রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

প্রিজন সেলে আবদুল আলীমের মৃত্যু

39176_f2

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আজীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম ইন্তিকাল করেছেন
(ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। গতকাল দুপুর সোয়া একটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গতকাল বিকালে তার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বিএসএমএমইউ’র হিমাগারে রাখা হয়েছে। আজ তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার এসআই ফেরদৌস আলম। আলীমের পরিবারের পক্ষে তার ছেলে ফয়সাল জানান, গতকাল বিকালে আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তরের কথা ছিল। সে অনুযায়ী সন্ধ্যায় বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকার মসজিদে প্রথম জানাজার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আইনি জটিলতা ও সময় স্বল্পতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। এসআই ফেরদৌস জানান, আমরা কাল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। আলীমের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ বনানী প্রথম জানাজা শেষে তার লাশ জয়পুরহাটে আনা হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরে তার ফুসফুস ও কিডনি কাজ করছিল না। ডায়াবেটিস ও রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গত বৃহস্পতিবার তাকে বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেল থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার থেকে প্রিজন সেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী জানান, গত মঙ্গলবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শে সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আবদুল আলীমের পরিবারের পক্ষে ছেলে ফয়সাল জানান, বিএসএমএমইউ হাসপাতালে বাবার চিকিৎসা নিয়ে আমাদের কোন অভিযোগ নেই। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তরের জন্য আবেদন করা হলেও আইন অনুযায়ী তার মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আজ পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
বিএসএমএমইউতে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন ম্যাজিস্ট্রেট অমিতাভ পরাগ তালুকদার। আলীমের ছেলে ফয়সাল জানান, বাবার মৃত্যু যেহেতু ক্যানসারের কারণে হয়েছে সেহেতু ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছিলাম।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে গত বছরের ৯ই অক্টোবর আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। সেই থেকে তিনি বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৭টি অভিযোগে তার বিচার শুরু হলে হত্যা-গণহত্যার ৯টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তার শারীরিক-মানসিক অক্ষমতার কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ না দিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে ৬টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এবং বাকি দু’টিতে প্রসিকিউশন কোন সাক্ষী হাজির না করায় সেগুলোতে যে কোন মতামত দেয়া হয়নি বলে রায়ে উল্লেখ করেন ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আলীমের করা আপিল সুপ্রিম কোর্টে রয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনালে বিচারধীন অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ কে এম ইউসুফের মৃত্যু হলে তার মামলার সেখানেই সমাপ্তি ঘটে।
একাত্তর সালে জয়পুরহাটে রাজাকার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাপক নিধনযজ্ঞ চালানোর অভিযোগে ২০১২ সালে ২৭শে মার্চ আলিমকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বছরের ১১ই জুন তার আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়। বিচার চলাকালে বয়স বিবেচনায় কয়েকটি শর্তে তিনি জামিনে ছেলের বাসায় ছিলেন।