সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

সংগঠন গুছিয়ে যথাসময়ে আন্দোলন : খালেদা

pic-13_72332
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বিএনপি আন্দোলন করছে না- এটা সঠিক নয়। সংগঠন গুছিয়ে যথাসময় আন্দোলন হবে। এখন তারই প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরো বলেন, ‘শিগগির মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি দেওয়া হবে। অন্যান্য সংগঠনকে নতুনভাবে পুনর্গঠন করা হবে। সংগঠন জোরদার করেই রাজপথে নামব।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই ভয়ে তারা ক্ষমতা ছাড়ছে না। তারা দেশে যেভাবে অরাজকতা সৃষ্টি করছে তাতে জোর করেও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের মহানগর শাখার কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, শুধুমাত্র হাতে তালি কিংবা স্লোগান দিলে চলবে না। কাজ করতে হবে। যারা আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখবে, ঝুঁকি নেবে, রাজপথে থাকবে, তাদের নিয়ে নতুন কমিটি করুন। ভাই-বোন কিংবা বন্ধুত্বের কথা চিন্তা করে নেতৃত্ব নির্বাচন করলে চলবে না। নইলে কাউন্সিলের উদ্দেশ্য মূল্যহীন হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সভাপতি মো. রেহান আলী। স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম। বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, শ্রমিক দলের নির্বাহী সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, সহসভাপতি মজিবর রহমান সারওয়ার, সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নান, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর সদস্যসচিব আবদুস সালাম, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ। পরে কর্ম অধিবেশনে মহানগরের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। মহানগর শ্রমিক দলের এটি ষষ্ঠ কাউন্সিল। এর সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০০৫ সালে।
খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, এখনো সময় আছে, আলোচনার মাধ্যমে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছেন, নির্বাচন দিতে দেরি করলে যেকোনো পরিণতির জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি, আগামীতেও হবে না। জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে আমরা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ ৫ জানুয়ারি ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘আগামী ১৯ এপ্রিল শ্রমিক দলের কাউন্সিল হবে। মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি দেওয়া হবে শিগগির। অন্যান্য সংগঠনেও নতুন নেতৃত্ব আনা হবে। কারণ পুরনোরাও চান, নতুন নেতাদের সংগঠনের দায়িত্বে নিয়ে আসতে। ওই কাজগুলো আমরা এখন করে যাচ্ছি। এসব কমিটি গঠনের পর নতুন নেতৃত্বকে নিয়ে আমরা অবৈধ ও জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষ এ সরকারে ওপর অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা অধীর আগ্রহে বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। জনগণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। আমাদেরকে সংগঠন শক্তিশালী করে মাঠে নামতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হব।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের হাতে অনেক অবৈধ অস্ত্র আছে। শিক্ষাঙ্গনগুলোকে তারা অস্ত্রাগারে পরিণত করেছে। বিএনপির অস্ত্র হচ্ছে জনগণ। সে জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপিকে এত ভয় পায়। আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে তারা বাধা দেয়।’
খালেদা জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। তিনি বলেন, সদ্য শেষ হওয়া উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে বিএনপি এগিয়ে আছে দেখে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখলে করে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে। উপজেলা নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে সরকার যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সন্ত্রাস, গুম, খুন এখন নিত্যদিনের ঘটনা। আওয়ামী লীগ কথায় কথায় সোনার বাংলার কথা বলে। এই দলটির সোনার ছেলেরা এখন কী করছে? দেশে সোনা চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে।  ওইসব সোনা কোথায় যাচ্ছে?
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, এরশাদ একজন বেইমান, মুনাফেক। তাঁকে জনগণ বিশ্বাস করে না। সরকার তাঁকে আবার বিশেষ দূত বানিয়েছে। বিদেশিদেরও তাঁর প্রতি আস্থা নেই। তাঁকে দিয়ে আবার কী দূতিয়ালি হবে? তিনি বলেন, এরশাদ অনেক দুর্নীতি করেছেন। অনেক মানুষ খুন করেছেন। ওইসব দুর্নীতি ও খুনের বিচার এখনো হয়নি। এগুলো জমা আছে। একদিন এসবের বিচার হবে। কলকারখানা বন্ধ, পোশাকশিল্পের দুরবস্থাসহ শ্রমিকদের বেকারত্বের জন্য সরকারের ভ্রান্তনীতিকে দায়ী করে তিনি বলেন,  বিদ্যুৎ দিতে পারে না। গ্যাস নেই, পানি নেই। ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায় না। এ জন্য অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য সরকারই দায়ী। আওয়ামী লীগ সরকার গত পাঁচ বছর তিন মাসে দেশে কোনো নতুন শিল্প গড়ে তুলতে পারেনি। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তার শাসনামলে ছয়বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের পকেট থেকে অর্থ লুটপাট করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সমালোচনা করে সাদেক হোসেন খোকা বলেন, আপনি এত ক্ষমতাধর ছিলেন যে জিয়াউর রহমান আপনাকে ‘স্যার’ বলতে বলতে অস্থির হয়ে যেতেন। তাহলে ৩২ নম্বরে যখন শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন, তখন তো আপনি টুঁ শব্দ করেননি। ওই সময় রক্ষীবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন আপনি। খোকা বলেন, ‘আপনি (তোফায়েল) এখন মন্ত্রী হয়েছেন, খালেদা জিয়ার পা ছুঁয়ে সালাম করে যান। কারণ আমাদের আন্দোলনের চাপে আপনি ও আমু মন্ত্রী হয়েছেন।’ খোকা আরো বলেন, তারেক রহমানের বক্তব্য খণ্ডন করতে না পেরে তোফায়েল আহমেদ যা খুশি তাই বলছেন। সবকিছুতে তিন ফাল দিয়ে দাঁড়িয়ে যান। লাফিয়ে ওঠেন। শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্ট করতেই তিনি অনেক তোষামোদ করছেন।
কাউন্সিলে বিক্ষোভ, ভাঙচুরশান্তিপূর্ণভাবে কাউন্সিল শুরু হলেও সন্ধ্যার দিকে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ্রমিক নেতারা শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর এবং অবৈধ কাউন্সিল মানি না বলে স্লোগান দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, খালেদা জিয়া চলে যাওয়ার পর দ্বিতীয় অধিবেশনে এ ঘটনা ঘটে। রুদ্ধদ্বার এই অধিবেশন চলাকালে শ্রমিক দলের নেতা বদরুল আলম সবুজ ও সুমন ভূঁইয়ার সমর্থকরা ভেতরে ঢুকে ‘আমরা এ কাউন্সিল মানি না’ বলে স্লোগান দেয়। সিনিয়র নেতারা এ সময় কর্মীদের সহায়তায় তাদের অধিবেশন কক্ষ থেকে বের করে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, পরে শ্রমিক নেতা সবুজ ও সুমন ভূঁইয়ার সমর্থকরা বাইরে এসে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা বাইরে রাখা চেয়ার ভাঙতে শুরু করে। এ সময় শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ তাদের নিবৃত্ত করতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।