রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ফের বেড়েছে নদীর পানি, নতুন এলাকা প্লাবিত

01_26816

দেশের প্রধান নদনদীগুলোর পানি গতকালও বেড়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলার পানি গতকাল বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে আজ মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।এদিকে পদ্মায় ভয়াবহ ভাঙন এবং অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী, লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানারী এলাকায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন তীররক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রায় ১০ দিন ধরে পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে লৌহজংয়ের মাওয়া ঘাট এলাকা, কুমারভোগ, খরিয়া, শ্রীনগরের ভাগ্যকুল বাজারসহ নদীতীরবর্তী ব্যাপক এলাকা পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে লৌহজংয়ের কুমারভোগ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ প্রায় দুই শতাধিক বাড়িঘর। সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ৩৩ ঘণ্টায় নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিকাল ৪টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, বড়াল, ইছামতি ও ফুলঝোড়ের পানি ফুলেফেঁপে উঠছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, টানা বৃষ্টি ও জোয়ারে কারণে পানি আরও বাড়তে পারে। এদিকে জেলা সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী উপজেলার প্রায় ৬০ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দুঃসহ জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি অনেক গ্রামে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা পেটের পীড়া, হাত-পায়ে চুলকানিও দেখা দিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন জানান, এ পর্যন্ত জেলার বন্যাকবলিতদের জন্য সরকারিভাবে ২৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যমুনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জামালপুরের সাত উপজেলার ২ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ পেঁৗছেছে চরমে। দুর্গত এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর সড়কের ডাইভারশন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জামালপুর-মাহমুদপুর সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বন্যায় জামালপুরের ১৬ হাজার ৩১১ হেক্টর জমির রোপা আমন, বীজতলা, আউশ, সবজি খেত তলিয়ে গেছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল হক খান জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় এখন পর্যন্ত ১৬৪টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার দুই শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যায় চলতি মৌসুমের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির আউশ-আমন ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১০০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন। এদিকে গতকাল ভোরে টাঙ্গাইল শহররক্ষা বাঁধের ঘারিন্দা ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামের অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে নতুন করে পানির নিচে তলিয়ে গেছে আরও ৩০ গ্রাম। চরে আটকে পড়া কয়েক হাজার মানুষ ১৬ দিন ধরে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় কলা গাছের ভেলা, উঁচু মাচা ও বেঁধে রাখা নৌকায় দিন কাটাচ্ছে অনেক পরিবার। এদিকে চিলমারীতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫৭ ইউনিয়নের ৩ শতাধিক গ্রামের আড়াই লাখ মানুষ। ভেসে গেছে তিনটি মৎস্য প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার মাছ। বন্যায় জেলার প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ও মৌসুমি ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁয় বন্যার পানি দুই দিন স্থিতি থাকার পর ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যাপক এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। দিনমজুর ও হতদরিদ্র লোকজন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পানিবাহিত রোগব্যাধি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচটি ইউনিয়নের একটি উচ্চবিদ্যালয় ও ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, দুর্গত এলাকায় পাঁচটি মেডিকেল টিম চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তৃতীয় দফা বন্যায় সার্বিক পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে প্রায় ৮০টি গ্রাম পানিবন্দী হয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে এলাকাবাসী। উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

উৎস- বাংলাদেশ প্রতিদিন