সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ঢাকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য নরেন আবৃত্তি একাডেমির প্রযোজনা মঞ্চায়ন

147256 14718858_1287855194566650_5120506954863765739_n
চট্টগ্রামের স্বনামধন্য আবৃত্তি চর্চা প্রতিষ্ঠান নরেন আবৃত্তি একাডেমির আয়োজনে ১৪ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ঢাকার স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে পরিবেশিত হয় কাব্যপালা “কাঁদে বাংলা, কাঁদে মাটি” ও কাব্যনাটক “অমাবস্যা”। নরেন আবৃত্তি একাডেমির পরিচালক মিশফাক রাসেলের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের দপ্তর সম্পাদক খোরশেদুল আলম। এরপর পরিবেশিত হয় কাব্যনাটক “অমাবস্যা” যা একজন এসিডদগ্ধ নারীর করুণ আত্মকাহিনী। গায়েন তার কাব্যের গড়নে বর্ণনা করে যান আম্বিয়ার কথা। দরিদ্র ঘরের গরীব চাষার মেয়ে আম্বিয়া যার নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তার উপর নজর পড়ল গ্রামের মহাজনের ছেলে সেলিমের। যার ধন সম্পদ ও ক্ষমতার কারণে গ্রামের মানুষ কেউ শ্রদ্ধা করে কেউ ভয়ে মানে। সমাজের এই শ্রেণিবিভেদের কথা চিন্তা করে আম্বিয়া সেলিমকে মানা করে দিলেও প্রতিদিন রাস্তা ঘাটে তার পথের বাঁধা থামাতে পারে না। অবশেষে তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় আম্বিয়া। সেলিম তাকে বিয়ে করার অঙ্গীকার দেয় এবং সব বাঁধা সত্ত্বেও তাদের ভালোবাসা গভীর হতে থাকে। এভাবে খুব সাধারণ এক ভালোবাসার গল্প গাঁথা হতে থাকে অমাবস্যা নাটকে। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা করেন প্রয়াত নাট্যজন শোভনময় ভট্টাচার্য। সমাজে বৈষম্য শোষণ শ্রেণিবিভেদ নিয়ে তৈরি এই নাটকে ভেসে আসে না শোনা শোষিতের চাপা কান্না ও পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের উপর অত্যাচার। সেলিম আম্বিয়ার সম্পর্কে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সেলিমের বাবা গ্রামের মহাজন। তিনি আম্বিয়ার বাবাকে হুমকিও দেন। সেলিমের সাহস বা ব্যাক্তিত্ব ছিল না তার বাবাকে রাজি করানোর ও আম্বিয়ার পাশে দাঁড়াবার। ওদিকে নিজের বাবার কথা ভেবে আম্বিয়া তার চাচাত ভাই সাইফুলের সাথে বিয়েতে রাজি হয়। কিন্তু সেলিমের অহংকার তাকে এই বিয়ে মেনে নিতে দেয় না। আম্বিয়াকে সে নিজের সম্পত্তি মনে করে আর কারো হতে না দেবার জন্য সে তার মুখ ঝলসে দেয় এসিডে। অর্থ-সম্পদের অন্ধ দম্ভে ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে এভাবে কত সেলিম মুখ ঢেকে দেয় কত আম্বিয়ার। আর এদের কান্না চাপা পড়ে যায় সুশীল সমাজের বন্দনায়। তাই জোট বেঁধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক হবার আহ্বান জানিয়ে শেষ হয় এই কাব্যনাটক। এতে অভিনয় করেন রিপন (গায়েন), সৈয়দ হোসেন বাবু (সেলিম), তোরসা (আম্বিয়া), সৌরভ (সাইফুল), সজীব (মহাজন), খলিল(চাষী) ও নরেনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। নাটকশেষে বক্তব্য রাখেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য বেলায়েত হোসেন ও রফিকুল ইসলাম এবং নরেন আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য বিশিষ্ঠ্য সংবাদ উপস্থাপিকা ফারজানা করিম এ্যানি ও বিশিষ্ঠ্য নাট্যজন খোরশেদুল আলম। অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল কাব্যপালা “কাঁদে বাংলা, কাঁদে মাটি”। পলাশপুর নামের ছোট্ট এক গাঁয়ের রঘুময়রার পঞ্চদশী কন্যা শ্রীলেখা। কুষ্টি মিলিয়ে শ্রীলেখার বিবাহের অনিশ্চয়তার কথা জানতে পেরে পিতা রঘুময়রা ও মা ননীবালার চিন্তার অন্ত নেই। অথচ কাজলকালো চোখের দুনিয়া সম্পর্কে উদাসীন শ্রীলেখা খুশি এই ভেবে যে তাকে তার বাবা-মাকে ছেড়ে কোথাও যেতে হবে না। হঠাৎ এক গ্রীষ্মের দুপুরে সখীর সাথে চলার সময় অজানা এক বাঁশির সুরে ব্যাকুল হয়ে ওঠে শ্রীলেখার মন। সুর খুঁজতে গিয়ে বাঁশিওয়ালা আর শ্রীলেখার হয় মন বিনিময়। এভাবেই এগুতে থাকে কাব্যপালার কাহিনী। বিশ্বে ক্রমবর্ধমান হিংসা-বিদ্বেষ আর ভেদাভেদের ফলে মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম মানবতা আজ বিপর্যন্ত। এই পরম সত্য একটি সরল কাহিনীর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে পালাটিতে। এটি রচনা করেন মোকাদ্দেম মোরশেদ ও নির্দেশনায় ছিলেন মিশফাক রাসেল। কাহিনীচক্রে রঘুময়রা ও ননীবালা সানন্দে বাঁশিওয়ালার সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হলে বাঁধ সাধে পঞ্চায়েত প্রধান বড়মিয়া। কেননা বাঁশিওয়ালা জামাল যে মুসলমান। জাত-বেজাতের দোহাই দিয়ে বাঁশিওয়ালাকে গ্রামছাড়া ও শ্রীলেখার পরিবারকে একঘরে করা হয়। একরাতে ভালোবাসার টানে শ্রীলেখা আর বাঁশিওয়ালা পালিয়ে যেতে গেলে ধরা পড়ে বড়মিয়ার লোকের হাতে। এরপর স্পষ্ট হয়ে ওঠে বড়মিয়ার চরিত্র। শ্রীলেখার উপর তার কুনজর পড়ে। সে তাকে জোর করে ধর্মান্তরিত করে ছোট বিবির সম্মানের লোভ দেখায়। শ্রীলেখা রাজি না হলে বাঁশিওয়ালাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। জামালকে বাঁচাতে শ্রীলেখা বিয়েতে রাজি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাজের ঘৃণ্য রীতি, ধর্মে ভেদাভেদ, বর্ণে ও জাতিতে বৈষম্য এসব দ্বন্দের করাল আঘাতে শ্রীলেখা বিষপান করে। এভাবেই ধর্মকে পুঁজি করে পঞ্চায়েতের বর্বর নীতির ফলে একটি প্রেমের ও একাধিক জীবনের নির্মম পরিণতি ঘটে। এতে অভিনয় করেন ইউসরা (শ্রীলেখা), রিপন (বাঁশিওয়ালা), ফাহাদ (শ্রীলেখার পিতা), স্বপ্না (শ্রীলেখার মাতা), কুহেলিকা (সখী), বাবু (বড়মিয়া), কথক হিসেবে মিতাশা মাহরিন, মিতু, জয়শ্রী, আনিকা ও তোরসা। এছাড়াও কাব্যপালা ও কাব্যনাটকে কোরিওগ্রাফিতে অংশগ্রহণ করেন কুহেলিকা, তোরসা, মাওয়া, আনিকা, জয়া, শিমলা এবং গ্রামবাসী হিসেবে ছিলেন অজয়, মহসিন, মং, সৌরভ, খলিল, আনিকা, দিদার, সজীব, মাওয়া ও শিমলা। পোশাক পরিকল্পনা ও কোরিওগ্রাফি পরিচালনায় ছিলেন মিতাশা মাহরিন, আবহ সঙ্গীত পরিচালনায় দিদারুল আলম, আলোক পরিকল্পনায় ফয়জুন।
-প্রেস বিজ্ঞপ্তি