শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

নীলক্ষেতে বই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাবির ছাত্রদের সংঘর্ষ, আহত ১৪

pic-16_72335
বইয়ের দাম নিয়ে তর্কবিতর্কের জের ধরে গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর নীলক্ষেত বই দোকানিদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি দোকান ও যানবাহন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ কয়েক দফা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে অন্তত ১৪ ছাত্র আহত হন।
আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের নুর হোসেন, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির আহমেদ, বাংলা বিভাগের আবু সায়েম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিমুল আহমেদ, শাহাদাত হোসেন, এফ রহমান হলের আব্দুল আলীম এবং ওই হলের ক্যান্টিন ম্যানেজার বাবুল হোসেন। গত রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাকিদের নাম জানা যায়নি।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বইয়ের মূল্য কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে দোকানির সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন ঢাবির কয়েকজন ছাত্র। তাঁরা আরো শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে দোকানিকে মারধর করেন। পরে বই ব্যবসায়ীদের পাল্টা আক্রমণে উভয় গ্রুপে সংঘর্ষ বেধে যায়। প্রায় ৪০ মিনিট এই সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে।
শিক্ষার্থী ও দোকান মালিক, উভয় পক্ষের বক্তব্য থেকে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র নুর হোসেন নীলক্ষেতের ইসলামিয়া মার্কেটের সোনিয়া বুক সেন্টারে বই কিনতে যান। এ সময় বইয়ের দাম কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর সঙ্গে দোকানির তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে নুর ফোন করে তাঁর বন্ধুদের ডেকে নিয়ে দোকানদারকে মারধর করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসছিলেন। এ সময় ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে ছাত্রদের ধাওয়া দেন। পেছন থেকে দুই ছাত্রকে ধরে নিয়ে গেছে- এমন গুজব ক্যাম্পাসে ও হলে ছড়িয়ে পড়লে প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্র নীলক্ষেত মোড়ের দিকে গিয়ে রাস্তার ধারে অবস্থিত বই ও ফলমূলের দোকানে ভাঙচুর চালান এবং রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় ছাত্ররা কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা শিক্ষার্থীদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। ইটের আঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আহত হন ও কয়েকজন মাথায় গুরুতর আঘাত পান। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ আলী, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ঘটনার পর নীলক্ষেত মার্কেট বন্ধ করা হয়েছে। মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত মার্কেট বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই মার্কেটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বৈঠক চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বলেন, ‘বই কেনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নীলক্ষেত বই দোকানিদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র আহত হয়েছে। বই দোকানিদের সঙ্গে বসে মীমাংসার চেষ্টা চলছে।’ বিকেলে নীলক্ষেত ফাঁড়ির ইনচার্জ সাহেব আলী বলেন, ‘বইয়ের দাম নিয়ে কথাকাটাকাটির পর সংঘর্ষ হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’ রাতে নিউ মার্কেট থানার ওসি ইয়াছির আরাফাত বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ ও ধাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কোনো পক্ষ মামলা করেনি। বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা চলছে বলে জেনেছি।’

– See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/04/13/72335#sthash.qQ3WVjtn.dpuf