শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী ও ক্ষুদ্র ঋণ দানের উদ্যোক্তা মরহুম ফয়েজ চৌধুরীর ৪২তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিনিধি :: বারইয়াহাট পৌরসভার উত্তর সোনাপাহাড় চৌধুরী বাড়ীর মুক্তিযুদ্ধকালে আহত ও অসুস্থ্ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবাদানকারি, সমবায়ী ও ক্ষুদ্র ঋণ দানের উদ্যোক্তা চৌধুরী বাড়ির মো: ফয়েজ চৌধুরীর ৪২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত ।
সমাজের মানুষের কল্যাণে মীরসরাইয়ের একজন চিকিৎসক ও কৃতি সমাজসেবক ছিলেন। তিনি অত্যান্ত মেধাবী ও বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি একাধারে স্বনামধন্য ও বহুবার পুরষ্কৃত স্কুল শিক্ষক, কলকাতা পিওর হোমিও কলেজ থেকে কোয়ালিফাইড হোমিও ডাক্তার, গভীর অর্ন্তজ্ঞান সম্পন্ন আলেমে দ্বীন, ব্যবসায়ী, সমবায়ী ও আধুনিক পদ্বতির চাষী ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ চলাকালে তিনি মিত্র শক্তির পক্ষে মীরসরাইয়ের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত হোম গার্ডেস ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের শিক্ষকতা চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় ব্রত ছিলেন। সে সময় তিনি বুলেটের গর্ত/ক্ষত নিরাময় কল্পে অব্যর্থ একটি মলম তৈরি করেছিলেন, যাতে স্বাধীনতাত্তোর কালেও বহু আহত ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা উপকৃত হয়েছেন। নারী রোগের চিকিৎসায় তিনি একজন পথিকৃত ছিলেন। যে যুগে নারী ডাক্তার অপ্রতুল ছিল এবং নারীগণ ডাক্তারের নিকট যেতেন না এবং রোগের বর্ননা দিতেন না ফলে অকাল মৃত্যুবরণ করতেন যে যুগে তিনি তার এক বোনকে ডাক্তারী শিখিয়ে নারী রোগ নির্নয় ও চিকিৎসা সেবা দিতেন।
তিনি তাঁর সকল পেশায় প্রজ্ঞা মেধা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে অত্যান্ত জনশ্রতি, জনপ্রিয় এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর বশত বাড়ি, স্বাধীনতা পূর্ব বারিয়ারহাট বাজারের বৃহত্তম গ্লোসারী শপ এবং হোমিও ডাক্তার খানা হানাদারের লেলিহান আগুনে হারিয়ে সর্বশান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেন। অবশেষে এই কর্মবীর মানুষ ১৯৮১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ৬ সন্তান সহ অনেক আত্বীয় স্বজন এবং অসংখ্য গুনগ্রাহি ছাত্রছাত্রী রেখে যান।
যারা কর্মজীবনে অত্যান্ত প্রতিষ্ঠা পেয়েও তাঁর সান্নিধ্য পেতে ও পদধুলি/দোয়া নিতে আলিস্য করতেন না। বরং নিজেদেরকে ধন্যমান মনে করতেন। মরহুম ফয়েজ চৌধুরীর আওলাদদের মধ্যে এনামুল গোফরান চৌধুরী দেশের বৃহত্তম শিল্প গ্রুপে একজন কর্পোরেট লিডার ছিলেন। তাঁর কন্যা ইঞ্জিনিয়ার রাহমুমা চৌধুরী এবং পুত্র ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ আরিফ চৌধুরী (পি এইচ ডি) আমেরিকায় পেশাগত জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর অন্যান্য পৌত্র পৌত্রিগণ বিসিএস ক্যাডার সহ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ব্যাংকার আর্মি ও পুলিশ অফিসার, ব্যবসায়ী প্রভূতি বহুবিধ পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত।
জনাব ফয়েজ চৌধুরীর প্রয়ানের পর ৪২ বছর যাবত তাঁর রেখে যাওয়া বর্তমানে ৪ প্রজন্মের আওলাদগণ এবং তাঁর গুনগ্রাহী স্বজন ও গুরুশ্রদ্ধাভাজন শিক্ষার্থীরা নানা আনুষ্ঠানিকতায় তাঁকে স্বরণ করেন। ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। এবারো এর কোন ব্যত্যয় হয়নি। এবারের দিবসটি পালিত হয় গত ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে।