সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বিলুপ্তির পথে ঈদকার্ড সংস্কৃতি

এম.ইমাম হোসেনঃ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় প্রাণের উৎসব দুটি ঈদ। এর মধ্যে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর একটি। আর কয়েকদিন পরেই এ উৎসবে মেতে উঠবে গোটাবিশ্বের মুসলমানরা। সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে এ উৎসবটি পালন করবে। তবে ঈদকােের্ডর বিষয়টি ভিন্ন। কয়েক বছর আগেও প্রচুর পরিমাণে ঈদকার্ডের প্রচলন ছিলো। কিন্তু বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় প্রায় বিলীন হতে চলছে ঈদকার্ডের শুভেচ্ছা প্রচলনটি। হারিয়ে যাচ্ছে অনেক দিনের এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গতি। ফেসবুক, ম্যাসেনজার, টুইটার, ইমো, স্কাইপি, ই-মেইল, হোয়াটআপ, টেংগো, ভাইবারসহ নানা ধরনের প্রযুক্তি এ স্থানগুলো দখল করে নিয়েছে। প্রিন্টিং হাউসগুলো এখন আর আগের মতো অর্ডার পাচ্ছে না। প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়ার পথে এ শিল্প। অসাম্প্রদায়িক বাঙালির প্রাণের উৎসবকে সামনে রেখে একসময় চট্টগ্রাম জেলার মত মীরসরাই উপজেলায় প্রিন্টিং হাউসগুলো ব্যস্ত থাকত। কিন্তু এখন সেই ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে না। প্রযুক্তির কাছে হার মানতে হচ্ছে ঈদকার্ড ব্যবসায়ী মহলকে। মীরসরাই উপজেলার আবু-তোরাব বাজারের সুরমা আর্ট এন্ড গিফ্ট সেন্টার ও ষ্টেশনারী সর্তাধীকারী নিপু বড়–য়া জানান, আগের মত বর্তমানে ঈদ কার্ডের তেমন একটা বেচা-কিনি নেই। এখন আর আগের মত জমজমাট ক্রেতাও নেই। তথ্য প্রযুক্তির পাশে দাঁড়াতে পারছে না ঈদ কার্ডের সংস্কৃতি। অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। আর তাই ব্যবসায়ীদের ঈদকার্ডের ব্যবসা কমে যাচ্ছে। ঐ দোকানে ঈদকার্ড ক্রয় করতে আসা এম আলা উদ্দিন খবরিকাকে জানান, ‘আমরা ছোট বেলায় ঈদ আসলে সর্বপ্রথম আমাদের বন্ধু এবং বান্ধবীদের কে ঈদ কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতাম। কিন্তু মানুষ এখন ভিন্ন ভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে একে অন্যকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাচ্ছে। ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে অল্প টাকায় কম সময় ব্যয় করে অনেক তাড়াতাড়ি শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দিচেছ শুভাকাক্সক্ষীদের হাতে। এ জন্য ঈদের কার্ডের চাহিদা আগের মত নেই। আর এটির ব্যবহার ক্রমে ক্রমে বিলীন হয়ে যাচ্ছে’। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে অনলাইনের যুগ বিরাজ করছে। ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটার, ট্যাংকো, স্কাইপিসহ বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ এখন আমন্ত্রণ বা শুভেচ্ছা জানায়। তাই কেউ কার্ডের প্রয়োজন আছে এমনটাই মনে করে না। কলেজ ছাত্র সানোয়ারুল ইসলাম রনি নামে একজন ক্রেতা জানান, অন-লাইনে ঢুকলে হরেক রকমের ছবি, আল্পনায় তুলি দিয়ে আঁকা অনেক শুভেচ্ছা বার্তা দেখা যায়। এজন্য মানুষ সময় বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে শুভেচ্ছা পাঠিয়ে দেয়। আমি তারপরে ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা কিনতে এসেছি। বন্ধুদের কার্ডের মাধ্যমে দাওয়াত দেয়ার মজাটাই অন্য রকম। সুরমা আর্ট এন্ড গিফর্ট সেন্টার ও ষ্টেশনারী মালিক আপু বড়–য়া জানান ক্রেতা না থাকার সত্রে ও টুকটাক ঈদকার্ড ও মিনিকার্ড ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা দাম পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। সাইজ অনুযায়ী যেমন ৬ ও ৯ সাইজের কার্ডের মূল্য ১৫ টাকা এবং ৫ ও ৭ সাইজ কার্ডের মূল্য ৫ টাকা ধরে বিক্রি করা হয়। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে মোবাইলে ১০ পয়সা খরচ করে এসএমএসের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠায় এতে সময় বাঁচে সাথে টাকাও বাঁচে সুতরাং সবাই সেটাই করছে। ১৫ টাকা দিয়ে কার্ড না কিনে একটা এসএমএসের মাধ্যমে ১০ পয়সা ব্যয় করবে এটাই স্বাভাবিক। কষ্ট করে দোকানে এসে কার্ড ক্রয় করে আবার বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দেয়া তাদের কাছে কষ্টসাধ্য।