বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

দেশে শিশুসহ বেড়েছে যক্ষা রোগী শনাক্তের হার

jokha20170324091233

ডেস্ক : ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে শিশুসহ যক্ষা রোগীর শনাক্তকরণের হার বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে শিশু যক্ষা রোগী ছিল ৮ হাজার ১০৪ জন, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার ২৯১ জনে।শিশুসহ ২০১৬ সালে দেশে মোট ২ লাখ ২৩ হাজার ৯২২ জন যক্ষা রোগী শনাক্ত করা হয়। এরমধ্যে ৯ হাজার ৭০০ জন ছিলেন ওষুধ প্রতিরোধী বা এমডিআর রোগী। যক্ষা শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এ সংখ্যা বেশি চিহ্নিত হয়েছে।

জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।

২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ঐক্যবদ্ধ হলে সবে, যক্ষামুক্ত দেশ হবে।’

২০১৬ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল টিবি রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর লাখে ৪৫ জনের মৃত্যু হয় যক্ষার কারণে। প্রতিবছর এ রোগে নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে লাখে আরও ২২৫ জন রোগী।

এছাড়া কফে জীবাণুযুক্ত ফুসফুসের যক্ষা চিকিৎসার সাফল্যের হার ৯৪ শতাংশ। ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা চিকিৎসার সাফল্যের ক্ষেত্রে বিশ্ব যেখানে সাফল্যের হার ৫২ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে সাফল্যের হার ৭০ শতাংশ।

জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) কর্মকর্তারা জানান, ২০৩৫ সালে যক্ষায় মৃত্যুর হার ৯৫ শতাংশ ও প্রকোপের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে চায় সরকার।  এ লক্ষ্যে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে ব্র্যাকসহ  ২৭ টি বেসরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

এনটিটিপি’র (ডিআর-টিবি,টিবি/এইচআইভি অ্যান্ড টিবি-আইসি) মুখ্য কর্মকর্তা ডা. নাজিস আরেফিন সাকি  বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে যক্ষা শনাক্তের হার গতবারের চেয়ে বেড়েছে। দেশে বর্তমানে যক্ষা শনাক্তের হার ৬১ শতাংশ। ২০১৫ সালে এই চিত্র ছিল ৫৭ শতাংশ। তবে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত কার্যক্রমের ফলে যক্ষা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সাফল্য এলেও বিভিন্ন কারণে এখনও ‘নিখোঁজ’ থাকছে ৩৯ শতাংশ।

এনটিপির লাইন ডিরেক্টর ডা. রুসেলি হক বলেন, ‘১৯৯৩ সাল থেকে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে আমরা বর্তমানে প্রতি লাখে ৭৭ জন কফে জীবাণুযুক্ত ফুসফুসের যক্ষা রোগী নির্ণয় করতে পারছি। বর্তমানে ৯৪ শতাংশ ফুসফুসের যক্ষায় আক্রান্তের চিকিৎসায় সাফল্য এসেছে।

তবে যক্ষা নিয়ন্ত্রণে যে সাফল্য এসেছে তা অব্যাহত রাখতে হলে চিকিৎসার গুণগত মান নিশ্চিত করার পক্ষে মত দেন তিনি।

এ চিকিৎসক বলেন, এটা (যক্ষা নিয়ন্ত্রণ) বর্তমান সরকারের একটা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিও বটে। সেজন্য শিশুসহ অন্যান্য যক্ষা রোগী শনাক্তকরণে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে জিন এক্সপার্ট মেশিন স্থাপন ও অন্যান্য আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দিয়েছি।

ব্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রধান ডা. শায়লা ইসলাম বলেন, ‘যক্ষা নিয়ন্ত্রণে আমাদের এখন শহরে অনেক বেশি কাজ করতে হবে। কারণ শহরে বিভিন্ন শ্রেণীর লোক বাস করে বলে যক্ষা শনাক্ত একটু কঠিন। এজন্য আমরা প্রাইভেট ডাক্তারদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক স্থাপন করছি। এতে যক্ষা শনাক্তকরণ আরও সহজ হবে।’

তবে যক্ষা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এরমধ্যে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত হাসপাতাল না থাকা, চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত দক্ষ স্টাফের স্বল্পতা, ভাসমান মানুষের কারণে বসতি ও শহরে যক্ষা শনাক্ত ও চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতা, দুর্গম ও চরাঞ্চলে সহজে চিকিৎসা সেবা দিতে না পারা, প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে রেফার করে যক্ষা রোগীকে  জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে না পাঠানো, জিন এক্সপার্ট মেশিনের স্বল্পতার কারণে বেশি সংখ্যক এমডিআর রোগী শনাক্তের বাইরে থাকা, গার্মেন্ট বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহজে চিকিৎসা সেবার প্রবেশগম্যতা না থাকা উল্লেখযোগ্য।

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবাইকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে এবার যক্ষা দিবসে শুক্রবার রাজধানীতে শুক্রবার এক শোভাযাত্রা করেছে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ও ব্র্যাক অন্যান্য সহযোগী সংস্থা।

রাজধানীর শাহবাগে সকাল সাড়ে ৭ টায় শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।