সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বর্ষবরণে চারুকলায় কারও চোখে ঘুম নেই

1_85353
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো হে’- আর মাত্র ৭ দিন পরই পহেলা বৈশাখ। ১৪২১ বাংলা বছরের প্রথম দিন। বৈশাখের প্রথম দিন ঘিরে গান-বাদ্যি আর উৎসব আমেজে মেতে ওঠা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘উদ্ধত কর, জাগ্রত কর, নির্ভয় কর হে।’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনে নিরলস পরিশ্রম করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এ জন্য তাদের কারও চোখে যেন ঘুম নেই।প্রতিবারের মতো এবারও বাঙালি তার ভেতরে লালিত সংস্কার আর সংস্কৃতির মিশেলে পালন করবে এই উৎসব। পহেলা বৈশাখ বাংলা সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। দিনটিকে বরণ করে নিতে আকুল হয়ে থাকে গোটা জাতি। পহেলা বৈশাখে সারা দেশেই উৎসবের ঢেউ জাগে। প্রাণে প্রাণে মহামিলনের এই উৎসবে সবাই কণ্ঠ মিলিয়ে গায় ‘এসো হে বৈশাখ এসো।’বাংলা বছরের প্রথম দিনে ইট-পাথরের এই রাজধানীও সাজে ভিন্ন সাজে। রাজধানীতে পহেলা বৈশাখের মূল আয়োজনে থাকে রমনার বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতি আয়োজন। যেখানে বিশুদ্ধ সুরের ছোঁয়ায় মানুষ তার আপন সত্তা খুঁজে পায়। এছাড়া নতুন বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছায়ানটের প্রভাতি আয়োজন শেষ হতেই মানুষের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে এই শোভাযাত্রায়। আর এর বিশেষত্ব হল প্রতি বছর সমসাময়িক বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন থিম ফুটিয়ে তোলা । মঙ্গল শোভাযাত্রা সার্থক করে তুলতে চারুকলাজুড়েই চলছে জোর প্রস্তুতি। চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা তাদের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দিন-রাত কাজ করে চলেছে। অন্যান্য বারের মতো এবারও শোভাযাত্রা তদারকির দায়িত্বে রয়েছে মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের দারুণ ব্যস্ততা। নানারকম ছবি আঁকছেন তারা। মূলত চারুকলার এই আয়োজনটিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়ে থাকে রাজধানীর বৈশাখ বরণের কার্যক্রম। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাঁসকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করছে চারুকলা অনুষদ। বাঙালির ঐতিহ্যের যেসব খেলনা বিলুপ্ত হয়ে গেছে সেসব খেলনাকে এবারে নতুন করে তুলে ধরা হবে।বৈশাখী আয়োজনে বাঙালি সংস্কৃতিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করার চেষ্টা থাকবে বলে জানান চারুকলা অনুষদের পহেলা বৈশাখের প্রস্তুতির সঙ্গে সম্পৃক্ত চারুকলার শিক্ষার্থী ওবায়দুল ইসলাম মিঠু। ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধারে প্রত্যয়ী চারুকলার এই শিক্ষার্থী যুগান্তরকে জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাঁসকে প্রাধান্য দেয়া হলেও বরাবরের মতো বাংলা সংস্কৃতির সবকিছুই থাকবে এবারের আয়োজনে। সরাচিত্র, খেলনা, পুতুল, মা ও শিশু, বাঘ, হরিণ, মাছ, মাছের ঝাঁক, মুখোশ, হাতপাখা, শখের হাঁড়ি, বিড়াল, লক্ষ্মীপেঁচাসহ আরও নানা ধরনের শিল্পকর্ম পহেলা বৈশাখ ১৪২১-কে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে তুলবে বলেও মনে করেন তিনি। সারা বিশ্বের বাঙালিদের কাছে গৌরবোজ্জ্বল বাংলা সংস্কৃতি তুলে ধরার প্রত্যয়ে প্রতিদিন চারুকলার বিভিন্ন বিভাগের ২০০ শিক্ষার্থী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান চারুকলার আরেক শিক্ষার্থী বাপ্পী। বাংলা সংস্কৃতির নানা ধরনের তৈজসপত্রের পাশাপাশি এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় আরও রয়েছে জলরংসহ আরও নানা মাধ্যমের চিত্রকর্ম। বাঙালি সংস্কৃতির তাৎপর্য তুলে ধরাই এর লক্ষ্য। এ লক্ষ্যার্জনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের এখন যেন দম ফেলার অবস্থাও নেই।