মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার যেমন চলার কথা তেমনি চলছিল।
বাবা বিদেশে মোটামুটি সংসার চলার মত চাকুরী করতো। তাই সংসারের পরিচালনা দায়িত্ব ছিল মায়ের উপরই।
সব সময় যে ভাল যাবে তাও কিন্তু নয়।
কয়েকমাস ধরে পরিবারের আর্থিক অবস্থা বলতে গেলে প্রচন্ড খারাপ।
শখ ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াবে।
সরকারীতে পড়তেও কপাল লাগে।
সব কপালের দোষ দিলেও হয়না। যাক সেই কথা।
ছেলেকে শখ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে দিল।
প্রতি সেমিস্টারে মোটা অংকের বেতন দিতে কোন সমস্যা হতনা আগে।
সেমিস্টার টাকা দেওয়ার সময় হয়েছে।
কিন্তু এদিকে মা বাবার সেটা মনে নেই।
কিভাবে মনে থাকবে এ অভাবে।
আর ছেলে বললে তো তাদের স্মরণ হবে তাই না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নোটিশ দিল বেতন দেওয়ার।
কিন্তু পরিবারের এ অবস্থা দেখে সে কিছু বলেনি।
ভাবছিল আরো কিছুদিন যাক তবেই বলবে।
এভাবে অনেকদিন চলে যায়। আর এদিকে বেতন জমা দেওয়ার নিদির্ষ্ট সময় শেষ হয়ে গেছে। জরিমানায় টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে।
এদিকে দুঃচিন্তা বেড়ে যায় তার। না পারছে মা কে বলতে। আর এতটাকা জোগাড় করাও সম্ভব না।
স্বাভাবিক এত টাকা কার থেকেই পাবে !
এ চিন্তা যেন তাকে অস্থির করে তুলেছে।
এদিকে জরিমানার টাকা বেড়েই যাচ্ছে।
কাল জরিমানা সহ বেতন জমা দেওয়ার শেষ দিন।না হয় পরীক্ষার প্রবেশ পত্র দেওয়া হবেনা।
কিন্তু এখনো টাকার জোগাড় হলনা তার।
পরিবারের এ অবস্থা সে না পারছে মা কে সব কিছু বলতে।
অনেক চেষ্টা করেছে বন্ধুদের থেকে টাকার ব্যবস্থা করতে কিন্তু হলনা।
চিন্তায় চোখের ঘুম যেন উড়ে গেল।
সারা রাত জেগেই ছিল বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে।
সকাল হল আজ শেষ দিন বেতন জমা দেওয়ার।
আর কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে মাকে সব খুলে বলল সে।
মা শুনে বলে
-এতদিন হয়ে গেল তুই আমাকে বললি না কেন?
-মা! আসলে ঘরের এ অবস্থা।আমাকে কিভাবে বলব বল?
-আচ্ছা আমি দেখি কি করা যায়।
মা ঘর থেকে বের হয়ে পাশের এক প্রতিবেশী থেকে ধার করে নিয়ে আসল টাকা।
সে হাতে টাকা পেয়ে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলনা।
মা বলে -শুন। মা বাবা থেকে কখনো কিছু লুকাবিনা । যত রকম সমস্যা হোক সব কিছু শেয়ার করবি।
দেখছস তো বিপদে কে আসল !
মা বাবা সন্তানের পরম বন্ধু।
বিজয় দে, কবি, গল্পকার, হাটাহাজারী, চট্টগ্রাম।