সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বাংলাদেশে ব্লগার হত্যায় বৃটিশ নাগরিক আটক: আল জাজিরার অনুসন্ধান

88960_r-3

 

বাংলাদেশে দুই ব্লগার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক বৃটিশ নাগরিক তৌহিদুল রহমানকে মঙ্গলবার নয়; আগেই আটক করা হয়েছে বলে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান এবং মুক্তাদির রশিদ এর অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৮ বছর বয়সী তৌহিদুল লন্ডন থেকে  দেশে ফিরে আসার পর তার বোন ও অসুস্থ মায়ের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। তৌহিদুলের বাড়ির কেয়ারটেকারের বরাতে আল জাজিরা জানায়, মে মাসের ২৮ তারিখে  তৌহিদুলকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায়।সেদিনই এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করে তৌহিদের বোন নাসিরা বেগম। পুলিশের ফাইলেও এই প্রমাণ পাওয়া যায়। ৩ই জুন বৃটিশ হাইকমিশনেও সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি পাঠান তিনি। তার বোন জানান, গত তিনমাস ধরে তৌহিদের অবস্থান কেউ জানতো না। পরে গত সপ্তাহে আরও দুইজন আসামির সঙ্গে মিডিয়ার সামনে তাকে নিয়ে আসে র‌্যাব। র‌্যাব জানায় তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তখনই তিনমাসের মধ্যে প্রথম তার দেখা পায় পরিবার। গ্রেপ্তারকৃত অন্য দুই ব্যক্তি সাদেক আলি মিঠু (২৮) এবং আমিনুল মল্লিক (৩৫)। তাদেরকেও ভিন্ন তারিখে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের বিরুদ্ধে এদেরকে নির্যাতনেরও অভিযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।তবে তৌহিদুলকে আগেই আটক করা হয়েছে এমন অভিযোগ নাকচ করেছেন  র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমে আমরা যা বলেছি সেটাই সত্য। অনেক সময়ই আসামিরা এমন বক্তব্য দিয়ে থাকে। এটা আসলে তাদের কৌশল। তারা নিজেরাই পরিবার থেকে পালিয়ে যায়।এদিকে এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। সংগঠনের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান আল জাজিরাকে বলেন, অনেক পরিবারের কাছ থেকেই এমন অভিযোগ আসে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের পরিবারের সদস্যকে আটক করেছে এবং এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ থাকে। তাদের অবস্থানের কথা কেউই বলতে পারে না। এরপর হঠাৎ একদিন দেখা যায় যে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছিলো।অনেক সময় তাদের খোঁজ কখনোই পাওয়া যায় না বলেও দাবি করেন তিনি। গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব দাবি করে, সেদিন সকালেই রাজধারীর একটি কাবাব রেস্টুরেন্ট থেকে তৌহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা দাবি করেন, যে ১২ ঘণ্টা তাকে আটক রাখা হয়েছিলো সে সময়ই তিনি ব্লগার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নেন। র‌্যাবের দাবি, ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন পাসপোর্টধারী অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড ও সিলেটে অনন্ত বিজয় দাস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তৌহিদুল।তবে এসকল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৌহিদুলের জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তার বোন নাসিরা বেগম। তিনি বলেন, সে খ্বুই ধার্মিক ব্যক্তি। সে খুব অসুস্থও ছিলো। তার পক্ষে হত্যার পরিকল্পনা কোনভাবেই সম্ভব নয়। সে সারাক্ষণ বাসাতেই থাকতো। ২০১৩ সালে তার মা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরই সে বাংলাদেশে ফিরে আসেও বলে জানান তিনি। তৌহিদুলের বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী মাহের আলি আল-জাজিরাকে বলেন, ২৮শে মে কয়েকজন লোক এসে তৌহিদুলকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, চারজন লোক গেটের সামনে এসে আমাকে তৌহিদুলের বাসার ঠিকানা জানতে চায়। এরপরে তিনি কেয়ারটেকার স্বপন বড়ুয়াকে খবর দেন। স্বপন বড়ুয়া তাদের ফ্ল্যাটে ঢোকার চেষ্টা করলেও তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, আমি ঢুকতে না পেরে নিচে চলে যাই এবং ইন্টারকম দিয়ে তৌহিদুলকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করি যে লোকগুলো কারা ছিলো। সেসময় তারা ডিবি’র লোক বলে জানায়। আমি তাকে তার বোনকে ফোন দিতে বলি।নাসিরা বলেন, তিনি কাজ করার সময় একটি ফোন পান যেখানে তার ভাই জানান যে কিছু মানুষ তাকে নিতে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই, তাদের মধ্যে একজন বলে যে আমার ভাইকে আধঘণ্টার জন্য জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যেতে হবে। আমি তখন বলি যে সে অসুস্থ তাকে এখন নিয়ে যাবেন না। আমি তার নাম জানতে চাইলে তিনি ফোন রেখে দেন। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি বৃটিশ হাইকমিশনের একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি যে আমরা একজন বৃটিশ নাগরিককে সহায়তা করার চেষ্টা করছি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে আরেকজন বৃটিশ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো যে তিনি বাংলাদেশ থেকে আইএস এর সদস্য সংগ্রহ করতে এসেছেন। তার পরিবারও দাবি করে যে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আগেই তাকে আটক করা হয়েছে। তৌহিদুলের ছোটো ভাই ওয়াহিদুর রহমান বলেন, আমি শুধু জানতে চাই যে ৮১ দিন ধরে আমার ভাইকে কোথায় রাখা হয়েছিলো।