সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

গ্লানিকে পেছনে ফেলে আনন্দ উৎসবে বর্ষবরণ

bhukd_88551
পুরাতন বছরের জরা, ক্লান্তি, গ্লানিকে পেছনে ফেলে চির নতুনের ডাক দিয়ে এলো পহেলা বৈশাখ। রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষের উৎসব। ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী-পেশা, বয়সনির্বিশেষে সব মানুষ শামিল হয়েছেন বৈশাখী উৎসবে। এদিকে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রমনা বটমুলসহ রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা।
সোমবার সকাল ৬টার পর পরই রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজন করে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। এবার তাদের অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা ‘স্বদেশ ও সমপ্রীতি’। সকাল সোয়া ৬টায় রাজ রুপা চৌধুরী শরৎ এর আহির ভৈরব পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বর্ষ বরণের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ভোর থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে সাজ সাজ রব। রাজধানীর পথে পথে নেমেছে উৎসবমুখর নগরবাসীর ঢল। চারুকলা, রমনা, টিএসসি লোকে লোকারণ্য। লাল-সাদা পোশাকের সমাহার। বাজছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে ভেঁপু। বসেছে লোকজ খেলনা, কারুপণ্যের পসরা। চলছে কেনাকাটা।
জেগে ওঠার দীপ্ত শপথে শেষ হয়েছে নববর্ষে চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ‘জাগ্রত, উদ্যত ও নির্ভয়’ হওয়‍ার শপথে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন নানা বয়স ও শ্রেণী-পেশার হাজারো বাঙালি জেগেছে নবপ্রাণে। সোমবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে এ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি রূপসী বাংলা মোড় প্রদক্ষিণ করে ফের ঢাবির ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স অ‍ারেফিন সিদ্দিক।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন। এদিকে বর্ষবরণের সকল প্রস্তুতি গতকালই সম্পন্ন হয়েছে। নববর্ষ উদযাপন নির্বিঘ্‌ন করতে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাজধানীতে যানবাহন চলাচলসহ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য মোগল সম্রাট আকবরের আমলে বৈশাখ থেকে প্রবর্তন হয়েছিল বাংলা সালের। বর্ষ শুরুর সেই দিনটিই এখন বাংলাদেশীদের  প্রাণের উৎসব। বাদশাহ আকবরের নবরত্ন সভার আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজি বাদশাহি খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য ফসলি সালের শুরু করেছিলেন হিজরি চান্দ্রবর্ষকে বাংলা সালের সঙ্গে সমন্বয় করে। তিনি পয়লা বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেছিলেন। আর বৈশাখ নামটি নেয়া হয়েছিল নক্ষত্র ‘বিশাখা’র নাম থেকে।এদিকে নববর্ষ উদযাপনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রমনা বটমুলসহ রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। ইতোমধ্যে রমনা, সোহরাওয়ার্দী পার্ক ও ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরকে কেন্দ্র করে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পোশাকধারী ও গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
বৈশাখী উৎসবকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ রাখতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ ও বাহির পথে আর্চওয়ে, তল্লাশি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সোয়াত টিম, সিসিটিভি মনিটরিং, ফুট পেট্রোল টিম, ওয়াচ টাওয়ার প্রভৃতি সক্রিয় রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নগরবাসীর চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও নগরবাসীর বৈশাখী উৎসবে অংশগ্রহণকে ত্বরান্বিত করতে র‌্যাব সদস্যদের সমন্বয়ে ডগ স্কোয়াড, ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি মনিটরিংসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)।
নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীবাসীর উন্মুক্ত স্থানের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার আহ্বান জানিয়ে সাধারণ নিরাপত্তামূলক কিছু পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। পরামর্শসমূহের মধ্যে রয়েছে- পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন হলে পুলিশ কন্ট্রোল রুম, রমনা পার্কে পুলিশ সাব-কন্ট্রোল রুম, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সাব-কন্ট্রোল রুম অথবা শাহবাগ থানায় যোগাযোগ করা। ধানমন্ডি এলাকার ক্ষেত্রে রবীন্দ্র সরোবর সাব-কন্ট্রোলরুম অথবা ধানমন্ডি থানায় যোগাযোগ করা। প্রবেশ পথে তল্লাশি করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যকে সহায়তা করা। কারও সঙ্গী হারিয়ে গেলে রমনা পার্কে পুলিশ সাব-কন্ট্রোল রুমে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা। শিশু-কিশোর সঙ্গে থাকলে অবশ্যই তাদের পকেটে বাসার ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় মোবাইল নম্বর লিখে রাখা। প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য গ্রহণের পরামর্শ দেয়া।
নিরাপত্তার স্বার্থে হ্যান্ডব্যাগসহ যে কোনো ধরনের ব্যাগ বহন পরিহার করা। অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে পান্তা-ইলিশ কিংবা যে কোনো খাদ্য গ্রহণের পূর্বে খাবারের মান পরীক্ষার পাশাপাশি মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। মোবাইল চোর এবং ছিনতাইকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকা। আপনার আশপাশে অথবা দৃষ্টি সীমায় কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি, সন্দেহজনক বস্তু/দ্রব্যাদি দৃষ্টিগোচর হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে সংবাদ দেয়া।
পয়লা বৈশাখ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও রবীন্দ্র সরোবর এলাকা ত্যাগ করার জন্য নগরবাসীকে জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠান স্থলে সন্দেহজনক কোনো সরঞ্জাম/বস্তু/ব্যাগ/অস্ত্র/ছুরি/কাচি/ পটকা/দাহ্য পদার্থ/ক্ষয়কারক তরল/ব্লেড/নেইলকাটার/দিয়াশলাই/গ্যাসলাইটার সাথে বহন না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
উৎস-যুগান্তর