শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

অনুগল্প # অস্থির চোখে চেয়ে দেখি তোমার শহর : পারভীন লিয়া


———০——-
এতটা বাড়াবাড়ি বিরক্তিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে যদি বোঝতে পারতাম, তাহলে তোমার দেশে নিরবে হাসি মুখে চলে আসতাম একটা প্লেনের টিকেট কেটে।
অন্তত একে অপরের আত্তার মাঝে নির্বিগ্নে আনন্দের আয়োজনে বেঁচে থাকার খেলা করতে পারতাম।
নিষ্ঠুর ভয়াবহতায় আজকাল ভয় লাগছে আমার মানুষের জন্য, প্রিয় আপনদের জন্য।
এখন আর মানুষ মানষের জন্য কথাটি খুব বেশি
কাজে আসে না কারণ ছোঁয়াচে মরণব্যাধি জানো তুমি। বিষন্ন বাতাসে, অন্ধকার সাদা কালো পৃথিবীতে এখন লাশের মিছিলে কত অচেনা মুখ তিন টুকরো সাদা কাপড়ে দাফন হয়ে যাচ্ছে ঐ মাটির কবরে নির্দয়ে।

রাতের অন্ধকার শুধু এখন রাতেই সীমাবদ্ধতায় নেই।
বাহিরের আলোয় কিবা আসে যায়, যেখানে আবদ্ধ জীবন বোবা তিমিরের গর্ভে। ফিরে এসো না এখানে।
কোন রকম বেঁচে থাকা মানুষগুলোর কান্না শুনতে পারবেনা তুমি। চারিদিকে অসহায় মানুষ পাগলের মতো অনিশ্চিত সামনের দিনগুলোর কথাও এখন ভাবতে পারেনা, প্রতিদিনের ক্ষুধার জ্বালায় কান্নার কষ্ট তুমি দেখোনি, পঁচা ডাসবিনে আজকাল পথ শিশুরা অস্থির খাবার খোঁজে। তুমি বলেছিলে আমার জন্য বড় গিফ্ট আছে, না না আমার কিছু চাই না বিশ্বাস করো ঐ সুখ আমাকে আর হাসাতে পারবে না আগের মতো। পারলে টাকা পাঠিও কিছু। সেই টাকা দিয়ে আমি অনেক খাবার কিনবো তারপর ছুটে যাবো কোন অন্ধকার বস্তিতে, কিংবা বরাবরের মতো কোন রাস্তার কোণে।

খাবারের পেকেট হাতে দিয়ে শিশুদের হাসি কিনতে আমার ভীষণ তৃপ্তি লাগে, তা তুমি জানো। মনে আছে ঈদের দিনে নিজে রান্না করে বের হয়ে যেতাম রমনা পার্কের সেই জায়গাটায়। গাড়ী ভর্তি খাবার চকলেট। নিয়ে বের হয়ে যেতাম তুমি আমার আনন্দ দেখতে আর হাসতে।
বাচ্চারা এক দৌড়ে আমার কাছে ছুটে আসতো? ড্রাইভার বেচারা মন খারাপ করতো কাজ শেষে অনেক টাকা দিয়ে যখন সুন্দর করে কথা বলে বিদায় দিতাম বউ বাচ্চার সাথে সময় কাটাতে। সেও একটা তৃপ্তির হাসি দিতো। আহা কত দিন মানুষের মুখে হাসি দেখি না।
আজ সব বদলে গেছে। মানুষের চোখে পানি দেখে তুমিও নির্বাক চোখে জল ঝরাতে, বাইরের হাহাকারের অসহ্য যন্ত্রণার বিভিশীখাময় মুহুর্ত তুমি দেখোনি। আমি দেখেছি বার বার। অসুস্থ্য ভয়ে মন কেঁদে উঠে। এখন রাতে ঘুমাতে পারিনা আগের মতো। তোমাকে বলা হয়নি কিছুই। তুমি চিন্তা করবে, রাগ করবে তাই।
তুমি জানো না। অসস্পূর্ণ কাজ আমার আর সম্পূর্ণ করা হবে কিনা জানি না। প্রতিদিন সূর্য্য ঠিক আগের মতোই উঠে, রোদ, গরম, শুধু জনহীন ব্যস্তহীন রাস্তার দিকে তাকালে বুকের মধ্যে কেমন যেনো করে উঠে।
প্রতিদিনের শব্দের কোলাহলে কানটা বধির হয়ে যাচ্ছিলো প্রায়, জানো তুমি আজ আমার শহরটা নিস্প্রাণ, কান্না জড়ানো হাহাকারে স্তব্ধ। ঠিক যেনো একটা নিশ্চুপ পাহাড়। ব্যাথাভরা, চিন্তার রোপন করা পৃথিবীর দেয়ালে স্বপ্নেরা অস্থির ফ্রেমে বন্দি।
প্লেন,গাড়ি, বাস, ট্রাক, রিকশা, ভ্যান, মানুষ, শব্দহীন থমকে গেছে আমার শহরটা।
তুমি জান না কত প্রিয় মানুষদের মুখ যেনো কত বছর ধরে দেখি না। কিছু প্রিয় মানুষ অসহায় হাত দিয়ে আমায় ডাকে অসুস্থ কাতরানো ছটফট হৃদয় যেনো মৃত প্রায়। তুমি কিছুই জান না, জানতে দেয়া হয়না তোমায়।
শিশুদের দম বন্ধ হওয়ার গল্পও তুমি জানো না, ওরা কান্না করতে করতে বন্ধ জানালা খোলে স্তব্ধ ঐ আকাশ দেখে আর বলে বাইরে যাবো, আমি বাইরে যাবো, মা আমাকে বাইরে নিয়ে যাও। আমার কানে প্রতিদিন শব্দ আসে কান্নার।
কখনো কখনো চাপ দিয়ে দুই কান চেপে ধরে রাখি । আহা নিশ্পাপ শিশুরা তো আর বোঝেনা কি হচ্ছে তার বেঁচে থাকার সুন্দর পৃথিবীতে। ভালো থেকো, ভালো থাকুক তোমার বেঁচে থাকার প্রিয় দেশ, প্রিয় শহর, নিরাপদে থেকো, ভয় পেওনা, আল্লাহ তোমার সাথে আছেন।
তুমি ভেবো না এইবার বেঁচে যদি যাই তোমার কাছেই আসবো, ভাঙ্গাচোড়া পৃথিবীটা তোমার চোখেই আবার দেখবো নতুনে…
পারভিন লিয়া, কবি ও গল্পকার।
[——–চলবে।]