রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

নিজামী-সাঈদীর রায় ঘিরে সরকারের তৎপরতা

24772_b3

জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার রায়কে ঘিরে বেশ তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। কঠোর অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এই ইস্যুতে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় জামায়াত-শিবিরের প্রতি আবারও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহল। এজন্য বেশক’টি জেলায় ইতিমধ্যে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। প্রায় প্রতিদিন চলছে ধরপাকড়। গত এক সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। উপজেলা নির্বাচনের সাম্প্রতিক সাফল্যের রেশ না কাটতেই এই গ্রেপ্তার অভিযান মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের অস্থির করে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর এই দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণার অপেক্ষায়। তাই বিচারের রায়ের আগে ও পরে সম্ভাব্য সব ধরনের সংঘাত, সহিংসতা ও নাশকতা ঠেকাতে সরকার শক্ত অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে জামায়াত-শিবিরের মাঠপর্যায়ে সক্রিয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। এ সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রতিটি রায়ের পরেই বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে মহানগর থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জামায়াতের সক্রিয় কর্মী এবং দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এজন্য জামায়াত অধ্যুষিত ১৮ থেকে ২০টি জেলা বাছাই করা হয়েছে। ওই জেলাগুলোর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী সমর্থকদের রাখা হয়েছে কড়া নজরদারিতে। সূত্র মতে সরকারের এই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় সোমবার চট্টগ্রামের ২১ জন জামায়াত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর এবং সাবেক এমপি এএনএম শামসুল ইসলাম আছেন। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর জুলুম, নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার অব্যাহতভাবে চলছে। এসব হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ ও গণগ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে অব্যাহতভাবে প্রতিবাদ জানানো সত্ত্বেও সরকার তা অগ্রাহ্য করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর অব্যাহতভাবে জুলুম-নির্যাতন চলাচ্ছে। বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর আবদুুল লতিফকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ১৪ জন নেতা-কর্মীকে, নোয়াখালীতে ২ জন, কিশোরগঞ্জে ৪, টঙ্গীতে ৩ জন নেতা-কর্মীসহ সারা দেশে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর গ্রামের জামায়াত কর্মী রুস্তম আলীকে বুধবার নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চিহ্নিত জেলাগুলোর জামায়াত-শিবির কর্মীদের ওপর অনেক আগে থেকেই চোখ রাখতে শুরু করেছে সরকার। সময়ের প্রয়োজনে সামনের দিনগুলোতে বিশেষ করে মাওলানা নিজামী ও মাওলানা সাঈদীর রায় উপলক্ষে এই নজরদারি আরও বাড়িয়ে দেয়া হবে বলে সূত্র জানায়। সরকারের নজরদারির জন্য তালিকাভুক্ত জেলাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, দিনাজুর কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, বগুড়া, যশোর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর উল্লেখযোগ্য। এই জেলাগুলোকে জামায়াতের সহিংতার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজেও ওই দলগুলোতে তাদের নেতাকর্মীদের প্রতি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং নাশকতার ঘটনা প্রতিহত করার জন্য মাঠে থাকতে বলে দিয়েছে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংবাদ মাধ্যমকে জানান, যে কোন ধরনের আন্দোলনের মুখোমুখি হতে পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত। তিনি বলেন, সাঈদীর রায়ের পর যেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না- এমনটা আমরা বলছি না। কিন্তু এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার, সেগুলো আমরা নিয়েছি। গত বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে জামায়াত যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। ওই রায় প্রকাশের পরবর্তী সাত দিনে দেশজুড়ে ৬৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন কয়েক শ’। সাঈদীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাজার রায়ের আপিল শুনানি এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। বর্তমানে মামলাটি রায়ের অপেক্ষায় আছে। এছাড়াও, জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী এবং দলের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মীর কাসেম আলীসহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধের মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের অপেক্ষায় আছে। যে কোন সময় এসব মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হবে। এ ব্যাপারে দলটির মজলিসে শূরার সদস্য ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব ও পুলিশকে দিয়ে বিরোধী পথ ও মতের মানুষকে খুন, গুম ও অপহরণ করে সরকার প্রকারান্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। এই অপরাধের বিচার জনগণ একদিন অবশ্যই করবে।