রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বিএনপির লংমার্চ: তিস্তায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধি

tista photo_91252

বিএনপির তিস্তা অভিমুখে লংমার্চকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দেশের সর্ববৃহত সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পানিতে টই টুম্বুর। তিস্তা নদীতে উজান থেকে ঢল নেমেছে। শুকিয়ে থাকা তিস্তায় হু-হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নব যৌবনে ফিরে আসছে তিস্তা নদী। নদীজুড়ে চলছে স্রোত ধারা। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্ট উজানের পানি প্রবাহের গড় হিসাব ছিল ৩ হাজার ৬ কিউসেক। বেলা ৩টায় এটি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিউসেকে এসে দাঁড়িয়েছে। তিস্তার ব্যারাজের সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় কৃষকরা ভরপুর পানি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি আগে লংমার্চ করলো না কেন? তাহলে এই পানি আমরা আগেই পেতাম। গত ২৭মার্চ থেকে বামদলগুলোর তিস্তার পানির দাবী লংমার্চ, রোর্ডমার্চ ও তিস্তা মার্চ কর্মসূচী পালন করে আসছে। বুধবার তিস্তা হ্যালিপ্যাড মাঠে বিএনপির লংমার্চের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। লংমার্চ বিএনপি যাতে তিস্তাকে কেন্দ্র করে টানিং পয়েন্ট নিতে না পারে সে জন্য ভারত সরকার তিস্তা নদীতে পানি দিয়েছেন মর্মে জানায় বিএনপির স্থানীয় নেতারা।পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানায় গত বছরে এ সময় তিস্তায় সাড়ে তিন হাজার কিউসেক পানি পাওয়া গিয়েছিল। এ বছর ঠিক একই সময় সেই পরিমান পানি এসেছে। তিস্তাপাড়ের ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর চরের নৌকার মাঝি হারুন শেখ (৪০) জানান, একদিন আগে নদীতে গোসল করার মতো পানি ছিল না। এক্কেবারে হঠাৎ করে তিস্তা নদীতে যেন জোয়ার শুরু হয়েছে। এ জোয়ারে তিস্তা ফুলে ফেপে উঠছে। প্রধান খাল, শাখা খালে পানিতে ভরে গেছে।মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায় উজান থেকে তিস্তা নদী বাংলাদেশের প্রবেশ পথ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্টে দিয়ে স্রোতধারায় হু-হু করে পানি আসছে। যা দ্রুত প্রবাহে চলে যাচ্ছে ভাটির দিকে। কয়েক দিন আগেও নদীর বুকে যে ধু-ধু বালুচর দেখা গেছিল, তা যেন নিমিষেই নদীর পানিতে চাপা পড়ে যাচ্ছে। নদীর কুল কিনারা ভরে উঠছে ধীরে ধীরে।ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, চলতি মৌসুমে তিস্তার পানি কমতে কমতে দাঁড়িয়েছিল ৫০০ থেকে ৩০০ কিউসেকে। অথচ এ নদীতে স্বাভাবিকভাবে গড়ে পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার কিউসেক পানি থাকা প্রয়োজন। গত ১৩ এপ্রিল থেকে ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বাড়তে শুরু করে। এতে একপর্যায়ে পানির পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার কিউসেক থেকে ১ হাজার ২শত কিউসেক পর্যন্ত। এ অবস্থা চলে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত।এরপর রোববার পানি নেমে আসে ৬৮৮ কিউসেকে। সোমবার সেই পানি ১৪২ কিউসেক বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮৩০ কিউসেকে। মঙ্গলবার তিস্তার পানি ২ হাজার ১৭৬ কিউসেক বৃদ্ধি পেয়ে দুপুর ১২টায় পানি উন্নয়ন বোডের হাইড্রোলিক বিভাগ পরিমাপ করে পানি পায় ৩ হাজার ৬ কিউসেক। বেলা ৩টায় সেই পানি আবার বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৩ হাজার কিউসেকে দাঁড়ায়। ধারনা করা হচ্ছে তিস্তার পানি যে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা ৫ হাজার কিউসেকে পৌছতে পারে।এদিকে হঠাৎ করে তিস্তার পানি হু-হু করে বৃদ্ধির বিষয়টি অবাক করে দিয়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে। তিস্তার পাড়ের আবুল কাশেম জানায়,তিস্তা নদীকে যখন দেখি শুকায়ে যায় তখন হারিয়ে যাওয়া জমিজিরাত বালুর চরে চোখে পড়ে বুকটা খাঁ-খাঁ করে উঠে। পুর্ব ছাতনাই গ্রামের হারুন-অর রশিদ জানায়, ২১ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ শুনতে পাই তিস্তা নদী থেকে শব্দ ভেসে আসছে। অবাক হয়ে ছুটে যাই নদীর পাড়ে। দেখতে পাই উজান থেকে তিস্তার পানি শো-শো শব্দে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো লং মার্চ করায় ভারত সরকারের জ্ঞান হয়েছে বলে তিস্তায় পানি এসেছে। সরকারের আগেই উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, এবার খরিপ ১ মৌসুমে ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু সেচ দেয়া যায় ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টরে। তিনি বলেন গত ১৩ এপ্রিল থেকে তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে দেড় হাজার কিউসেকের উপরে চলে যায়। ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার কিউসেকের উপরে চলে যাওয়ায় সেচখাল ভরিয়ে দেয়া হয়েছে।

উৎস- যুগান্তর