শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মীরসরাইয়ের জনগুরুত্বপূর্ণ মিঠাছড়া-বামনসুন্দর সড়ক সম্প্রসারণ জরুরী

IMG_20140127_162916

 মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ঃ মীরসরাইয়ের অত্যান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ মিঠাছড়া থেকে বামনসুন্দর ৭ কিলোমিটারের এই সড়কটি সম্প্রসারণ ও মেরামত কাজ করা অতীব জরুরী। পূর্ব ও পশ্চিম দু দিকেই মিঠাছরা ও বামনসুন্দর বাজার থাকায় গ্রামীণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের বিশেষ গুরুত্বও বহন করছে এই সড়ক। ব্যাস্ততম গ্রামীণ এই সড়কে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার লোকের যাতায়াত। এতে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল করলেও মাত্রাতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচলে পুরোপুরি অনুপযোগী। এসব তোয়াক্কা না করে রাস্তায় চলাচল করছে বাস, মালবাহী বড় বড় ট্রাক। যার ফলে রাস্তার বিভিন্ন অংশে বড় বড় খানা-খন্দ সহ দুই পাশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বর্তমান সরকারে মেয়াদকালে উপজেলায় একটি শিল্পপার্ক গড়ে তোলার কথা রয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গেলেও এই সড়কটিই যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম।

উপজেলার ৭নং কাটাছরা, ৯নং মীরসরাই ও ১০ নং মিঠানালা গ্রামাঞ্চল সহ মিঠাছরা, বিশ্বদরবার, মোঠবাড়িয়া, ফকিরহাট, রাজাপুর, বামনসুন্দর, রহমতাবাদ, সুফিয়া, এছহাক ড্রাইভার হাট, সাহজিবাজার, লোদ্বাখালী, ইছাখালী, কাটাছড়া, বাড়ীয়াখালী এলাকার লক্ষাধিক লোকের এ সড়কে যাতায়াত। রাস্তার প্রস্থ কমের কারণে ভারী যানবাহান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। নিত্যদিন ঘটছে দূর্ঘটনা, যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। উল্লেখ্য,উত্তর চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ গরুর হাট বসে মিঠাছরা। এছাড়াও বামনসুন্দর ও মিঠাছড়ায় বাজারে চলে শীতলপাটির বিকিকিনি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা ভিড় করে এই দুই বাজারে। এই দুই বাজারের অনেক ব্যবসায়ী পণ্য গুদামজাত করেও ব্যবসা করছে। মালামাল সরবরাহের অসুবিধায় রীতিমত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তারা। অন্যদিকে, বামনসুন্দর বাজারের পশ্চিমে বি¯তৃত চরাঞ্চল। যেখানে ধান, ডাল, গম এর পাশাপাশি শাক-সবজি সহ মৌসুম ভিত্তিক ফসল উৎপাদন করা হয়। নিজস্ব চাহিদাপূরণ করেও কৃষকরা এসব উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য বামনসুন্দর ও মিঠাছড়া বাজারে নিয়ে আসে। এসব ফসল উৎপাদন, আরোহন ও বিক্রির মৌসুমে বড় বড় ট্রাক্টর, পিকআপ ব্যবহৃত হয়। আবার উক্ত চরাঞ্চল মৎস চাষের বেশ উপযোগী। মৎস চাষ লাভজনক পেশা হওয়ায় বর্তমানে এ অঞ্চলের অনেক বেকার যুবক আত্মকর্মসংস্থানের জন্য মৎস চাষের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গড়ে তুলছে অনেক মৎস প্রকল্প। এখানকার চাহিদা মিটিয়ে মাছ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে মাছের খাদ্য, সার, ঔষুধ, যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মাছ আহরণে প্রতিনিয়ত ছোট বড় গাড়ী যাতায়াতের জন্য মিঠাছরা-বামনসুন্দর সড়কটি সহজ মাধ্যম হলেও ব্যবহার বিঘœ ঘটছে। সড়কের প্রস্থ কম ও এটি এতটাই সুরু যে একটি সিএনজি অন্য একটি সিএনজি ট্রেক্সীকে ওভারটেক করতেও প্রচন্ড বেগ পেতে হয়। বড় গাড়ী চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নির্ভর করতে হয় ছোট গাড়ীর উপর। যাতায়াত অসুবিধার কারণে খরচের খাত বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই আবার এই ব্যবসায় উৎসাহ হারাচ্ছে। চরাঞ্চলের বৃহৎ সম্ভাবনা থাকা সত্বেও গুরুত্বহীন ভূমিকায় প্রশাসন। সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে সম্প্রসারণ করার মতো যথেষ্ট পরিমান সরকারী জায়গা থাকলেও ঐ সব জায়গা কিছু অসাধু মহল ও প্রভাবশালী ব্যাক্তি জোর করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে কিছু জায়গা মাটি ভরাট করে ও দোকান-পাট গড়ে তুলে দখল করে রেখেছে ঐসব মহল। প্রশাসনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দখলকৃত জায়গা উদ্ধার করে সড়কের দুই পাশে মাটি ভরাট করে সম্প্রসারণ করলে অত্র অঞ্চলের বৃহৎ উন্নতি সাধিত হবে মনে করছেন সাধারণ জনগণ।বর্তমানে রাস্তার এই বেহাল অবস্থা থাকার পরও প্রসাশন কোন উদ্যগী ভুমিকা না নেওয়ায় চালক সমিতির আওতায় সেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে রাস্তার দু-পাশ থেকে মাটি কেটে রাস্তার বড় বড় খানা-খন্দ মাটি দিয়ে ভরাটের চেষ্টা করছে।
৭ নং কাটাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার সবুজ বলেন, মিঠাছরা থেকে বামনসুন্দর সড়কটি গত দুই বছর আগে মেরামত করা হলেও ঐ সময়ের বাজারের সাথে বরাদ্ধের সামঞ্জস্য না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কম মূল্যের জিনিস ব্যবহার করে কাজ শেষ করে। ফলে রাস্তার অবস্থা এই অল্প সময়ের মধ্যে দিন দিন নাজুক হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মিঠাছড়া এলাকা অত্র অঞ্চলের মানুষের জন্য উপশহরের মত। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এই সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রামীণ সড়ক গুলোর মধ্যে খুব ব্যস্ততম একটি সড়ক। এই অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী ফসল উৎপাদন, মৎস চাষ, পোল্ট্রি ফার্ম, ব্যবসা বাণিজ্য সহ বিভিন্ন কাজে জড়িত। এই সব মানুষকে নানা কাজে এই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। এই এলাকাটি যতটা গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় সেই তুলনায় অত্র এলাকার রাস্তাটি অত্যান্ত সুরুুু। যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি এই রাস্তাটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
৯ নং মিঠাছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাফর উদ্দিন চৌধুরী জানান, উপজেলার তিন ইউনিয়েনর প্রায় ১.৫ লক্ষ লোকের যোগাযোগের জন্য এটিই একমাত্র সড়ক। সাহেরখালী টু বিষুমিয়ারহাট সড়কটির মত এই ব্যাস্ততম সড়কের প্রস্থও দ্বিগুণ করা প্রয়োজন।
১০ নং- মিঠানালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের ভুঁইয়া জানান,১০ নং ইউনিয়নের বেশির ভাগ মানুষ এই সড়কটি ব্যাবহার করে।মাঝে মাঝে এই সড়কে ১০ টন ওজনের ট্রাক ও ঢুকে পড়ে।ফকিরহাট এলাকার কিছু জায়গা এর আগে উচ্ছেদ করা হলেও তা পুনরায দখল করে।পরবর্তীতে এসব জায়গা উদ্ধার করার সময় উনার সর্বাতœক সহযোগিতা থাকবে বলেও জানান তিনি।উক্ত সড়কটি সম্প্রসারন করা হলে এই এলাকার বৃহৎ উন্নতি সাধিত হবে বলে তিনি জোর গলায় প্রকাশ করেন।
এছাড়া মিঠাছড়া ও বামনসুন্দর চালক সমিতির সভাপতি হারুন বলেন,  ব্যাস্ততম সড়কটি এই রকম সুরু হওয়াতে গাড়ীচালকদের অত্যান্ত ভয়ে ভয়ে গাড়ি চালাতে হয়। প্রায় সময় বাস ও বড় ট্রাক ঢুকে পড়লে অন্য গাড়ী চলাচলের আর কোন জায়গা থাকে না। এখন রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বর্ষায় তা আরও মারাতক আকার ধারণ করে। অতিশীঘ্রই রাস্তাটি সম্প্র্রসারণ করা খুব জরুরী।রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ নূর নবী বলেন,অত্র অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুস বিভিন্ন কাজে এই সড়কটি ব্যাবহার করে।স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তাটি অত্যান্ত ব্যাস্ততম ও গুরুত্বপূর্নও বটে।রাস্তাাটির দুই প্রান্তে অবস্থিত দুটি বড় বাজার রযেছে।বড় বড় ব্যাবসায়ীরাও এই বাজারে ব্যাবসা করেন।গ্রামীন সড়কগুলোর মধ্যে এই সড়কটি অন্যতম।অত্র অঞ্চলটি যেমন ব্যাস্ততম ও সম্ভাবনাময় সেই তুলনায় রাস্তাটি অনেক সুরু।ফলে রাস্তাটিতে অনেক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করে।যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে মারাতক দূর্ঘটনা।তাই অতিশিগ্রই প্রসাশন যেন    রাস্তাটি সম্প্রসারন করা জনগনের দুর্ভোগ লাগব করে।
মিঠানালা এলাকার বাসিন্দা ইঞ্জিঃ শাহিদুল এনাম বলেন,নিন্মমানের সরঞ্জাম ব্যাবহারের ফলে রাস্তাটি অল্প দিনের মধ্যে ভেঙ্গে যায়।ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।তার উপর রাস্তাটি অনেক সুরু।বড় বড় গাড়ীর উপযোগী নয় রাস্তাটি,তারপরও এসব বড় গাড়ী চলাচল করে।তিনি জোর গলায় রাস্তাটি সম্প্রসারনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
বামনসুন্দর এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল হক বলেন,বামনসুন্দরের পশ্চিমে রয়েছে সম্ভাবনাময় বৃহৎ চরাঞ্চল ও মৎস খামার।এসব এলাকায় প্রচুর লোক বসবাস করে,অত্র এলাকার মানুষদের জন্য বামনসুন্দর ও মিঠাছরা একমাত্র বাজার।তাদের যাতায়াতের মাধ্যম ও এই সড়কটি।সড়কটি দিয়ে বৃহৎ এই অঞ্চলের অনেক মানুষ যাতায়াত করে।প্রচুর পরিমান ছোট বড় গাড়ীও এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে।সেই তুলনায় সড়কটি অনেক সুরুু।তাই এই সড়কটি প্রশস্থ করা প্রয়োজন।
এই রাস্তাটি সম্প্রসারন অত্র অঞ্চলের বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রানের দাবি হয়ে উঠেছে।বৃহৎ এলাকার এই বসবাসকারী মানুষরা আশা করেন প্রশাসন তাদের এই দাবি পূরন করে তাদের দূর্ভোগ লাঘব করবে।