শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

দু:সময়ে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়ে খুঁজলেও যাদের পাওয়া যায় না, দলে তাদের দরকার নেই : ওবায়দুল কাদের

খবরিকা রিপোর্ট ।। আওয়ামী লীগে বসন্তের কোকিল আর মৌসুমী পাখির দরকার নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার দলে কোনো অনুপ্রবেশকারীর স্থান হবে না। কারণ যখন দুঃসময় আসবে তখন হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বেলেও এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাকান মঞ্চের দিকে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ, অভিন্ন। আপনারা ওখান থেকে টুকটাক এটা-সেটা করবেন, ওইদিন চলে গেছে। এটা আর করতে দেয়া হবেনা। চট্টগ্রামের সবাই আজ এক মঞ্চে।এটাই আওয়ামী লীগ। শপথ নিন- ‘এই ঐক্য বাস্তবে দেখিয়ে ছাড়ব, নেতারা সব এক।’ তিনি বলেন, আমাদের শক্তির উৎস, শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস এদেশের জনগণ। বিদেশি শক্তি আমাদের বন্ধু হতে পারে, আমাদের ক্ষমতার নিয়ামক হতে পারে না।
গত শনিবার ( ১২ নভেম্বর) নগরীর লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া চট্টগ্রামের নেতাদের সংবর্ধনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এ সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে। ওবায়দুল কাদের এমন বক্তব্য দিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় জানতে চান, ‘হাছা কইলাম নাকি মিছা কইলাম।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম ও দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের পরিচালনায় নিজের বক্তব্যের শুরুর দিকে শ্লোগান চলতে থাকলে ক্ষুব্ধ ওবায়দুল কাদের বলেন, শ্লোগান বন্ধ করেন। দল করলে দলের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না তাদের দলে থাকার কোন অধিকার নেই। এদের কাউকে ছাড়ব না। গুটিকয়েকের জন্য গোটা দলের বদনাম হতে পারে না। তাদের দল থেকে বের করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এভাবে দল চলতে পারেনা। কেউ অপকর্ম করলে ছাড় দেয়া হবে না বলেও নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ঠিক হয়ে যান, অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। কাউকে ছাড়া হবে না। শেখ হাসিনার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ব্যানারে-বিলবোর্ডে আমার ছবি দেখতে আসিনি। আমি এই চট্টগ্রামে আমার নামে তোরণের শোভা দেখতে আসিনি। কারণ আমি জানি ফুলের মালা শুকিয়ে যাবে, কাগজের ফুল আর পোস্টারের ছবি ছিঁড়ে যাবে, তোরণের ছবি ভেঙে যাবে, পাথরের ছবি ক্ষয়ে যাবে। কিন্তু হৃদয়ের কথা রয়ে যাবে।
নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধু-জনগণের হৃদয়ে নাম লিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও জনগণের হৃদয়ে নাম লিখেছেন। এই নাম কোনদিন মুছে যাবে না। ফুল-বিলবোর্ড-তোরণের ছবি নয়, ওই ছবি দেখিয়ে লাভ নেই। হৃদয়ে ছবি দেখান, এই নাম রয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমি বাংলার অজগাঁ, তৃণমূল থেকে বেড়ে উঠা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক। আমি শেখ হাসিনার হাতে গড়া দলের কর্মী। আমি আপনাদের কাছে আজ নেতাগিরি করতে আসিনি। আমার নামে শ্লোগান বন্ধ করুন। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাকে খুশি করার দরকার নেই। আমাকে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা খুশি করেছেন। আমার দায়িত্ব জনগণকে খুশি করা। নেতাদের খুশি করে লাভ নেই, জনগণকে খুশি করুন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামবাসীকে বার্তা দিতে এসেছি ২০১৯ সালের মধ্যে চট্টগ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে যাবে। গভীর সমুদ্র বন্দর হবে। সীতাকুণ্ড-কক্সাবাজার আরেকটা মেরিন ড্রাইভ হবে। বিমানবন্দর থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত আরেকটা উড়াল সেতু হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে, আগামী বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হবে।
চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাঙামাটির সাবেক সাংসদ দীপংকর তালুকদার । কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীতে স্থান পাওয়া সাবেক সাংসদ ইছহাক মিঞাও বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রফেসর ড.অনুপম সেন এবং প্রফেসর ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও ডা.দীপু মণি, চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ও খুলনা বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ভূমি প্রতিমন্ত্রী ?সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ মরক্কোয় জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেয়ায় তিনি সংবর্ধনা সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি।
সমাবেশে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের জন্য বড় চমক দিয়েছেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে। আমরা যারা সংগঠনকে ভালবাসি, আমাদের নেত্রীকে ভালবাসি, আমাদের সবাইকে নেত্রীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি মেধাবী তরুণদের দলে নিয়ে আসছেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন-দলে ‘আমি লীগের’ কোন স্থান নেই,। আমাদের সকলকে আওয়ামী লীগ করতে হবে। একা একা আওয়ামী লীগ করা যাবেনা। সাংগঠনিক কাঠামো মেনে দল করতে হবে, আমাদের টার্গেট ২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচন।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার-এই চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের সংগঠনকে দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমাকে। আমি বারবার আপনাদের সাথে দেখা করতে, কথা বলতে এই চট্টগ্রামে আসব। এই চট্টগ্রাম থেকেই আওয়ামী লীগের ঢেউ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-আওয়ামী লীগকে দেউলিয়া দল বলার জাবাবে- সমাবেশে মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, আপনি বলেছেন আওয়ামী লীগ দেউলিয়া দল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই মুহুর্তে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। এই দেশের যত অর্জন সব আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। বিএনপি আমলে ৫ বার এই দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের চারণভূমিতে পরিণত করেছিলেন। বাংলাদেশে বিএনপি এখন একটি অভিশপ্ত দল। হানিফ বলেন, পাগলের মতো বিএনপির সুখ এখন মনে মনে।
সমাবেশ মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন-সাবেক মন্ত্রী ডাঃ আফছারুল আমিন এমপি, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, সামশুল হক চৌধুরী এমপি, এমএ লতিফ এমপি, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি, দিদারুল আলম এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, সাবিহা নাহার এমপি, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন।