শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ঢাকায় উৎসবের রাত শ্রীলংকার

1_85697

 

ভাগ্য আর কত প্রবঞ্চনা করবে। কতবার জয় দুয়ারে এসে ফিরে গেছে। কতবার সাফল্য ছলনা করেছে শেষ মুহূর্তে। কলম্বোয় কান্না হয়েছিল সাঙ্গাকারাদের সাথী। ঢাকা সেই কান্না মুছে হাসিতে ভরিয়ে দিল মালিঙ্গাদের। মিরপুর মঞ্চে রবিবাসরীয় রজনীতে উৎসবে মাতল শ্রীলংকা। এশিয়া কাপের পর এই শহর আবারও লংকানদের উপহার দিল আরেকটি শিরোপা। ফেভারিট ভারতকে ফাইনালে ছয় উইকেটে হারিয়ে টি ২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হল রানাতুঙ্গা, জয়সুরিয়ার দেশ। ভারতের ১৩০ বিজয়ীরা টপকে যায় ১৩ বল বাকি থাকতে। টুর্নামেন্টে ম্লান কুমার সাঙ্গাকারা সঠিক সময়ে জ্বলে উঠে নিজের বিদায় মঞ্চে আলো ছড়ালেন ৩৫ বলে হার না মানা ৫২ রান করে। থিসারা পেরেরা অপরাজিত থাকেন ১৪ বলে ২১ রান করে। দিলশান ১৮ ও জয়াবর্ধনে ২৪ রান করেন। একটি করে উইকেট নেন মোহিত শর্মা, অশ্বিন, অমিত মিশ্র ও রায়না।
এর আগে বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ভারত ২০ ওভারে চার উইকেটে ১৩০ রান করে। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি ৫৮ বলে ৭৭ রান করেন। দিনশেষে বিফলে যায় তার হাফসেঞ্চুরি।
মিরপুরেই ঘুচল লংকানদের ফাইনালের আক্ষেপ। গত সাত বছরে ওয়ানডে ও টি ২০ মিলিয়ে চারটি বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলে সাফল্যবিমুখ হয়েছিল শ্রীলংকা। সব হতাশা মুছে এবার ঢাকা থেকে ট্রফি নিয়ে যাচ্ছেন জয়াবর্ধনেরা। এর আগে মাত্র চার উইকেট পড়লেও অল-এশিয়ান ফাইনালে শ্রীলংকার সামনে বড়সড় একটি টার্গেট ছুড়ে দিতে পারেনি ভারত। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ধোনিরা করলেন সাকুল্যে ১৩০/৪। যেখানে কোহলি একাই করেছেন ৫৮ বলে ৭৭। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানের মালিককে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। ফলে কোহলি ঝড়ের পরও ১৩০-এ আটকে যায় ভারত। লংকানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ চার ওভারে মাত্র ১৯ রান তুলতে পারে ভারত। লড়াইয়ের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় খণ্ড লড়াই ছিল লাসিথ মালিঙ্গা ও বিরাট কোহলির মধ্যে। জমে ওঠার আগেই সেই লড়াইয়ে জেতার সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন লংকান অধিনায়ক। কিন্তু সুযোগটা হেলায় হারালেন মালিঙ্গা। মিডউইকেটে কোহলির লোপ্পা ক্যাচটা হাতে জমাতে পারলেন না। বোলার রঙ্গনা হেরাথের মাথায় হাত। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে পাওয়া নব জীবনটা ওই ওভারের শেষ বলে বিশাল এক ছক্কা মেরে উদযাপন করলেন কোহলি। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন ভারতের পোস্টার বয়। ভারতের স্কোর তখন ৪১/১।
এর আগে কুলাসেকারার প্রথম ওভার থেকে এসেছিল ৪ রান। দ্বিতীয় ওভারেই শ্রীলংকাকে সাফল্য এনে দেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। আজিংকা রাহানেকে (৩০) সরাসরি বোল্ড করে ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পাশাপাশি ওই ওভারে মাত্র এক রান দেন ম্যাথিউস। রোহিত শর্মার সঙ্গে জুটি বেঁধে ইনিংস মেরামতের দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন কোহলি। কিন্তু লংকানদের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে মাত্র ৩১ রান তুলতে পারে ভারত। ৫০ পার হতেই ৫৪ বল লেগে যায় ভারতের। দশম ওভারে ম্যাথিউসকে তুলোধুনা করে ১৪ রান তুলে নেন কোহলি ও রোহিত। দশ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ৬৪/১।
হেরাথের করা একাদশ ওভারের তৃতীয় বলে রোহিতের (২৯) বিদায়ে ভাঙে ৬০ রানের জুটি। জায়গা করে নিয়ে মারতে চেয়েছিলেন রোহিত। কিন্তু পারেননি। শর্ট কাভারে সহজ ক্যাচটি লুফে নিতে ভুল করেননি সচিত্র সেনানায়েকে। এরপর রানের গতি বাড়াতে বেপরোয়া শট খেলতে বাধ্য হন কোহলি। কারণ অন্য প্রান্তে প্রতিটি রানের জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছিল যুবরাজ সিংকে। ১৪তম ওভারে মালিঙ্গাকে চার মেরে ৪৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন কোহলি। যুবরাজের ঘুমপাড়ানি ব্যাটিংয়ে সেনানায়েকের পরের ওভার থেকে আসে মাত্র দুই রান। ১৬তম ওভারে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেন কোহলি। কুলাসেকারার লাইন-লেন্থ ভুলিয়ে তুলে নেন ১৬ রান। ভারত পেরিয়ে যায় ১০০। ১৯তম ওভারে সেই কুলাসেকারাই মুক্তি দেন যুবরাজকে। ফুল টস বলে লং-অফে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নিজেকে হারিয়ে খোঁজা ভারতীয় অলরাউন্ডার। ২১ বলে ১১ রান করে। অধিনায়ক এমএস ধোনিও শেষ দিকে ঝড় তুলতে পারেননি। সাত বলে ৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। শেষ বলে রানআউট হওয়া কোহলির আরেকটি অনবদ্য ইনিংসই ভারতকে এনে দেয় ১৩০ রানের মাঝারি পুঁজি। ৫৮ বলে পাঁচ চার ও চার ছয়ে ৭৭ করেন কোহলি। শ্রীলংকার পক্ষে একটি করে উইকেট নেন ম্যাথিউস, কুলাসেকারা ও হেরাথ। বৃষ্টির কারণে কাল ৪০ মিনিট দেরিতে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে খেলা শুরু হয়েছিল। অপরিবর্তিত দল নিয়েই মাঠে নামে ভারত। শ্রীলংকার একটি পরিবর্তন ছিল। সেকুগে প্রসন্নার জায়গায় ফাইনালে খেলেছেন থিসারা পেরেরা।