খবরিকা ডেক্সঃ দুই দিবসকে ঘিরে জমজমাট ফুলের বাজার। আজ পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিনে দেশজুড়ে চলবে বসন্ত উৎসব। বাসন্তী সাজের অন্যতম অনুষঙ্গ ফুল। আগামীকাল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসা দিবস। এদিনও প্রিয়জনের সঙ্গে ভালোবাসা বিনিময় হয় ফুলের মাধ্যমে। এই দিনকে সামনে রেখে প্রস্তুত ফুল ব্যবসায়ীরা। গতকাল থেকেই জমজমাট ছিল ফুলের বাজার। গতকাল রাজধানীর শাহবাগ বটতলা ফুল মার্কেট, আগারগাঁও, খামারবাড়িসহ একাধিক মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। ভিন্ন জাতের ভিন্ন রঙের ফুল দিয়ে দোকান সাজিয়েছেন তারা। শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও আমরা পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসে প্রচুর ফুল বিক্রি করার প্রস্তুতি নিয়েছি। এ বছর আমি আশা করছি প্রায় দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে পরিস্থিতি ভালো হলে আরো বেশি বিক্রি হতে পারে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমাদের বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। যেভাবে ক্রেতারা আসছে আশা করি আমাদের লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারবো। ফুলতলা ফ্লাওয়ার সপের বিক্রয়কর্মী মো. শাহাদাত হোসেন জানান, লিলি, থাই গোলাপ, কিসিমসিমা মিম, কানডিশন, অর্কিড, লিমু, গেলোডিয়াস, রজনীগন্ধ্যা, ক্যালনডোলা, চেরিগেণ্ডা, গাঁদা, ওয়েসস্টার, মামফুলসহ দেশি-বিদেশি নানান ফুলে আমরা দোকান সাজিয়েছি। এই সময়টা সব ধরনের ফুলের বেশি চাহিদা থাকে। আর বেশি দামে বিক্রি করা যায়। সারা বছর যেমন তেমন পহেলা বৈশাখ আর ভালোবাসা দিবসে আমাদের দোকানে দম ফেলার সময় পাওয়া যায় না। আলাউদ্দিন পুষ্পালয়ের মালিক বলেন, এই দুইদিনে সব ধরনের ফুলের খুব চাহিদা থাকে। তাই আমরা দেশি-বিদেশি ফুল আমদানি করে থাকি। দেশের যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও দেশের বাইরে চায়না ও ভারত থেকে ফুল আমদানি করি। আর এখন আমাদের বেশি দামে ফুল কিনতে হয়। সেজন্য একটু বেশি দামে আমরা বিক্রি করি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিবিএ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিলম ফাইজা এসেছেন পহেলা ফাল্গুনের জন্য ফুল কিনতে।
তিনি বলেন- আমাদের ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান হবে, তাই ফুলের দরকার। আজকে এসে আগাম কিনে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক বছর পহেলা ফাল্গুনে এসে আমি ফুল পাইনি। কালকে ফুলের দাম অনেক বেশি হতে পারে। একই ইউনিভার্সিটির আরেক শিক্ষার্থী সামন্থা আক্তার বলেন, আমি প্রতি বছর পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের জন্য এখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যাই। আমি এবং আমার বন্ধুদের প্রতি বছরই অনেক পরিকল্পনা থাকে। আমরা অনেক মজা করি। সেজন্য এই দুইটা দিনে আমাদের ফুল লাগবেই। তবে প্রতি বছরই এই সময় অনেক বেশি দামে ফুল কিনতে হয়। অন্য সময় যে চায়না গোলাপ ৬০ টাকায় কিনতাম এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকায়। আরো কিছু ফুল কেনার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সেগুলোর অনেক দাম । অর্কিড নীল প্রতিটি ফুল ১৫০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না। শেখ জামালের সাবেক ক্রিকেটার সুমন ইমরান বলেন ঢাকার অনেক জায়গা থেকেই প্রায়ই আমার ফুল কিনতে হয়। আজও আমি অনেক ফুল কিনেছি। কিন্তু পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের জন্য ফুলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। একই কথা বলছেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী তানিয়া আক্তার। তিনি বলেন- ফুলের দোকানগুলোতে অনেক ফুল আছে কিন্তু দাম অনেক বেশি। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বেশি ফুল কেনা যায় না। কারণ দাম অনেক বেশি। তবে একাধিক ফুল ব্যবসায়ী ফুলের বাড়তি দামের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমরা আসলে দাম বেশি নিচ্ছি না। পরপর দুইটি বিশেষ দিন হওয়ার কারণে বাজারে ফুলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। আমাদেরকে বেশি দামে ফুল কিনতে হয়। তাই আমরা বেশি দামে বিক্রি করি। ক্রেতারা আমাদেরকে অযথাই ভুল বুঝে। তবে এই দুইদিনে আমাদের অনেক বেশি ফুল বিক্রি হয়। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ফুল বিক্রি করে ১২ বছর বয়সী জয়। সে বলে এই দুইদিন হলো ভালোবাসার দিন। আমার অনেক লাভ হবে এই দুইদিনে। দোয়েল চত্বরে ফুল বিক্রি করে ফুলি। সে বলছে একই কথা। ভালোবাসার দিন আইলে আমার অনেক বেচা-বিক্রি হয়। প্রতিটি গোলাপ আমি ৩০ টাকা ও ৪০ টাকা বিক্রি করবো কালকে। সেজন্য আজকে অনেক ফুল কিনে রেখেছি।