শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মহসিন কলেজ এইচ,এস,সি ৯২ ব্যাচের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান ফিরে দেখা

Final 2

৩রা ফেব্রুয়ারী ২০১৭, শুধু একটা তারিখ থাকলো না ১৯৯২ সনে উচ্চ মাধ্যমিক বাঁধা পেরুনো সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের ছাত্র ছাত্রী দের জন্যে, হয়ে থাকলো আমৃত্যু মনে রাখার মতো অপার ভালোবাসার অন্যতম একটি তারিখ। যেদিন পুনর্জন্ম ঘটেছিলো সেই ১৯৯২ এ হারিয়ে ফেলা বন্ধুতার ।
চট্টগ্রাম ক্লাবের অডিটোরিয়ামের স্নিগ্ধ আলো গুলো জ্বলে উঠতে না উঠতেই একে একে হাজির হতে শুরু করেছিলো তাঁরার বন্ধু যেন তাঁরার বাগানে। সেকি উল্লাস ফিরে পেয়ে, বন্ধু, বন্ধু কে ছল ছল চোখে, জড়িয়ে ধরে সেকি উচ্ছাস, বাতাসে তখন শুধু আদ্র কিছু শব্দ মালা- বন্ধু কতো দিন পর, আছিস কেমন ……????

সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা বন্ধুদের এই ছুটে ছুটে আসাটা ছিল মনে রাখার মতো, আর এই মনে রাখার কাজটিকে আরও সহজ করে দিতেই আয়োজক বন্ধুরা প্রথমেই অসাধারণ এক শুভেচ্ছা উপহার তুলে দিতে ভুল করেনি ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন, কথা শিল্পের এক মহান যাদুকর মিশফাক রাসেল যার সুনিপুণ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটুকু শুরু থেকে শেষ অবধি শুধু প্রাণবন্তই ছিল না, ছিল প্রানের সুশীল পরশে জেগে ওঠা ভীষণ সবুজ এক বিস্ময়-জলাশয়, যেখানে আর সব বন্ধুরা অবগাহনে মেতে ছিল সব দ্বিধা ভুলে। এই মায়ার কানন রাসেল ছাড়া বুঝি আর অন্য কিছুতেই এমন যাদুর হাসি হাসত না ।
স্বাগত হাসি মুখে এঁকে আহবায়ক সাইফুল ইসলাম যখন মঞ্চে আসলেন, পুরো দর্শক সারি এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে ভালোবাসারই ঋণ পরিশোধে যেন পিন পতন নীরব। সাইফুল বেশ মজা করেই বললেন, তার এবং তার দলের এক প্রায় অসম্ভব স্বপ্ন কে সত্যি করার গল্প। জানালেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও ।
তারপর শুরু হলো উপস্থিত বন্ধুদের জমজমাট সৃতি কথা পর্ব। যেখানে স্মৃতি মধুর রূহ আফজা ঢেলে দিলেন, একে একে সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার নাজমুল হক ডিউক, মেঝবাহ, লূণা, ভীষণ মানবিক ইব্রাহীম, রাজীব কুমার, শিমূল এবং আরো অনেকে, এদের মাঝে দর্শকের হাসি বাধ ভেঙ্গেছিল বুঝি যখন সনজয় জুটির যুগল বন্দী চলছিলো।

এরই মাঝে মাগরিবের নামাজ এবং চা পানের বিরতির পরই নতুন সাহসে আবার শুরু সৃতি কথা, যা প্রানের কথা বলেই ছিল এমন অফুরান।

সূচির শৃঙ্খলে বাঁধা ছিল গান, তাই থামাতেই হলো কথা, শুরু হোল হৈমন্তি রক্ষিত মানের সুরের যাদু। দুটো ধীর লয়ের গানের পরই তিনি পান করালেন, হৃদয় দোলানো-সময় ভোলানো মদির ও সুরা, বসে থাকা আর হলো না, তোলপাড় হয়ে গেলো লুটপাট হয়ে গেলো, মাঝবয়সীদের বয়স টা কোথায়, সময় টা কি কিছুই ছিল না কারো মাথায়, ছিল শুধু উদ্দাম নাচ, ছিল ঘেমে যাওয়া বাতাস, এ যেন যেমন খুশী তেমন ভালোবাসার আসর। এমন নাচ এমন সহযোগিতা শিল্পী এর আগে যেমন পাননি আর তেমন করে পাবেন কিনা, লাজুক কণ্ঠে এই সন্দেহের কথা স্বীকার করেই ফেললেন।

হৈমন্তি কে কিছুটা বিশ্রাম দিতেই এরপর ডেকে নেয়া হলো আর এক আমন্ত্রিত শিল্পী জনি বড়ুয়া কে। বন্ধুর গান, ভালোবাসার গান গেয়ে নাচিয়ে নাচিয়ে মাঝ বয়সী হাঁটুতে ব্যাথা হয়ে গেলেও বন্ধুর জন্য সব বন্ধুর হাসি মুখ দেখতে দেখতে জনি যেন ক্লান্তিহীন হয়ে অসাধারণ সুরেলা গলায় গেয়েই চলেছিলো।

তবু জনিকে থামাতে না চাইলেও থামাতে হলো, কারণ কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অঞ্জন কুমার নন্দী স্যার তখন চলে এসেছেন। স্যার কে সরাসরি মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হলো, তিনি তাঁর সকল ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলেন, তিনি যখন তরুন সূর্যের আলোয় কলেজ আলোকিত করতে আসলেন, এই ব্যাচ টাই ছিল প্রথম, তাই আজ তিনি কি এক মায়ার টানেই চলে এসেছেন ৯২ ব্যাচের এই ছাত্রদের মহা মিলনে। উপস্থিত সবাই তখন জটিল ক্যালরিমিতি শুনতে হবে না এই মহা খুশিতে আরও বেশি গভীর শ্রদ্ধায় স্যারের ভালোবাসার কথামালা অপার হয়েই যেন শুনছিল। আর অধিক খুশিতে খুব সাহস করেই স্যারের আবৃত্তি শোনার বায়নায় গমগম করে উঠলো যেন আয়োজন। স্যার বুঝি পণ করেই এসেছিলেন, নিরাস করবেন না তাঁর প্রিয় ছাত্রদের ভরাট কণ্ঠে তাই শোনালেন ভীষণ প্রিয় কবিতা “কেউ কথা রাখেনি” কান জুড়ানো –মন ভেজানো উপস্থাপনা।

এরপর কেক কাটা পর্ব, স্যার তাঁর প্রিয় সব ছাত্রদের নিয়ে কাটলেন সুবিশাল এক কেক। সবাই মিলে হৈচৈ করে ছবি তুলে, শেষ হল কেক কাটা পর্ব।

মঞ্চে এলো অধুনা ভারত জয় করে আসা রম্য নায়ক আরমান। নিখুঁত উচ্চারণে বোকা বোকা চোখে যে কথার বান মারা শুরু করলো সে, তা থেকে রেহাই পেলো না পুলিশ-ব্যাংকার-টিচার কেউই, হাসির জোয়ারে খুশীর মাতমে পুরো আয়োজনে তখন অন্যরকম উন্মাদনা।

শীতের রাতের গভীরতা কে বিবেচনায় নিয়ে, বিরতিতে যেতেই হলো রাতের খাবারের জন্য।

রাতের ভোজনেও ছিল রাজসিক আয়োজন, রুপচান্দা ভাজা, চিংড়ি কারি, রোস্ট, খাসির রেজালা, পোলাও যেন সব বন্ধুদের সাথে আজকেই ভালোবাসার হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে আয়োজক বন্ধুরা।

এরই মাঝে মঞ্চ প্রস্তুত করে ছেড়ে দেয়া হলো সব বন্ধুর মধ্যমনি আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসানের কাছে। শুরু হোল ভরা বর্ষার আবৃত্তি, যেন যাদু। পুরো আয়োজনে তখন মুগ্ধ চোখ, উত্তাল করতালি। বন্ধুদের প্রাণের নদী পথ ফিরে পেয়ে সে-কি উত্তাল-মাতাল-মাতোয়ারা।

এরপর আবার ফিরে এলেন হৈমন্তী, আয়োজন কে গানের হৈমন্তী সুখে ভাসাবেন বলে। এবার শুধু ভাসালেনই না প্রেমের জোয়ারে মাতালেন ও।

ফিরে পাওয়ার আনন্দ কাহাকে বলে তা বোঝাতেই মঞ্চে এরপর ফিরে এলেন জনি বড়ুয়া। উদ্দাম নাচ তখনো চলছে- যেন চলবেই রাত ভর।

ঘড়ির কাঁটার নিষ্ঠুরতায় গানের খিদে মিটতে না মিটতেই থেমে গেলো গান, শুরু হলো শেষ পর্ব আরমানের সঞ্চালনায় সাইমুর পরিকল্পনায় র‍্যাফেল ড্র। ১০টি পুরষ্কার ছিল। কি ছিল না সেখানে ! স্মার্ট টিভি, স্মার্ট ফোন, ক্রোকারিয আরও কত কি !

সব শেষে মঞ্চে এলো সানমার গ্রুফের জিএম সাদিন, আয়োজকদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতার বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিতে। এই অসাধারণ আয়োজনের আয়োজক ছিলেন, সাইফুল ইসলাম, তামিম ওয়াহিদ আল-হেলাল(সাইমু), টিকলু কান্তি দাস, ওয়াহিদ আহমেদ, রাজিব বড়ুয়া, আহমেদ মহিউদ্দিন শিবলি, রাজিব কুমার, সহিদুল আনাম টিপু, মিশফাক রাসেল, নাজমুল হক ডিউক, জাহাঙ্গীর আলম ও আরও অনেকে।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি,