সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

হত্যার দায় স্বীকার মেজর আরিফের

10439640_10202256185431664_1031044484_n_10103

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার দায় স্বীকার করলেন র‌্যাব-১১-এর সাবেক কর্মকর্তা মেজর আরিফ হোসেন। গতকাল জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তিনি স্বীকার করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারিক হাকিম এ এম মহিউদ্দিন। ২০ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে মেজর আরিফ অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন। বলেন হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সবার নাম, দেন গা শিউরে ওঠা খুনের বর্ণনা। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান আদালতে আরিফের দেওয়া স্বীকারোক্তির কথা জানান। জবানবন্দি দেওয়ার পর র‌্যাব-১১-এর সাবেক সিও তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও আরিফ হোসেনকে বিকাল সোয়া ৫টায় হাজির করা হয় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহম্মেদের আদালতে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশীদ মণ্ডল আদালতে আইনজীবী চন্দনকুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীমকে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় র‌্যাব-১১-এর সাবেক সিও তারেক সাঈদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। একই সঙ্গে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় জবানবন্দি দেওয়া সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ হোসেনকে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশে তারেক সাঈদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ও আরিফকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এদিকে বিকাল সোয়া ৫টায় কোর্ট শুরুর প্রথমেই কোর্ট সি এসআই আশরাফুজ্জামান আদালতকে জানান, গ্রেফতার মেজর আরিফ সাতজনকে খুনের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই জবানবন্দিতে এ কিলিং মিশনে কারা কারা ছিলেন তার অনেকের নাম বের হয়ে এসেছে। যেহেতু আরিফ জবানবন্দি দিয়েছেন সেহেতু তাকে জেলহাজতে পাঠানোর আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসামি তারেক সাঈদ এ হত্যায় জড়িত বলে তার নাম উঠে এসেছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। তাই তাকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। শুনানিতে অংশ নিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘আরিফ ইতিমধ্যে সাত খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তার ৩৭ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে আমরা জানতে পেরেছি, পুরো কিলিং মিশন তারেক সাঈদ নিজে উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করেছেন। যেভাবে সাতজনকে খুন করা হয়েছে তার রোমহর্ষক বিবরণ দিয়েছেন মেজর আরিফ। এ হত্যায় পরিকল্পনাকারীর একজন হয়ে তারেক সাঈদ পুরো কিলিং মিশন মনিটর করেছেন। জবানবন্দিতে বের হয়ে এসেছে এ হত্যায় নূর হোসেনের হয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে কাজ করেছেন। এ হত্যায় র‌্যাবের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে নিম্নপদস্থ কারা কারা জড়িত তা বের হয়ে এসেছে। তারেক সাঈদ এ কিলিং মিশন করে পবিত্র একটি বাহিনীকে কলঙ্কিত করেছেন।’ তিনি তারেক সাঈদের দিকে তাকিয়ে তাকে উদ্দেশ করে বলেন, জবানবন্দিতে তারেক সাঈদের নাম প্রকাশ পেলেও তিনি এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি। তার নার্ভ অনেক শক্ত। আদালতকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার যখন তারেক সাঈদকে আদালতে আনা হয় তখন তিনি বলেছিলেন, তিনি সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু আমরা কাগজে-কলমে দেখতে পেলাম তারেক সাঈদের বাবা কর্নেল থাকা অবস্থায় মানুষকে হয়রানি করতে ৩৭টি মামলা করেছেন। সেই ঘরের সন্তান তিনি। তারেক মিথ্যা বলেছেন। তিনি পেশাদার খুনি বলেই এত বড় কিলিং মিশন সম্পন্ন করেছেন। তার পরিবারের দ্বারা বহু মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, সবকিছু এখন প্রমাণিত। বাবা-মেয়ে দুজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী অপহরণ দেখে ফেলায় র‌্যাব কর্মকর্তাদের সম্পর্কে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা স্বচক্ষে দেখেছেন সাতজনকে র‌্যাব-১১ লেখা গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সাত খুনের ঘটনায় লাশের সঙ্গে র‌্যাবের ডাল খাওয়া বস্তা, রশি, ইট গিঁঠ দেওয়ার ধরন বলে দেয় এ হত্যার সঙ্গে তারা জড়িত। এখন তারেক সাঈদকে ফের রিমান্ডে নিয়ে জানা দরকার কারা কারা খুনে জড়িত, কে কে অপহরণ করলেন, কে সাতজনকে প্রথমে আঘাত করেছেন। লাশ কে কে ফেলেছেন। কে বস্তা, ইট গিঁঠ দিয়েছেন। তারেক সাঈদ আদালতকে বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। এ সময় আইনজীবীরা বলে ওঠেন, প্রথম দিন যখন তারেক সাঈদকে আদালতে আনা হয় সে সময় তিনি বলেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা অপপ্রচার চলছে, এগুলো মিডিয়ার তৈরি। কিন্তু আজ সব প্রমাণ বের হয়ে যাচ্ছে। আরেক আইনজীবী আনিসুর রহমান জুয়েল বলেন, ২৭ এপ্রিল অপহরণের দিন রাত দেড়টায় হাজীগঞ্জ চেকপোস্ট এলাকায় র‌্যাবের তিনটি গাড়ি আটকে দেয় সেখানকার পুলিশ। সে সময় তল্লাশি করতে চাইলে র‌্যাব সদস্যরা নেমে আসেন। ওই গাড়িতে তারেক সাঈদও ছিলেন। তিনি নেমে এসে বলেন, আমি কমান্ডিং অফিসার। সে গাড়িগুলোতেই নিহত সাতজন ছিলেন।