সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

রহস্যময়ী সেই নারী রিমান্ডে

39296_b2

চ্যানেল আই-এর ‘কাফেলা’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক শায়খ নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত রহস্যময়ী সেই নারী মাহমুদা ওরফে আসমা ওরফে আমেনাকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে তার সহযোগী শরীফুল ইসলামকেও রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তাদের হাজির করা হয়। এ সময় এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ তাদের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে মহানগর হাকিম ওয়ায়েস কুরুনী দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে, কুমিল্লা থেকে ফারুকী হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আটককৃত ইউসুফ (২৫)-কে গতকাল গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই হত্যা মামলাটি শেরেবাংলা নগর থানা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঘটনার দিন ফারুকীর বাসায় যান মাহমুদা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইলফোন ট্র্যাকিং করে গত শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মোড়াপাড়া থেকে মাহমুদাকে আটক করা হয়। কললিস্ট অনুসারে মাহমুদার সঙ্গে ফোনে বেশি যোগাযোগের কারণে আটক করা হয় শরিফুলকে। মাহমুদা ও শরিফুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মাহমুদা জানিয়েছে, সে ফারুকীর একজন ভক্ত। মাইটিভিতে ফারুকীর একটি ইসলামী অনুষ্ঠান দেখে এবং ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফোন নম্বর পেয়ে তাকে কল দেন মাহমুদা। একজন ভক্ত হিসেবে নিজের পারিবারিক বিষয়ে ফারুকীর দোয়া চাওয়ার জন্য গত ২৭শে আগস্ট তার পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় গিয়েছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা। প্রায় ২০ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। একটি গার্মেন্টে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। বাস করেন রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ার ভাড়া বাসায়। তার সন্তানরা তার খোঁজখবর নেয় না। এ কারণেই ফারুকীর দোয়া চাইতে গিয়েছিলেন তিনি।
আটককৃত মাহমুদা ও শরিফুলের কাছ থেকে ফারুকী হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি স্বীকার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম জানান, তারপরও অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাহমুদা ও শরিফুলের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। ফারুকী হত্যাকাণ্ডকে অন্যান্য হত্যাকাণ্ড থেকে অন্যরকম বলে দাবি করে নাজমুল আলম বলেন, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার খবর পেয়ে প্রাথমিকভাবে ডিবি’র ক্রাইম সিন সংগ্রহকারী গোয়েন্দা সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। শুরু থেকেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমরা কাজ করছি। আলামত যাতে নষ্ট না হয় এ জন্য বাড়তি সতর্কতা ছিল শুরু থেকেই। কিন্তু খুনিরা কোন আলামত রেখে যায়নি। এ কারণে এখন পর্যন্ত কোন মোটিভ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি। শেখ নাজমুল আলম মনে করেন, খুনিরা অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় ফারুকীকে হত্যা করেছে। সরাসরি হয়তো একটি গ্রুপ এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে অথবা কিলার গ্রুপ ভাড়া করে ফারুকীকে হত্যা করেছে।
ফারুকীর প্রতিটি ক্ষেত্রই খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ফারুকীর দল ইসলামী ফ্রন্টের নেতাদের অভিযোগ কয়েকজন টিভি উপস্থাপকের বিরুদ্ধে। আবার তার পরিবারের সদস্যরা জীবিত অবস্থায় ফারুকীকে অজ্ঞাতরা হুমকি দিতো বলে জানিয়েছেন। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এদিকে ফারুকী হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গত শনিবার বিকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে মুহাম্মদ ইউসুফ (২৫) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত ইউসুফ চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার নোয়াপাড়া গ্রামের টুকু মিয়ার ছেলে। গতকাল তাকে গোয়েন্দা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এর আগে কুমিল্লা থেকে ইউসুফকে শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ইউসুফ এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭শে আগস্ট রাতে পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় পরিবারের সবাইকে বেঁধে নুরুল ইসলাম ফারুকীকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ফারুকী সুন্নি মতাবলম্বী সংগঠন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি বিভিন্ন চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতেন। হত্যাকাণ্ডের রাতেই ফারুকীর ছেলে ফয়সাল ফারুকী অজ্ঞাতপরিচয় ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা ও ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি গতকাল সকালে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করা হয়েছে।