সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আবার বাড়ল ব্যয় ও সময়, বাড়ল জনগনের দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার আশংকা

সপ্তমবারের মত ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের সময় বাড়ল। কাজ শেষ করতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটি ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯০ ল টাকা। এতে করে ব্যয় বেড়ে গেল প্রায় আটশ কোটি টাকা। শুরু থেকে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৭শ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বর্ষা শেষ হয়েছে। এখন পুরোদমে কাজ চালালে বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের গতি বাড়ানো, দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রত্যাশিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার ল্েয চার লেন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি গেইট থেকে কুমিল্লাহ দাউদকান্দি লোল প্লাজা পযর্ন্ত ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়ক চার লেন করার এই প্রকল্পটি শুরু থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। পরামর্শক নিয়োগ থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রক্রিয়া বাধা গ্রস্ত হয়। মামলায় অনেক সময় চলে যায়। বার বার পরিবর্তন করা হয় প্রকল্পের পরিচালক। এতে করে ২০০৬ সালের জানুয়ারির গৃহীত প্রকল্পটির কাজ শুরু হতে কয়েক বছর লেগে যায়। একনেকের অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে ৫ বছর। পরে পুরো প্রকল্পটি ১০ টি প্যাকেজে ভাগ করে আন্তজাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ পায়। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ পেয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন। বাকি ৩০ শতাংশ কাজ পেয়েছে যৌথভাবে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেজা কন্সট্রাকশন ও তাহের ব্রার্দাস লিমিটেড। সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। আর্ন্তজাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারি নিয়োগের সময় চুক্তি ছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে। কিন্তুুু ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হওয়ার পর নানা অজুহাতে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও প্রথম দফায় ২০১৩ সালের জুন, দ্বিতীয় দফায় ২০১৩ সালের ডিসেম্বর, তৃতীয় দফায় ২০১৪ সালের জুন এবং চুতুর্থ দফায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পঞ্চম দফায় ২০১৫ সালের জনু এবং ষষ্ঠ দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। একই সাথে বাড়ানো হয় ব্যয়। প্রকল্পটির সময় আবার বাড়ানো হয়েছে। এবার কিন্তু আগের মত ছয় মাস নয় এক দাফে এক বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর প্রর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এর মধ্যে কয়েকদিন আগে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নৌবাহীনির একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে চার লেনের কাজ শেষ করতে না পারলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তুু নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেেিত সরকার প্রকল্পের সময় সীমা এক বছর বাড়িয়েছে। আবারো এর সাথে সাথে প্রায় আটশ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের পিছনে প্রথম থেকে মোট ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৩ হাজার ৭শ কোটি টাকার মত। সাথে সাধারণ জনগনের দুর্ভোগ বাড়ছে। চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা দাউদকান্দি পর্যন্ত মোট ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়করে ইতিমধ্যে ৮৫ শতাংশের কাজ শেষ হয়ে গেলেও পিস ডালার এক বছর পার হতে না হতে অনেক স্থানে সড়কে পাটল ও পিস ডালা উঠে গেছে। যা নতুন করে আবার ঠিক করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন যানবাহনের দীর্ঘ ঘন্টা পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এইবার ভারী বর্শন ও বৃষ্টির কারণে নতুন চারলেন সড়কের পাশ ভেঙে যায়। ভারী বর্শনের সময় যানবাহনের চাকার সাথে সাথে নতুন পিস ডালা সড়কের বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য বৃষ্টির সময় কাজ বন্ধ ছিল। আবার দীর্ষ সময় ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাজ বন্ধ ছিল।
বর্ষায় তিগ্রস্ত বিভিন্ন অংশের কাজ করাতে বেড়েছে দীর্ঘ যানজট ও দুর্ঘটনার আশংকা। তবে বর্ষা শেষ হওয়ায় কাজে গতি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া পাথর সংকটের কারণে কাজের ব্যঘাত ঘটছে। বর্ষার কারণে ভারত থেকে পাথর সরবারহ করা কমে গেছে। তবে বর্ষা শেষ হওয়ায় ভারত থেকে পাথর সরবারহ করা বাড়তে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের আওতায় ভুমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের কাজও শেষ হয়নি এখনো। এখনো সেতু ও কার্লভাটের কাজ শেষ হয়নি।
প্রতিবছর সময় বাড়ানোর সাথে সাথে বেড়েছে ব্যয়ও। যেখানে ২০১২ সালের ডিসেম্বরের ভিতরে কাজ শেষ করা কথা ছিল সেখানে বর্তমানে ২০১৫ প্রায় শেষ। আবারো সপ্তমবারের মত সময় বাড়িয়ে ২০১৬ ডিসেম্বর করা হয়েছে। যদিও চীনা কোম্পানি এইবার কাজ শেষ করে ফেলবে বলেছে কিন্তুু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, ২০১৬ কেন ২০১৭ সালেও কাজ শেষ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে বলে গিয়েছিল গত মাসে ডিসেম্বরের ভিতর যদি কাজ শেষ না হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিবে। কিন্তুু আসলে কী সরকার তা করতে পেরেছে? ওবায়দুল কাদেরের সেই উক্তি আজ কোথায় গেলো? দিয়েছে কি শাস্তি? আবারো এক বছর বাড়ানো হয়েছে সময়। কিন্তুু সময় যেমন বাড়ানো হয়েছে তেমনি সাথে সাথে বাড়ানো হয়েছে ব্যয়ও। যার পরিমাণ আটশ কোটি টাকা। সময় ও ব্যয় বাড়ানোর সাথে সাথে বেড়েছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। বেড়েছে প্রতি মুহুর্তে দুর্ঘোটনার আশংকা। আর যানজটতো লেগেই আছে প্রতিদিন।