শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী কূটনীতিকের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীর মামলা

16149_f2

 

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশী কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফাহিমা তাহসিনা প্রভার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদেরই গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ রানা। ম্যানহাটন ফেডারেল কোর্টে মামলায় বলা হয়েছে, মাসুদকে তাদের বাসায় রাখা হয়েছিল ‘ক্রীতদাসের মতো’। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তাকে দিয়ে একটানা কাজ করাতেন তারা। সপ্তাহে সাতদিনই এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে হতো। কোন ছুটি ছিল না। খাবার দেয়া হতো উচ্ছিষ্ট। থাকার জায়গা হতো রান্নাঘরে অথবা ওই রকম কোন একটি স্থানে। ঘর থেকে বের হতে দেয়া হতো না। তাকে ভয় দেখানো হতো হত্যার। মাসুদের পাসপোর্টও তারা কাছে নিয়ে রাখে। এসব অভিযোগে মামলা হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ তা বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, মাসুদকে মাসে ৩০০০ ডলার বেতন দেয়ার প্রলোভন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী। তাদের বাসায় ওই ‘ক্রীতদাসের মতো’ পরিস্থিতিতে তাকে বাধ্য হয়ে কাটাতে হয়েছে ১৮ মাস বা দেড় বছর। এর বিনিময়ে তাকে ১০ সেন্টও বেতন দেয়া হয় নি। এ নিয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্টের শিরোনাম ‘ম্যান সোল্ড অন ড্রিম জব এনস্লেভড বাই বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট: স্যুট’। অর্থাৎ স্বপ্ন পূরণের চাকরির প্রলোভনে পরিচারক কিনে দাস বানিয়েছেন বাংলাদেশের কূটনীতিক। নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজের শিরোনাম ‘বাংলাদেশী ম্যান সেস হি ওয়ার্কড ইন স্লেভ-লাইক কন্ডিশনস ফর কনসাল জেনারেল ইন ডব্লিউ. ৫৭স্থ স্ট্রিট এপার্টমেন্ট: স্যুট’। অর্থাৎ ডব্লিউ ৫৭স্থ স্ট্রিটের এপার্টমেন্টে কনস্যুলার জেনারেলের বাসায় ক্রীতদাসের মতো কাজ করানো হতো- এমন অভিযোগ করেছেন এক বাংলাদেশী। অনলাইন এমিরেটস-এর শিরোনাম ‘কনসাল জেনারেল, ওয়াইফ ইন অ্যাবিউজ ক্লেইমস: ১৭ আওয়ারস এ ডে উইথ নো অফ, থ্রেট টু কিল’। অর্থাৎ কনসাল জেনারেল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ: বিরতি ছাড়া দিনে ১৭ ঘণ্টা কাজ করানোর অভিযোগ, হত্যার হুমকি। মাসুদ পারভেজ রানার পক্ষে এ মামলাটির আইনজীবী ডানা সুসম্যান। ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবড়াগাড়ের বিরুদ্ধে তার পরিচারিকাকে কম বেতন দেয়ার মামলায় পরিচারিকার পক্ষে আইনি লড়াই করছেন এই আইনজীবী। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ম্যানহাটনে বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে বসবাস করেন বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফাহিমা তাহসিনা প্রভা। বিস্তৃত পরিসরের এ বাসাটির ভাড়া মাসে ৮০০০ ডলার। এই বাড়িতে নেয়ার পর মাসুদকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হতো না। তাকে প্রহার ও হত্যার হুমকি দেয়া হতো। বলা হতো, বাইরে বেরুলে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে তাকে। হত্যাও করতে পারে। মাসুদ তার অভিযোগে বলেছেন, তাকে কমপক্ষে দু’বার শারীরিকভাবে নির্যাতনও করা হয়েছে। মামলায় বলা হয়েছে, প্রতি রাত ১১টার মধ্যে নিত্যদিনের কাজ শেষ করতে হতো মাসুদ রানাকে। কনসাল জেনারেল ও তার স্ত্রী ফাহিমা কখনও বাড়ির বাইরে গেলে অপেক্ষায় থাকতে হতো মাসুদকে। তারা ফিরলে তাদের কি কি প্রয়োজন তা তাকেই দেখভাল করতে হতো। তারপর রান্না করতে হতো তাদের জন্য। এমন অবস্থায় পড়ে মাসুদ রানাকে রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো। প্রতি মাসে বেশ কয়েকবার তারা বাসায় পার্টি দেন। লোকজনের জমায়েত হয়। তখন ওইসব অতিথির জন্য খাবার রান্নার দায় পড়তো একা মাসুদের ওপর। অতিথিরা চলে গেলে বাসনকোসন পরিষ্কার করতে হতো তাকেই। যখন এমন অনুষ্ঠান হয় বাসায় তখন রাত তিনটার আগে কাজ শেষ করতে পারেন না তিনি। ই. ৪৩তম স্ট্রিটে বাংলাদেশ কনস্যুলেট। সেখানেও মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। সেখানকার রান্নাও করতে হয় মাসুদ রানাকে। নিজ হাতে এত রান্না করলেও তাকে সেই খাবার দেয়া হয় না। মামলায় বলা হয়েছে, তাকে দেয়া হতো পড়ে থাকা অথবা উচ্ছিষ্ট খাবার। মাসুদ রানাকে বাংলাদেশী এই কূটনীতিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তার সৎপিতা। তিনিই তাকে যুক্তরাষ্ট্রে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ পেতে সুপারিশ করেছিলেন। বলা হয়েছিল, প্রতিদিন কাজে বিরতি পাবেন কিছু সময়। ভিসা নবায়ন করতে সহায়তা করবেন ওই কূটনীতিক দম্পতি। মামলায় বলা হয়, এ প্রত্যাশায় তিনি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক যান। তারপরই দেখতে পান যেমনটা বলা হয়েছিল আসলে মূল কাজ তার থেকে অনেক ভিন্ন। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকা বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যোগাযোগ করেছে। তবে সেখান থেকে তাৎক্ষণিক কোন বক্তব্য মেলে নি।