শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

জয়-পরাজয়ে পাল্টে যেতে পারে রাজনীতির গতিধারা

up_zilla_ec_logo
খবরিকা ডেস্ক : বলা হয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জয়-পরাজয় বড় ফ্যাক্টর নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোটে সরকারের জনসমর্থনের মাত্রা বোঝা যায় না। সত্যিই কী তাই?
ভারতের সাম্প্রতিক রাজ্যসভা নির্বাচনে কী কংগ্রেসের জনপ্রিয়তার মাত্রা বোঝা যায়নি? জাপানে, জার্মানীতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তার মাত্রা পরিমাপ করা হয় না?
বাংলাদেশের ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের পর, বিশেষ করে স্বঘোষিত দূর্গ গাজীপুরে ভরাডুবির পর কী বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা উপলিব্ধ করা যায়নি?
বস্তুত, স্থানীয় নির্বাচন দিয়েই সরকারের জনপ্রিয়তা মাপা হয়। সংসদ নির্বাচনে তার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যদিও সরকারি দল এটা স্বীকার করতে চায় না। তবে একথা ঠিক যে, স্থানীয় নির্বাচনে সরকারি দলের ভরাডুবি ঘটলেও সরকারের পতন হয় না।
তবে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ১১৬টি উপজেলায় যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তাতে জয়-পরাজয় বাংলাদেশের রাজনীতির গতিধারা পাল্টে দিতে পারে।
বিশেষ করে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়-পরাজয় রচনা করতে পারে নতুন রোডম্যাপ। সেই রোডম্যাপ হতে পারে আন্দোলনের, হতে পারে নতুন নির্বাচনের।
দ্বিতীয় দফার এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বড় ধরনের পরাজয়ের শিকার হতে পারে-জনমনে এখন এই ধারণাই বদ্ধমূল। আবার আওয়ামী লীগ জয় ‘ছিনিয়ে’ নিতে পারে, আশে সেই আশঙ্কাও বিএনপিতে।
এর কারণও স্পষ্ট। গোপালগঞ্জেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। শেখ হাসিনার নিজ নির্বাচনী এলাকা পীরগঞ্জেও পরাজয় ঠেকাতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
ফলে জয়ের জন্য এখন আওয়ামী লীগ মরিয়া। সামনের উপজেলা নির্বাচনগুলোতে কোনো ছাড় দিতে চায় না দলটি। ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথমপর্বে উপজেলা নির্বাচনে পরাজয় সরকারের নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে হতাশা তৈরি করে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর আসনে সরকারদলীয় প্রার্থীর পরাজয় তার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে শেষ পর্যন্ত ‘প্রহসন’ মার্কা কোনো নির্বাচন হলে আবার রাজনীতির মাঠ গরম হতে পারে। আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে দৃশ্যত ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি-জামায়াত। এ আন্দোলনে যেমন জনসমর্থন থাকতে পারে তেমনি মিলতে পারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনও।
এখন পর্যন্ত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি বিশ্ব সম্প্রদায়। দ্রুত সব দলের অংশগ্রহণে নুতন নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।
তবে বিএনপি-জামায়াত কাঙ্ক্ষিত জয় পেলে আপাতত মাঠ গরম হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ অবস্থায় বিএনপি-জামায়াতের হাতে আন্দোলনের অস্ত্র তুলে দেয়ার ঝুঁকি আওয়ামী লীগ কতটা নিবে তা দেখার জন্য দেশবাসীকে বৃহস্পতিবার রাত নাগাদ অপেক্ষা করতে হবে।
তবে আওয়ামী লীগ যে আপস করতে চায় না তার লক্ষণ স্পষ্ট। ফলে প্রথম দফা নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন উপজেলায় সরকারবিরোধী পক্ষের প্রার্থীদের মামলা-হামলা করে হয়রানি ও প্রকাশ্য আক্রমণের অভিযোগ আসতে থাকে। সম্প্রতি এ অভিযোগ আরো বেড়েছে। পুরনো মামলায় বিএনপি-জামায়াতের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কয়েকটি উপজেলায় বিরোধী সমর্থক প্রার্থীরা হামলা ও অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি-জামায়াত। এ কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত বিরোধী পক্ষের প্রার্থীরা। ভোটাররাও এ নিয়ে চিন্তিত। যেসব প্রার্থী আওয়ামী লীগের নির্দেশনা না মেনে নির্বাচন করছেন তারাও অভিযোগ করছেন হয়রানির। অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে ভোটারদের মাঝেও।
এদিকে, দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। শেষ দিনে ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। শ্রীনগর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জাকির হোসেনের মহিলা কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ভোলার দুটি উপজেলায় নির্বাচন রয়েছে এ দফায়। চরফ্যাশন উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মোস্তফাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মীরা শনিবার অপহরণ করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
এছাড়া এ উপজেলায় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীরা ভোটার ও অন্য প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয়ভাবে। বোরহানউদ্দিন উপজেলায় দুই পক্ষ সমান অবস্থানে রয়েছে। ইতোমধ্যে দুপক্ষের মধ্যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
যশোরের চারটি উপজেলায় নির্বাচন হবে বৃহস্পতিবার। চৌগাছা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম হাবিবের বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীদের হুমকি-ধমকির অভিযোগ রয়েছে। তার কর্মীরা প্রতিপক্ষ প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা দিয়েছে এবং সোমবার এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
ময়মনসিংহের সদরসহ তিনটি উপজেলায় নির্বাচন হলেও সদরের নির্বাচন নিয়ে ভয়ে আছেন ভোটাররা। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছে। ইতোমধ্যে এক প্রার্থীসহ তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ভালুকায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যানের চাপে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে বলে স্থানীয় বিএনপিই অভিযোগ করেছে। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার অভিযোগও উঠেছে।
১১৬ উপজেলায় ভোটযুদ্ধে ১৩৫২ প্রার্থী
উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে বৃহস্পতিবার ভোটযুদ্ধে লড়বেন ১ হাজার ৩৫২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫০৫ জন, ভাইস-চেয়ারম্যান ৫১১ জন, ভাইস-চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে ৩৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোট গ্রহণের দিন ওই এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এ উপজেলাগুলোতে ভোটার ১ কোটি ৯৬ লাখ ৬২ হাজার ৬৪৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ৮৬৮ জন। মহিলা ভোটার ৯৮ লাখ ২১ হাজার ৭৮০ জন।
৮ হাজার ৬৩টি ভোটকেন্দ্রের ৫১ হাজার ৩১৫টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইসি ভোটকেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর ১৪ জন করে ফোর্স মোতায়েন করবে। একই সঙ্গে প্রতি উপজেলায় থাকছে ১ প্লাটুন করে সেনাবাহিনী। ইতোমধ্যে মাঠে নামানো হয়েছে র্যাপব, বিজিবি ও সেনাবাহনী।
ইসির জনসংযোগ শাখা জানায়, সেনাবাহিনীর প্রতি স্ট্রাইকিং ফোর্সের একজন কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ, পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় কেন্দ্র প্রতি ১৫ জন ফোর্স মোতয়েন করা হবে।
ভোটগ্রহণের দিন অপরাধ রোধ ও শাস্তি প্রদানের জন্য মাঠে থাকবে ৪৬৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট।
ভোট গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই ৮ হাজার ১৩৬ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৫৪ হাজার ৪৩৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং অফিসারসহ ১ লাখ ৮ হাজার ৮৭২ জনকে নিয়োগ করেছে ইসি।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও আদালতের নির্দেশে মহেশখালী উপজেলায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। সেখানে ভোট হবে ১ মার্চ।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, তৃতীয় দফায় ৮৩ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ১৫ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৯২ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ২৩ মার্চ ও পঞ্চম দফায় ৭৫ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে ৩১ মার্চ।