গাজীপুরে আগামী শনিবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের মাঠে সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক কাজ করার সময় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের হটিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা কয়েকটি গুলি ছোড়ে এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা তোরণ ও বিলবোর্ড ভেঙে ফেলে এবং ব্যানার ও ফেস্টুনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয়। জোটের মঞ্চের জায়গা শামিয়ানা দিয়ে ঘিরে সামনে ব্যানার টানিয়ে দেয় তারা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কলেজ এলাকায় দুই শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।গতকাল বুধবার সকালে জেলা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ফের কলেজ মাঠে অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। পরে তার মাঠের এক পাশে সমাবেশ করার সময় পুলিশ তাদের বের করে দেয়। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে মাঠে ঢোকে। মাঠের পাশে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে তারা। তবে পুলিশ তাদের কোনো বাধা দেয়নি। পরে কলেজের সামনে থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এলাকায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।শনিবারের সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। যেকোনো মূল্যে এই সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। আর বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। যেকোনো মূল্যে খালেদা জিয়ার গাজীপুরে আগমন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।তারেকের বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল গাজীপুর সদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। শনিবারের বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করতে গতকাল সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করেছে তারা। এতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেয়।গতকাল দুপুরে গাজীপুর সদরের রাজবাড়ী সড়কের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। নেতারা এ সময় যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে শনিবরের সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেন। এ সময় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ, কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহেন শাহ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।হান্নান শাহ বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনে শান্তিপূর্ণভাবে শনিবার খালেদা জিয়ার সমাবেশ সফল করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য একই জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকে ও হুমকি দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে। মঙ্গলবার রাতে তারা মোটরসাইকেল বহর নিয়ে ২০ দলীয় জোটের সমাবেশের জন্য বরাদ্দ করা মাঠে ঢুকে। এ সময় তারা ৮-১০টি গুলি ছুড়ে এবং ককটলে বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়ে নির্মাণাধীন তোরণ ও বিলবোর্ড ভেঙে ফেল এবং মাঠে লাগানো ব্যানার ও ফেস্টুনে আগুন দেয়। প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণ না করে মদদ দিচ্ছে। মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়োজিত ডেকোরেটরের ছয় কর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।হান্নান শাহ আরো বলেন, ‘ভাওয়াল কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের জনসভা করার জন্য মাঠ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ আমাদের মাঠে ঢুকতে দিচ্ছে না। কলেজের প্রবেশের গেটে তালা দিয়ে রেখেছে। অথচ পুলিশ পাহারায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ সেখানে মিছিল-সমাবেশ করছে। তবে আমরা যেকোনো ত্যাগের বিনিময়ে শনিবার সমাবেশ করব।’উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে গাজীপুর সদরে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গতকাল সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শনিবার দুই পক্ষের কর্মসূচি প্রসঙ্গে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা সব চেষ্টা চালাব।’পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনসভা নিয়ে কোনো পক্ষকে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না।