সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বঙ্গবন্ধু হত্যা : জাসদ ও শফিউল্লাহর কড়া সমালোচনায় শেখ সেলিম

selim-safiullah_312942

 

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জাসদ ও সাবেক সেনা প্রধান কেএম শফিউল্লাহর কড়া সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। রোববার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় শেখ সেলিম জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের সময় উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের কার কী ভূমিকা ছিল তা জানতে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি করেন। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ওই দিন কিসের জন্য শফিউল্লাহ নীরব ছিলেন? জাসদ এ হত্যাকাণ্ডের পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।ধানমণ্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ ও নিউমার্কেট থানা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ধানমণ্ডি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমেদ, কলাবাগান থানার সভাপতি নাজমুল করিম, হাজারীবাগ থানার সভাপতি ইলিয়াছুর রহমান, নিউমার্কেট থানার সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন প্রমুখ।শেখ সেলিম তৎকালীন সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘উনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, আপনি বাসা থেকে একটু বেরিয়ে যাইতে পারেন না? বঙ্গবন্ধুকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন! বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আর্মির ভয়ে বাসা থেকে পালাননি, আর নিজের বানানো আর্মি দেখে পলায়ন করবেন!’ শেখ সেলিম সাবেক সেনা প্রধানকে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ক্যান তুমি সেদিন আসতে পারলা না?’শেখ সেলিম আরও বলেন, ‘শেখ মণি মারা যাওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। শফিউল্লাহ, মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। সে আর্মি চিফ ছিল। মণি ভাই মারা যাওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধু মারা গেলেন। কেউ বলে ৬টা ৪৭ মিনিট। বঙ্গবন্ধু সবার কাছে ফোন দিয়েছেন। কর্নেল শাফায়াত ছুটে আসছিলেন। আর উনি (কেএম শফিউল্লাহ) বসে বুড়ো আঙুল চুষেছেন।’ সেলিম বলেন, ‘এটা (১৫ আগস্ট) তো কোনো সেনা অভ্যুত্থান ছিল না। বিপথগামী সেনা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনারা এটা করেছিল। যখন তারা অস্ত্র নেয়, তখনই তাদের কোর্ট মার্শাল হওয়া উচিত ছিল। উনি (শফিউল্লাহ) এগিয়ে আসলেন না। কেন ওই দিন বঙ্গবন্ধুর বাসার দিকে শাফায়াত জামিলকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচখানা, দশখানা ট্রাক আসে নাই। কিসের জন্য শফিউল্লাহ নীরব ছিলেন?’বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানও জড়িত অভিযোগ করে শেখ সেলিম বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ডেপুটি চিফ ছিলেন। তিনিও হত্যাকাণ্ডে জড়িত। এখন বিস্তারিত কিছু বলব না। জিয়াউর রহমান, শাফায়াত জামিল, খালেদ মোশাররফ কে কী করেছিলেন এ প্রশ্নের জবাব একদিন দিতে হবে। এজন্য একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। দেড়শ’ সেনা কর্মকর্তার কাছে কিভাবে দেড় লাখ সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করল?’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ৬টার পরে মারা গেলেন আর শফিউল্লাহ রেডিও স্টেশনে গিয়ে বিপথগামী সৈনিকদের সঙ্গে গেলেন। তিনি কেন অর্ডার দিলেন না, যারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে গেছে, তারা আর ঢুকতে পারবে না। এরা ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে এদের অ্যারেস্ট করা হোক। অ্যারেস্ট করা হল না। ডালিম গেল, নূর গেল, এরা কিন্তু সবাই অবসরপ্রাপ্ত। ওইখানে গিয়ে তাকে (শফিউল্লাহ) নিয়ে আসল। শফিউল্লাহ বললেন, খুনি মুশতাকের সরকারের প্রতি উনি আনুগত্য স্বীকার করবেন। ষড়যন্ত্রকারীদের হুশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ সেলিম বলেন, রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করেছে তারা কখনও ভালো থাকতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির ওপর পড়েছিলেন, জিয়াউর রহমানও সিঁড়ির ওপর পড়ে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তার (জিয়া) এমন করুণ পরিণতি হতো না। খালেদ মোশাররফও ওই পথে চলে গেছেন।’জাসদের কঠোর সমালোচনা করে শেখ সেলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেদিন মারা যান, সেদিন তাহেরও রেডিও স্টেশনে গিয়েছিল। তাহের জাসদের গণবাহিনীর প্রধান ছিল। একটা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সে গণবাহিনী করেছিলেন। যাকে বঙ্গবন্ধু সহানুভূতিশীল হয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান করেছিলেন, সেও ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরবর্তীতে দেশবাসী দেখেছে ক্ষমতার ভাগাভাগিতে তাহেরের কী পরিণতি হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘জাসদই বঙ্গবন্ধুর হত্যার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। এই মুক্তিযুদ্ধের নামধারী জাসদ কী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, কী বিপ্লব ঘটাবে? যেহেতু জাসদের কর্মীরা মুজিববাহিনী, মুক্তিবাহিনী, গণবাহিনীতে ছিল। স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনোই বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না। যদি এই গণবাহিনী, জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল রহস্য বের করতে হবে, কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল।