রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

রক্তচোষা র‌্যাবের আর দরকার নেই

untitled-31_84002

 

অপহরণের পর খুন হওয়া নজরুলের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের মিজমিজিতে। বাড়ির সদস্যরা অপেক্ষা করছে। তাদের সঙ্গে আছে নজরুলের মতো করুণ শিকার আরো পাঁচজনের পরিবার। শোক, ক্ষোভ, ঘৃণা আর খুনিদের শাস্তির আর্তি সবার চোখে-মুখে। দীর্ঘ ক্লান্তি আর স্বজন হারানোর বেদনায় হাহাকার নিয়ে কেউ বসে আছে, কেউ ইতস্তত দাঁড়িয়ে। নেতা-কর্মীদের স্লোগানের মধ্যেই মৌচাক মাদ্রাসা রোডের ওই বাড়ির আঙিনায় পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ঘটনাস্থলে পৌঁছেই খালেদা জিয়ার জিজ্ঞাসা, ‘আপনারা কেমন আছেন?’ প্রশ্ন শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়ল নিহতদের স্বজনরা। চোখ মুছতে মুছতেই নিহত নজরুলের মেয়ে তানহা এগিয়ে যান খালেদা জিয়ার দিকে। তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে খালেদা জিয়া বলতে থাকেন, ‘আমি জানি, আপনারা কেমন আছেন। র‌্যাব এখন মানুষখেকো, রক্তচোষা হয়ে গেছে। দেশে গুম-খুনের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। এমন অবস্থা হয়ে পড়েছে যে র‌্যাব যত দিন থাকবে, তত দিন তারা মানুষকে গুম করবে, খুন করবে। আর আপনারা আমরা কাঁদতে থাকব। এটা আর সহ্য করা হবে না ।’অন্যদের সঙ্গে কুশলবিনিময়ের পর খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার র‌্যাবকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে অহরহ মানুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে পারে না। চলতে দিতে পারি না। এর প্রতিবাদ করতেই হবে।’ খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় প্রধানমন্ত্রীও এর দায় এড়াতে পারেন না। এদের সবার বিচার হতে হবে। এখন বিচার না হলে আল্লাহ বিচার করবেন। আমি কথা দিচ্ছি, আমরা ক্ষমতায় এলে এদের বিচার করব। এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন বিদেশে পালিয়ে গেছে। র‌্যাব তাকে পার করে দিয়েছে।’ এ সময় তিনি র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।এর আগে খালেদা জিয়া সকাল সোয়া ১১টায় গুলশানের বাসভবন থেকে নারায়ণগঞ্জ রওনা হন।  তিনি দুপুর সোয়া ১২টায় পৌঁছান প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বাসায়। সেখানে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন এবং তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। ওই বাসায় অন্য পাঁচ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তিনি কথা বলেন ও সান্ত্বনা দেন। সোয়া ১টার পর বিএনপি চেয়ারপারসন আইনজীবী চন্দন সরকারের বাসায় যান। দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। নজরুল ইসলাম ও চন্দন সরকারের বাসায় অবস্থানকালে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন। সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সরকারের পদত্যাগ ও একই সঙ্গে র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি জানান তিনি। প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে সমাবেশে বক্তব্য দেন। এর দীর্ঘদিন পর গতকাল শহরটিতে গেলেন তিনি। দুপুরের পর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন।সোয়া ১১টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে বনানী, ফার্মগেট, রূপসীবাংলা, কাকরাইল, নয়াপল্টন হয়ে নারায়ণগঞ্জ পৌঁছেন তিনি। সোয়া ১২টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজিতে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের বাসায় পৌঁছেন। সেখানে স্থানীয় বিএনপি ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তারেক সাঈদ কার জামাই, মন্ত্রীর জামাই। তাকে জামাই আদরে রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। র‌্যাব অনেক গুম ও হত্যার সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, উত্তরা থেকে বিএনপি নেতা সুলাইমানকে ধরে নিয়ে হত্যা করে লক্ষ্মীপুরে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। এ রকম আরো অনেক অভিযোগ আছে। র‌্যাবের শক্তির উৎস কী- তা জানতে চান তিনি। তারেক সাঈদসহ র‌্যাবের অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করলে সেভেন মার্ডারের সব রহস্য উন্মোচিত হবে বলে দাবি করে তিনি বলেন, সাত পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব পরিবারের সদস্যদের কিছু হলে তার পরিণাম শুভ হবে না।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অবিলম্বে গুম-খুন বন্ধ করুন অন্যথায় দেশের মানুষ এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। তখন আর কারো কিছু করার থাকবে না। নজরুলের শ্বশুরকে ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি নজরুলের পরিবারের কিছু হয় তাহলে তার পরিণতি ভালো হবে না। এর দায় সরকারকে নিতে হবে।এরপর একই ঘটনায় নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জালকুড়ির বাসায় গিয়ে তাঁর ও গাড়িচালক ইব্রাহিমের স্ত্রী, সন্তানসহ পরিজনদের সান্ত্বনা দেন খালেদা জিয়া। এ সময় নিহতদের স্ত্রী-সন্তানদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। খালেদা জিয়াও এ সময় অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অবশ্যই বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন হত্যাকারীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে না। তাদের শক্তির উৎস কী- জানতে চান তিনি। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, খুন-গুমের দায়ভার নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তারা জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকার সব জানে অথচ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।চন্দন সরকারের বাসায় নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নেতা ও সিনিয়র আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সাত খুনের বিচার দাবিতে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা যেসব কর্মসূচি দিয়েছে তার প্রতি বিএনপির সমর্থনের কথা জানান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে দলের সিনিয়র নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান  প্রমুখ।