বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

১৫ বছরের সাধনায় সাড়ে ৯ ফুট লম্বা চুল

0a495281aa80b98f44c949769d2a51cc

পলাশ মাহবুব ।।

মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ী জনপদ সাইবেনী খিল আদিবাসী পাড়ায় সন্ধান মিলেছে এক দীর্ঘকেশী নারীর। বিশ্বের দীর্ঘকেশী নারীদের কথা আসতেই নাম আসে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আশা ম্যান্ডেলা, চিনের যাই কুইপিং আর প্রতিবেশী দেশ ভারতের রেশমা কাম্বলের নাম। তাদের চুলের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ১৯ ফুট ছয় ইঞ্চি, ১৮ ফুট সাড়ে চার ইঞ্চি ও ৬ ফুট দশ ইঞ্চি। এসব দূরদেশের গল্প। অনেকের কাছে এসব রূপকথার গল্প বলেও মনে হতে পারে। বাংলাদেশে এমন একজনকে বাস্তবে দেখতে চাইলে যেতে হবে চট্টগ্রামের এই মীরসরাইতে।
৬০ বছর বয়সী কুলিরং ত্রিপুরার চুল প্রায় ৯ ফুট লম্বা। তবে তাঁর এ দীর্ঘ চুল বিশ্বের রেকর্ডদারী নারীদের মত ঝরঝরে সুস্থ-স্বাভাবিক নয়। কুলিরং এর চুল জটবাঁধা, যত্নাত্মি কিছুই নেই। শুধুমাত্র ধর্ম দেবতাকে খুশি করতে ১৫ বছর ধরে চুল কাটা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ী জনপদের আদিবাসী পাড়ায় গিয়ে সন্ধান মিলে এই দীর্ঘকেশী নারীর। নিজের চুলের মুঠি হাতে ধরে পাড়ার এক ঘর থেকে অন্যঘরে অনায়াসেই চলাফেরা করছেন। স্বামী রূপায়ধন ত্রিপুরার কাছে তাঁর স্ত্রীর দীর্ঘ চুলের রহস্য কি জানতে চাইলে তিনিও মৃদু হেসে খাণিকটা উত্তর দিলেন এভাবে, ‘আমরা পূর্নজন্ম বিশ্বাস করি তাই চুলে জট বাঁধলে মহাদেবের সন্তুষ্টির জন্য আর চুল কাটা হয় না।’ তিনি আরো জানান, ‘তাঁর স্ত্রী কুলিরং এর চুল এমনিতেই লম্বা ছিল। ৪৫ বছর বয়সে হঠাৎ চুলে জটবাঁধা শুরু হলে আর যত্ন নেওয়া হয়নি, গত ১৫ বছর কখনো তেল মাখেনি, মাছ-মাংস ও চর্বি জাতীয় খাওয়া থেকে সে বিরত ছিল।’
কুলিরং ত্রিপুরার চুলের শেষ ঃ খুঁজে পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। মাটি ছুঁয়ে থাকা চুল প্রতিমাসেই উল্টো ভাঁজে মুঠির সাথে বেঁধে রাখেন। এভাবে বেশ কয়েক বছর মুঠি বাঁধতে বাঁধতে যার ওজন দাঁড়িয়েছে কয়েক কেজি। শেষতক পরিমাপ করে জানা হল তাঁর চুলের দৈর্ঘ্য ৯ ফুট। মাটি পর্যন্ত পরিমাপ করে পাওয়া যায় চার ফুট ১০ ইঞ্চি, বাকি ৪ ফুট দুই ইঞ্চি মুঠির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।
এত লম্বা চুল সামলে রাখেন কি করে জানতে চাইলে কুলিরং বলেন, ‘হাঁটার সময় চুলের মুঠি হাতে নিয়ে হাঁটি, ঘুমোতে গেলে খাটের পাশে ভাঁজ করে রাখি।’
তাঁর সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুলের দৈর্ঘ্য যখন ৫ ফুট অতিক্রম করে তখন থেকেই চুল খোলা রেখে হাঁটা-চলা করাটা কিছুটা ঝামেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চুল খোলা অবস্থায় হাঁটা-চলা করলে চুলে রাজ্যের যত ধুলা-বালি লেপটে থাকে, তাই মাটিতে পড়ার আগেই মুঠির সাথে বেঁধে রাখে।
কুলিরং ত্রিপুরার চুল রাখা সম্পর্কে পাড়ার সর্দার ঊষা ত্রিপুরা জানান, ‘আমাদের ধর্মে রয়েছে কারো চুলে জট হলে সে মৃত্যু অবদি চুল কাটা থেকে বিরত থাকবে। আর যদি চুল কাটে তালে সে মহাদেবের আশির্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে।’
স্থানীয় করেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘দীর্ঘকেশী আদিবাসী নারীর ব্যাপারে আমাকে জানিয়েছেন ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন সরকার। চুলের যত্ন না নেওয়ায় চুলগুলো রুগ্ন হয়ে পড়েছে।’