রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৫

7_308501

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পাঁচজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন এক সেনাসদস্য। শনিবার ভোরে উপজেলার রূপকারী ইউনিয়নের কেরেঙ্গাতলীর বারবিন্দুঘাটের বড়াদমে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে একটি এলএমজিসহ (লাইট মেশিনগান) ৮টি ভারি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর বাঘাইহাট জোন কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।নিহতরা হল- রুপায়ন চাকমা (২৫), জ্যাকশন চাকমা (২৪), তাতুমণি ত্রিপুরা (৩০), কান্তি মারমা (২৫) ও বাবুল চাকমা (২০)। নিহতরা সবাই জেএসএসের (এমএন লারমা) সংস্কারপন্থী গ্র“পের সদস্য বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।তবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তারা ঘটনা শুনেছেন। তবে নিহতরা কেউ তাদের সংগঠনে কাজ করে না। তাদের দলে কোনো সশস্ত্র কর্মী নেই।এদিকে, অভিযান চলাকালে স্থানীয় তিনজনকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাসূত্র। সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর রুবাইয়াত জামিল জানান, ওই এলাকায় জেএসএস সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের একটি বড় গ্র“প বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বড় ধরনের অপারেশন চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাঘাইছড়ি জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দারের নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর একটি গ্রুপ শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে।তিনি আরও জানান, ভোর ৫টার দিকে ঘটনা টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা যৌথবাহিনীর ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত হন। এছাড়া সেনাসদস্য কর্পোরাল লিয়াকত মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।বাঘাইছড়ি জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার জানান, সন্ত্রাসীরা বরাদম এলাকার বিনয় জ্যোতি চাকমা নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল। বন্দুকযুদ্ধের সময় বাড়ির সদস্যদের জিম্মি করে। কিন্তু সেনাবহিনীর সতর্ক গুলিবর্ষণের কারণে সাধারণ কোনো নাগরিক হতাহত হয়নি। সন্ত্রাসী দলে মোট ২০ জনের মতো থাকলেও বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তাদের আটকের জন্য এখনও অপারেশন চলছে।রাঙ্গামাটির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, ওই এলাকায় আস্তানা গড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় আইনশৃংখলা বাহিনী। এ সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয় সন্ত্রাসীরা। আইনশৃংখলা বাহিনী পাল্টা গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই ৫ সন্ত্রাসী নিহত হয়। তিনি আরও জানান, পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে ঘটনাস্থল গিয়ে সেখান থেকে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা ৫ সন্ত্রাসীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই সময় তল্লাশি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা এলএমজি ১টি, পিস্তল ১টি, এসএমজি ১টি, চাইনিজ রাইফেল ২টি ও এসএলআর ৩টি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ৫৩৯ রাউন্ড তাজা গুলি ও সেনাবাহিনীর পোশাকসহ বেশকিছু সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন ফকির বলেন, উদ্ধার করা ৫ সন্ত্রাসীর মৃতদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকায় সেনাবাহিনীর তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি জানান।উল্লেখ্য, জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) থেকে একটি অংশ বেরিয়ে জেএসএস (এমএন লারমা) দল গঠন করে কয়েক বছর আগে। সন্তু লারমার ভাই এমএন লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা। দলের কোন্দলে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।