শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

গুম-অপহরণ প্রতিরোধে বিএনপির ১০ নির্দেশনা

21670_ff

 

গুম-অপহরণ ও গুপ্তহত্যা  প্রতিরোধে দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণকে ১০টি পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীদের হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে দলটি। গতকাল বিকালে চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় এসে সরকার দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের অত্যাচার, নিপীড়নের পাশাপাশি অপহরণ, গুম, খুন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও এখন ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, জনপ্রতিনিধি, আইনজীবীরাও অপহরণ ও হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন। গুম-খুন প্রতিরোধে সারা দেশে সাংগঠনিক ‘রেড এলার্ট’ জারি করেছেন খালেদা জিয়া। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাংগঠনিক সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা কার্যকর করার জন্য আমরা সারা দেশে বিএনপি এবং এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি শাখার নেতাকর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের প্রতি ১০টি পরামর্শ দেন তিনি। পরামর্শগুলো হলো- ১. প্রত্যেকের আওতাধীন এলাকায় লিফলেট, পোস্টার, সভা, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন পন্থায় অপহরণ-গুম-হত্যা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন এবং এসব অপরাধের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ২. চলাফেরায় সতর্ক থাকুন। একা চলাচল এবং নির্জন ও অনিরাপদ স্থানগুলো এড়িয়ে চলুন। ৩. নেতারা কর্মীদের, কর্মীরা নেতাদের এবং সকলে মিলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন। যতদূর সম্ভব পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রেখে চলুন। ৪. প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থানীয় কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর ও যোগাযোগের ঠিকানা সংগ্রহে রাখুন। কোন ঘটনা ঘটলে দ্রুত তাদেরকে জানান। দলের নেতাকর্মীদেরও ফোনে বা এসএমএস-এর মাধ্যমে জানিয়ে দিন। ৫. বিএনপির সদর দপ্তরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। প্রতিটি ঘটনার রিপোর্ট কেন্দ্রকে জানান। ৬. কোথাও অপহরণের উদ্যোগের সংবাদ পেলে যত বেশি সংখ্যক লোক মিলে দ্রুত সেখানে উপস্থিত হোন। মিলিতভাবে প্রতিরোধের চেষ্টা করুন। ৭. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে কাউকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলে তাদের পরিচয় সম্পর্কে এবং আটক ব্যক্তিকে কোথায় নেয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হোন। ৮. আটক ব্যক্তিকে যেখানে নেয়া হচ্ছে সেখানে সদল-বলে গিয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলুন এবং কি অভিযোগে এবং কোন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা জানার চেষ্টা করুন। কবে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে তা-ও জেনে নিন। পারলে সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিন।  ৯. আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিলে তাদেরকে প্রতিরোধ করুন। পুলিশে খবর দিয়ে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিন। ১০. ভিকটিম পরিবারের পাশে দাঁড়ান। তাদের বিবরণ সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরুন। গুম, অপহরণ, খুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-কর্মসূচি স্থানীয় ভিত্তিতে গ্রহণ ও পালন করুন। অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনকে এই প্রতিবাদ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করুন। মির্জা আলমগীর বলেন, সকল শ্রেণী-পেশা-ধর্মের জনসাধারণ আজ আতঙ্কিত। কোথাও কারও কোন নিরাপত্তা নেই। নদী-নালায়, খালে-বিলে, ডোবায়-জঙ্গলে, রাস্তায় লাশ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। ১৯৭৪-৭৫ সালের মতো হত্যা, গুম, আতঙ্কের ভয়াবহ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের কর্তব্য। দেশে যখন এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কের অবস্থা বিরাজ করছে তখন সরকার ‘আইন-শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক’ বলে দাবি করে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আতঙ্ক নিয়ে চরম পরিহাস করে চলছে। দায়িত্বশীল কেউ কেউ বিরোধী দলকে দায়ী করে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকার গদি রক্ষা ও বিরোধীদল দমনে চরম অনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। জনগণের এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় স্বার্থে এমন অপব্যবহারের কারণে তাদের নৈতিক শক্তি, শৃঙ্খলা ও কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে খর্ব হয়েছে। অপহরণ, গুম ও খুনের যে ব্যাপক মহামারী দেখা দিয়েছে তা রোধে এসব বাহিনী সাফল্যের পরিচয় দিতে পারছে না। এই অস্বাভাবিক ও নৈরাজ্যকর অবস্থায় বিএনপি নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারে না। তিনি বলেন, সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে ৭ জনের অপহরণ ৩ দিন পর শীতলক্ষ্যায় তাদের লাশ পাওয়া জনমনে প্রচ- নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। গতকালও নারয়ণগঞ্জে একজন অপহরণের শিকার হয়েছেন। আমরা মানুষের নিরাপত্তার জন্য দলীয় এই সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থার পাশাপাশি সমগ্র দেশবাসীর সহযোগিতা চাই। প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাই। গুম-অপহরণের সঙ্গে বিএনপি জড়িত- প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা আলমগীর বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া পরিহাস ছাড়া কিছুই নয়।  কারণ সবাই জানে কারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আওয়ামী লীগের লোকজনই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দিয়ে তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। জনগণের নিরাপত্তায় খালেদা জিয়া কবে রাস্তায় নামবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, কর্মসূচি নির্ধারণ করে তিনি শিগগিরই রাস্তায় নামবেন। নারায়ণগঞ্জে আইনজীবীদের হরতালে বিএনপি সমর্থন রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির আইনজীবীরা নারায়ণগঞ্জে গিয়ে তাদের সমর্থন দিয়ে এসেছেন। আমরাও তাদের কর্মসূচিতে নৈতিক সমর্থন দিয়েছি।  এর আগে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গণি, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, বেগম সারোয়ারী রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল  নোমান, মেজর (অব.) এম. হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, বরকতউল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন উপস্থিত ছিলেন।