করে চবি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, এ ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডে শিক্ষক সমাজ দারুণ ব্যথিত ও সকল স্তরের শিক্ষকের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে প্রতিক্রিয়াশীলদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও সকল মুক্তমনা শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবিসহ সচেতন নাগরিকদের প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

 

– See more at: http://www.dainikazadi.org/details2.php?news_id=2579&table=april2016&date=2016-04-24&page_id=1&view=0&instant_status=0#sthash.WZxJVr0N.dpuf