রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

টাইগারদের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

image_212272.tamim 50 copy
একটি জয়ের জন্য অপেক্ষা ছিলো ১৬ বছরের। আরেকটি জয়ের মাঝপথে কাটলো মাত্র একটি দিন। আর নতুন সূর্য ওঠার দিনে মিরপুরে ফ্লাড লাইটের আলোয় ইতিহাস রচনা করলো টাইগাররা। আগের অপেক্ষাটি ছিলো পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের। আর নতুন ইতিহাসটা পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে নিলো টাইগাররা। তাতে ১ ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয়ার উল্লাসে মাতলো গোটা দেশ। তামিম ইকবালের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশকে। সাথে মুশফিকুর রহিমের বুদ্ধিদিপ্ত ব্যাটিং বাংলাদেশকে নিয়ে গেলো নতুন উচ্চতায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামে বসেই দেখলেন সোনার ছেলেদের ক্রিকেট ইতিহাস রচনা। দেশ গৌরবে নিজের হাতেই পতাকা ওড়ালেন প্রধানমন্ত্রী।
কিভাবেই না জিতলো বাংলাদেশ! ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৩৯ রানে পাকিস্তানকে আটকে দিয়েছিলো বোলাররা। ৩৮.১ ওভারে জয় তুলে নিয়ে বাংলাদেশ জানিয়ে দিলো তাদের শ্রেষ্ঠত্বের কথা। টাইগাররা ৩ উইকেটে ২৪০ রান করার পর মিরপুর হয়ে গেল উৎসবের জায়গা। আর ঢাকা হয়ে গেলো উৎসবের নগরী। গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছেন সেই উৎসবের রং। এই প্রথম যে পাকিস্তানকে সিরিজ হারালো বাংলাদেশ! র‌্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তানের অবস্থান ৭ এ। বাংলাদেশ ৯ নম্বরে। কিন্তু এই ম্যাচে বাংলাদেশ এক নম্বরের মতো করেই খেললো। আসলে সিরিজের দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব ফুটে উঠেছে বলে বলে।
পাকিস্তান টার্গেট দিয়েছিলো ২৪০ রানের। আজকালকার ওয়ানডের হিসেবে মামুলী টার্গেটের মতো। কিন্তু সিরিজ জয়ের টার্গেট যখন সামনে তখন তো এই টার্গেট মামুলী নয় কোনো। কিন্তু সৌম্য সরকার শুরুতেই যেভাবে হামলে পড়েন তাতে বোঝা যায় টাইগাররা অনেক অপেক্ষা করবে না। সৌম্য ১৭ রান করে বিদায় নিলেও ছন্দ কাটে না। আগের ম্যাচে ১৩২ রান করেছিলেন তামিম। যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই যেন তার শুরুটা হয়েছে এই ম্যাচে। প্রথম ওয়ানডেতে ধীর গতিতে সেট হয়ে দ্রুতগতির হয়েছিলেন তামিম। এবার মারতে মারতে উইকেটে নিজেকে সেট করে ফেলতে থাকলেন তামিম। তাতে রাহাত আলী, সাঈদ আজমল, ওয়াহাব রিয়াজদের ওপর দিয়ে ঝড়ই বয়ে গেলো। প্রত্যেকের একেক ওভারে তিনটি করে বাউন্ডারি মেরে তামিম তার সামর্থ্যের আরেকটি প্রমাণ রেখেছেন। ৩১ বলে ফিফটি করেছেন তামিম। তাতে তার ১২টি বাউন্ডারি।
তামিম এদিন ছিলেন কোমল কঠোরে মেলানো। ২২ রানে প্রথম উইকেট পড়ে এরপর ১০০ রানের সময় ১৭ রান করে বিদায় মাহমুদ উল্লাহর। প্রথম ৫০ রান তোলার সময় বিধ্বংসী রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন তামিম। মাহমুদ উল্লাহর সাথে জুটিতেও তার শ্রেষ্ঠত্ব। কিন্তু সেঞ্চুরির দিকে এগোতে এগোতে নিজের শট খেলার রাশ টেনে ধরেছেন তামিম। মুশফিক এসে যোগ দিয়েছেন। মনে হয়েছে সেদিন যেখানে এই জুটি শেষ করেছে সেখান থেকেই যেন শুরু হলো। পাকিস্তানী বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়েই এগিয়ে চলেছে তামিম ও মুশফিকের জুটি। ১০৮ বলে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েছেন তামিম। ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিতে ১৬টি বাউন্ডারির মার। মুশফিক ৭০ বলে ৬৫ রানে আউট হলেও ইনিংসের আদ্যন্ত খেলে অপরাজিত তামিম। ১১৬ বলে ১১৬ রান করা তামিমের ইনিংসে ১৭ বাউন্ডারির সাথে একটি ছক্কা।
এর আগে সরফরাজকে নিয়ে পাকিস্তানের ইনিংসটা ভালোভাবেই শুরু করেছিলেন অধিনায়ক আজহার আলী। কিন্তু অষ্টম ওভার পর্যন্ত আয়ু ছিলো এই জুটির। মাশরাফি আনলেন রুবেলকে। ওভারের প্রথম বলেই রুবেল তুলে নিলেন সরফরাজকে (৭)। পরের ওভারে হাফিজকে শুন্য হাতেই ফিরিয়ে দেন আরাফাত সানি।
৩৬ থেকে ৩৭ রানে জোড়া উইকেট হারানোর পর ৫৮ ও ৫৯ রানেও জোড়া উইকেট হারায় পাকিস্তান। গ্যালারি মাতিয়ে তোলার কাজটি সাকিব করেন তার প্রথম ওভারে। আজহার আলির গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি তুলে নেন তিনি। ৩৬ রানে বিদায় নেন আজহার। ফাওয়াদকে পরের ওভারেই শুন্য রানে বোল্ড করেন নাসির। বাংলাদেশের সাফল্যের গল্পটা চলছিলই। ৭৭ রানের সময় রিজওয়ানকে (১৩) এলবিডব্লুর শিকার করেন সাকিব।
৭৭ রানে পাকিস্তানের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাতাসে ভাসছিলো টাইগাররা। কিন্তু ওখানেই গড়ে ওঠে হারিস ও সাদ নাসিমের প্রতিরোধের গল্প। চমৎকার খেলে ধাক্কা সামলেছেন তারা। বাংলাদেশী স্পিনাররা যথেষ্টই ভূগিয়েছে তাদের। ৭৭ রানের জুটি গড়ে ওঠে ষষ্ঠ উইকেটে। হারিসকে ব্যক্তিগত ৪৪ রানে ফিরিয়ে দিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। এর পরের গল্পটা বাংলাদেশের বোলারদের নয়। গল্পটা সাদ নাসিম ও ওয়াহাব রিয়াজের। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সাদ। সময় পেলে সেঞ্চুরি করে ফেলারও ইঙ্গিত ছিলো তার ইনিংসে। সপ্তম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৮৫ রানের জুটি গড়ে ৫০ ওভার শেষ করেছেন তারা। সাদ নাসিম ৭৭ রানে আর ওয়াহাব ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন। সাকিব ২টি উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি, রুবেল, সানি ও নাসির।
উৎস- কালেরকন্ঠ