শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ : নিহত ৮, আহত ৪৫

image_114141.narsingdi road accident pic 02

নরসিংদীতে যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে আটজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে অন্তত ৪৫ জন। আজ বুধবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কারারচর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেকিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটিতে আগুন লেগে যাওয়ায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে মহাসড়কের সড়ক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সড়কের দুই পাশে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে সদস্যরা দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। মহাসড়ক থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।নিহতদের মধ্যে দুজন আগুনে পুড়ে এবং দুজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন, ঢাকা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কেন্দুয়া উপজেলার সোহানা আহম্মেদ (১৮), নরসিংদী সদর উপজেলার বাসাইল এলাকার হান্নান মিয়া (৪৫), রায়পুরা উপজেলার চরফুলদী গ্রামের মজনু মিয়া (২০), ও বেলাবো উপজেলার বিন্নাবাইদ এলাকার নাদিরা (২৫)।পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মহাসড়কে সোহাগ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসগুলো বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। তেমনি আজ (গতকাল) সোহাগ পরিবহনের একটি বাস সিএনজি অটোরিক্সাকে বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করার সময় বিপরীতমুখী অপর যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে আটজন নিহত ও কমপক্ষে ৪৫ জন আহত হয়েছে। এই ঘটনায় শিবপুর মডেল থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সিলেট থেকে ঢাকা গামী সোহাগ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস (ঢাকা মেট্রো ব ১১-১১৫০) মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার কারারচর বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় দ্রুত গতিতে একটি সিএনজি অটো রিক্সাকে ওভারটেকের চেষ্টা চালায়। ওই সময় বিপরিত দিক থেকে আসা ঢাকা থেকে ভৈরবগামী মেঘালয় পরিবহনের আরেকটি যাত্রী বাহী বাসের (মৌলবীবাজার জ ১১-০০৬৪) সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। এতে বাস দুটির সামেনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। ওই সময় আশপাশের লোকজন দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি থেকে আহতদের উদ্ধার করার চষ্টো চালায়। কিন্তু কিছুক্ষণের ব্যবধানে সোহাগ পরিবহনের বাসের গ্যাসের সিলিন্ডারটি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে দুটি গাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থল পৌঁছে এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে বলাবো উপজেলার বিন্নাবাইদ এলাকার নাদিরাসহ দুই জন নিহত হয়েছে এবং অগ্নিকান্ডের পর গাড়ির ধ্বংসস্তুপ থেকে ২টি ভস্মীভূত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।দুর্ঘটনায় যাত্রীবাহী বাস দুটিতে থাকা কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। আহতদের নরসিংদী জেলা ও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই সময় কতর্বযরত চিকিত্সক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কেন্দুয়া উপজেলার সোহানা আহম্মেদ (১৮) ও নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরফুলদী গ্রামের মজনু মিয়াকে (২০) মৃত ঘোষণা করে। আহতদের মধ্যে ১৫ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেকিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।আহতদের মধ্যে যাদের নাম গেছে তারা হলেন, নরসিংদী সদর উপজেলার ব্রাহ্মন্দী এলাকার অলী আহম্মদ (৩২), বেলাব উপজেলার চরবেলাব গ্রামের জুয়েল মিয়া (২৫), টেকপাড়া গ্রামের রোজিয়া আক্তার (২৫), বিন্নাবাইদ গ্রামের আইন উদ্দিন (৫০), নাদিম মিয়া (১৫), খোদেজা বেগম (৫০), টেকপাড়া গ্রামের রাব্বী মিয়া (১৪), রায়পুরা উপজেলার সাতমাড়া গ্রামের কুদ্দুস মাস্টার (৬০), আলকাছ মাস্টার (৭০), গোপিনাথপুর গ্রামের ময়না আক্তার (২৫), জীবননেছা (৩০), মরজাল গ্রামের সিফাত মিয়া (১৮), রত্না বেগম (৩৮), রসুলপুর গ্রামের আফছার উদ্দিন (১২), বাগাইকান্দী গ্রামের সুফিয়া বেগম (৩০), মধ্যনগর গ্রামের মাজেদা খাতুন (৪৫), শিবপুর উপজেলার কুমরাদী গ্রামের খুরশিদ আহম্মেদ (৪৫), ধুকুন্দি গ্রামের সোহেল মিয়া (৩০), কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চাউলাকান্দী গ্রামের মানিক মিয়া (৩২), সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চান্দেরগাঁও গ্রামের নজরুল মিয়া (২৫) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কেন্দুয়া উপজেলার আছিয়া বেগম (৪৫)।এদিকে দূর্ঘটনার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ২০ মিলোমটিার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর প্রায় দুই ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি মাহাসড়ক থেকে সড়িয়ে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
জেলা হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দুর্ঘটনায় জেলা হাসপাতালে ৩৩ জন ও সদর হাসপাতালে ১২ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে চারজন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন, ঢাকা নেওয়ার পথে একজন ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে।