বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

দিতির শেষ দিনগুলি…

2016_03_20_20_32_05_kKgZQuIBd6IzXTTGE5PvWtQMZeBO1W_original

খবরিকা ডেস্ক:

২০১৫ সালের শুরুটা বেশ ঝকঝকে ছিলো। মুঠি মুঠি আনন্দে পূর্ণ ছিলো দিতির দিনগুলি। নিজে নিজেই সদাই পাতি করতেন। রুটিন করে রান্না করতেন। ঘরদোর নিজের হাতে সাজিয়ে তুলতেন। আর কলটাইম হলেই দৌড় দিতেন শুটিংয়ে। খুব ব্যস্ত জীবন ছিলো তার। ব্যস্ততা থেকে ছুটি পেলেই কাছের মানুষদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন। মাতিয়ে রাখতেন শুটিং সেট। মুহুর্তেই হয়ে উঠতেন আড্ডার মধ্যমণি। সারাক্ষণই ঠোঁটের কোণে লেগে থাকতো চিরচেনা সেই হাসিটা। কিন্তু হঠাৎ সেই প্রানোচ্ছল হাসিটা মলিনতায় ঢেকে যেতে থাকে। দিনে দিনে আড্ডা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া শুরু করেন। কি এক বিষন্নতায় কুড়ে কুড়ে খায় তাকে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে খুব একটা আমলে নেননি। কিন্তু শরীরটা একসময় বিদ্রোহ শুরু করে। ছেলে-মেয়ের জোরাজুরিতে গেলেন ডাক্তারের কাছে। রিপোর্ট ঘেঁটে ডাক্তাররা জানালেন, মস্তিস্কে ক্যান্সার! ভয়ংকর সংবাদ। আকাশ ভেঙে পড়লো তার মাথায়। কিন্তু নিজে ভেঙে পড়েননি। আশায় আশায় বুক বেধেছিলেন, সুস্থ হবেন। আবার আড্ডা দেবেন। নিজের হাতে বাজার সদাই করে রান্না করবেন। ছেলে-মেয়েদের খাওয়াবেন।

চিকিৎসা শুরু হলো। কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি নেই। ঢাকা থেকে উড়াল দিলেন চেন্নাইয়ে। ভর্তি হলেন মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজিতে। ছায়ার মতো সঙ্গে ছিলেন ছেলে লামিয়া ও দীপ্ত। হাসপাতালে শুরু হলো দিতির জীবনের নতুন এক অধ্যায়। রুটিন ধরে ধরে চলতো কেমোথেরাপি। কেমো বড্ড যন্ত্রণা দিত তাকে। কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় একসময় তার দীঘল কালো চুলগুলো ঝরা শুরু হয়। চুলগুলো না ফেলে পরম যত্নে ব্যাগে পুরেছিলেন দিতি। সেগুলো দিয়ে দুটো উইগ বানাতে চেয়েছিলেন।

দিতির মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ফেসবুকে জানিয়েছিলেন,  ‘চুল যখন ঝরে পড়তে শুরু করলো , তখন তিনি সেগুলো একটি ব্যাগে জমাতে শুরু করলেন। চুল নিয়ে তার কোন চিন্তায় ছিলোনা। চিকিৎসকরা মাঝে মধ্যে চমকে যেতেন।’

2016_03_20_20_22_28_2mrAW6G96LD5ce38bX224ZiATguKF3_original

হাসপাতালটাকে তখন খুব একঘেয়ে লাগতো তার। চার দেয়ালে বন্দি চড়ুই পাখির মতো ছটফট করতেন। ডাক্তারদের কাঁচির নিচে নিজেকে সঁপে দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। মাথায় ছিলো কাঁটাছেড়ার দগদগে দাগ। দাগটা মাথা থেকে বাসা বেঁধেছিল মনেও। পড়ন্ত বিকেলে ছেলে-মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে বিছানা ছেড়ে হাসপাতালে ব্যালকনিতে দাড়াতেন। ব্যালকনিটা ছিলো তার কাছে কাঁটাতার। এর বাইরে যাওয়ার শক্তি কিংবা সামর্থ্য কোনটায় নেই। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে আস্তে আস্তে হাঁটতে শুরু করলেন। এক পা দু’পা করে নিজে নিজেই হাঁটতে পারতেন। ছেলে-মেয়েরা তো আনন্দে আটখানা। শরীরে বল পাচ্ছেন দিতি। উন্নতি হলো শরীরের। অনেকটা সুস্থ হওয়ার পর মাসখানেক পারে ডাক্তারি নির্দেশনায় ঢাকায় আনা হয় তাকে। বিশ্রামে ছিলেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কথাও বলেছেন তখন।

eeeee

তখন বাংলামেইলকে জানিয়েছিলেন, ‘হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই মনে পড়েছে। আর সেগুলো আমার মুখ থেকে শুনে একটি স্ক্রিপ্ট লিখেছে লামিয়া। যা আমার আত্মজীবনীই বলা যেতে পারে। সুস্থ হয়ে, এটা নিয়ে একশ পর্বের নাটক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি এর কাজ শুরু করব।’

ঢাকায় ফিরে ভালোই চলছিল দিনকাল। কিন্তু মাসখানেকের মাথায় দ্বিতীয় দফায় ফের অসুস্থ হয়ে পরেন। ফের নেয়া হয় চেন্নাই। শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে আইসিইউতে রাখা হয়। একটা সময় রোগটা চিকিৎসকদের নাগালে বাইরে চলে যায়। ডাক্তাররা তার ফেরার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কোন উপায় না দেখে ঢাকায় ফিরে আনা হয় তাকে। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখা হয়।

2016_03_20_20_51_06_nbkmvJj2YOqfhiWHZrnAF0Z73BLgHY_original

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভার্চুয়াল জগতে মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি বেঁচে আছেন। সেই ঘটনার দেড় মাসের মাথায় সত্যি সত্যিই তিনি পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিলেন। প্রায় একবছরের হাসপাতাল জীবনকে পাশ কাটিয়ে প্রবেশ করলেন ভিন্ন এক জগতে। যে জগত থেকে কেউ আর ফেরেনা এইখানে…

 

খবর: বংলামেইল২৪.কম এর